সাজেদুল হক ও কাজী সোহাগ -মাঠে গড়াচ্ছে রাজনীতি। জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ভাষণে আগামী রাজনীতির চালচিত্র অনেকটাই খোলাসা হয়ে গেছে। চলতি বছর ডিসেম্বরেই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই সময় বর্তমান সরকারের পাশাপাশি বহাল থাকবে সংসদও। রাজনীতিতে সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না পর্যবেক্ষকরা। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে তৎপরতা জোরদার করছে আওয়ামী লীগ।
দীর্ঘদিন ধরে মাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা এবার যাচ্ছেন তৃণমূলে। আগামী ২৬শে জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফরে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ১৫টি টিম। এসব টিমের নেতৃত্বে থাকবেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা। স্থানীয় রাজনীতির সংকট মীমাংসার পাশাপাশি নেতারা আগামী নির্বাচনের ব্যাপারেও দেবেন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ যখন সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করছে তখন বিএনপি নেতাদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে আদালতে। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শুধু বকশীবাজারের অস্থায়ী আদালতেই বিচারাধীন রয়েছে ১৬টি মামলা। এরমধ্যে একটি মামলা একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলতি মাসেই এ মামলার কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। সপ্তাহের ৩-৪ দিন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজিরা দিয়ে সময় কাটাতে হচ্ছে। তার সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও হাজির থাকছেন আদালতে। সামনের দিনগুলোতে এ হাজিরার সংখ্যা আরো বাড়বে। পরিস্থিতি না বদলালে কোর্ট-কাছারিতেই চলতি বছর কাটাতে হবে বিএনপি নেত্রীকে। দলটির প্রায় সব নেতারই একই অবস্থা। বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমানের এরইমধ্যে একটি মামলায় হাইকোর্টে সাজা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার কার্যক্রমও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করা তারেক রহমান এসব মামলায় পূর্ণাঙ্গ আইনি লড়াইয়েরও সুযোগ পাচ্ছেন না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধেও রয়েছে প্রায় একশ’ মামলা। তাকেও ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে আদালতপাড়ায়। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক মামলা। এসব মামলায় তাদেরকেও প্রতিনিয়ত হাজিরা দিতে হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্রই একই চিত্র। মামলা আর মামলা। সাবেক এমপিদের কেউ কেউ এরইমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। মামলা নিয়ে বিএনপির ভেতরে এরইমধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকার চায় না বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক। এ কারণে এসব মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। যাতে আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি। তিনি বলেন, সরকার বিরোধী শক্তিকে নির্মূল করতে চায়। এ জন্যই এসব করা হচ্ছে। বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে তাকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য। বর্তমান পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা তো দূরের কথা, আমরা আমাদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কার্যক্রমই পরিচালনা করতে পারছি না। শাসক দল নির্বাচনের নামে তাদের শাসন দীর্ঘায়িত করতে চায়।
দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক সফরে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ২৬শে জানুয়ারি শুরু হবে এ সফর। আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, সংগঠনকে গতিশীল ও নির্বাচনমুখী করার প্রত্যয়ে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সংগঠনের জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা পর্যায়ে তারা সাংগঠনিক সফরে যাবেন। এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। নির্বাচনে দলের বিজয় নিশ্চিত করতে ওই সফরে দুটি কাজকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানিয়েছে দলটির শীর্ষ নেতারা। এ প্রসঙ্গে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু মানবজমিনকে বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রচারণার জন্য দলের প্রেসিডিয়াম আর উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে আলাদাভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যদের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রচারণায় যাওয়া হবে। সেখানে সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কাজের চিত্র তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির তথ্য তুলে ধরা হবে। একই প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ গতকাল মানবজমিনকে বলেন, আগামী নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করা আওয়ামী লীগের অন্যতম টার্গেট। এজন্য দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর শুরু করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সফরে সরকারের বড় বড় অর্জনগুলো তৃণমূল জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি বিএনপি ও তার জোটের শরিকদের নির্মম নির্যাতনের চিত্র উপস্থাপন করা হবে। এছাড়া দলীয় কিছু কোন্দল রয়েছে- যা মেটানো হবে। তিনি জানান, গঠিত টিমসমূহের সমন্বয়কারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সফরের দিনক্ষণ ও কর্মসূচি নির্ধারণ করবেন। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের দেশব্যাপী এই সাংগঠনিক সফরকে সফল করার লক্ষ্যে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএনপি নয় নিজ দলের কোন্দলকেই চ্যালেঞ্জ মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। টানা নয় বছর সরকারে থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেন, দেশব্যাপী একধরনের নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তবে নির্বাচনী এ আবহ দলে কোন্দল বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে দলের বর্তমান সংসদ সদস্যদের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। নির্বাচন সামনে রেখে এমন কোন্দল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সংগঠনিক সফরে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করা হবে বলে জানান শীর্ষ নেতারা। তারা মনে করেন, জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের আরো একবার ক্ষমতায় আসা দরকার। এ কারণে ছোটখাটো বিভেদ দূর করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চলছে।
১৫টি টিমের সদস্যরা যেসব জেলায় যাবেন: দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারীতে যাবেন তোফায়েল আহমেদ, রমেশ চন্দ্র সেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী। একইভাবে রংপুর, রংপুর মহানগর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধায়-আমির হোসেন আমু, বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিএম মোজাম্মেল হক, টিপু মুন্সী, এইচএন আশিকুর রহমান, ড. শাম্মী আহমেদ। চাঁপাই নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, রাজশাহী মহানগর, পাবনা, সিরাজগঞ্জে-মোহাম্মদ নাসিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, প্রফেসর মেরিনা জাহান। জয়পুরহাট, বগুড়া, নওগাঁ, নাটোরে-লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালিদ মাহ্্মুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ডা. রোকেয়া সুলতানা, মো. মমতাজ উদ্দিন। বাগেরহাট, খুলনা, খুলনা মহানগর, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইলে- পীষূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, আব্দুর রহমান, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, এসএম কামাল হোসেন, অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন। মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরে- কাজী জাফর উল্লাহ, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, দেলোয়ার হোসেন, এসএম কামাল হোসেন, পারভীন জামান কল্পনা। বরিশাল, বরিশাল মহানগর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠিতে- আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান, আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ড. শাম্মী আহমেদ, অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম। গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী- সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ডা. দীপুমনি, আব্দুর রহমান, আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, বিএম মোজাম্মেল হক, একেএম এনামুল হক শামীম, হাবিবুর রহমান সিরাজ, দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু। টাঙ্গাইল, শেরপুর, জামালপুরে- ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, ডা. দীপুমনি, মো. মিজবাহউদ্দিন সিরাজ, অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মির্জা আজম, শামসুন নাহার চাঁপা, মারুফা আক্তার পপি। নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ মহানগর, কিশোরগঞ্জে- সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, ডা. দীপুমনি, আহমদ হোসেন, মো. মিজবাহউদ্দিন সিরাজ, অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, অসীম কুমার উকিল, মো. আব্দুছ ছাত্তার, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং। সিলেট, সিলেট মহানগর, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জে- আবুল মাল আবদুল মুহিত, তোফায়েল আহমেদ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আহমদ হোসেন, অ্যাডভোকেট মো. মেজবাউদ্দিন সিরাজ, বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান, অধ্যাপক রফিকুর রহমান, মো. গোলাম কবীর রাব্বানী চিনু। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম মহানগর, কক্সবাজারে- ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, ড. হাছান মাহমুদ, একেএম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (চট্টগ্রাম মহানগর), দীপঙ্কর তালুকদার, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আমিনুল ইসলাম। কুমিল্লা, কুমিল্লা মহানগর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়- শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, ডা. দীপুমনি, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, একেএম এনামুল হক শামীম, সুজিত রায় নন্দী, ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, র.আ.ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী- অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, মাহবুব-উল আলম হানিফ, একেএম এনামুল হক শামীম, ফরিদুন্নাহার লাইলী, হারুনুর রশীদ। ঢাকা, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর, গাজীপুর, গাজীপুর মহানগর, মানিকগঞ্জে- ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, মোজাফফর হোসেন পল্টু, মুকুল বোস, ডা. দীপুমনি, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, নুরুল মজিদ হুমায়ুন, আখতারুজ্জামান, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সিমিন হোসেন রিমি, অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার।