কথা ডেস্ক-ছোট্ট একটা রাজপুত্তুর ছিল, তার নাম ছিল আরিশ। নিজের ছোট্ট রাজ্যে সে ছিল সবার ভালোবাসার অধিপতি। একদিন হুট করেই সেই ছোট্ট আরিশ প্রিয় মানুষগুলোকে ভীষণ কাঁদিয়ে অসীম শুন্যতায় মিলিয়ে গেল। সে আর কখনো বাবার হাত ধরে হাঁটবে না, বাবার মোবাইল টা নিয়ে সেল্ফি তোলার বায়না ধরবেনা, বাবার গলা জড়িয়ে চকলেট খেতে আবদার করবেনা, আর কারো সাথে কখনো দুষ্টুমি করবেনা। আরিশ খুব লক্ষ্মী এক ছেলে, ভালো একটা ছেলে। তবু সে ছোট্ট ছেলেটা সবাইকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে। কি করে তার ছোট্ট নিথর দেহটার ভার কাঁধে নেবে বাবা সুমন মাহমুদ। পৃথিবীর এত্তো কঠিন ভার তিনি বইতে পারেন নি। কেউ পারবেনা।
আরিশ ছিল তার পরানের পরান। সেই সবার প্রিয় ছোট্ট রাজপুত্তুর আরিশের জন্য অজস্র শোকগাথা জমে আছে তার প্রিয় মানুষগুলোর চোখের কোণে। কেউই মেনে নিতে পারছেনা তার এ হঠাৎ এভাবে চলে যাওয়া। আরিশ ছিল সবার আকাশের চাঁদ। এখন সে আকাশ কেবল অন্ধকারে ঢাকা।
আরিশের জন্য সাংবাদিক তানভীর আলাদিন তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ ফেনী গিয়ে ছোট্ট আরিশ মনির নিথর অথচ হাসি মুখে চিরনিদ্রায় থাকা দৃশ্যটা দেখার পর ও নেই মেনে নিতে পারছিলাম না! আমার মধ্যে চরম অস্থিরতা কাজ করতে লাগলো… আমি বুঝতে পারলাম, এখানে আমার থাকা যাবে না… তাই অনেকটা পালিয়ে যাওয়ার মত করে মধ্যরাতে গ্রামের বাড়ি চলে গেলাম… অনেক চেষ্টা করেও ঘুম আসেনি, আরিশকে নিয়ে হৃদয়ে জমানো স্মৃতিগুলো তাড়া করছিল…’ তানভীর আলাদীন লিখেন, ‘সকালে যখন সুমন ডেকে বললো খাটিয়া ধরতে অনেকটা বাধ্য ছেলের মত ধরলাম, সুমন ধরলো পাশের দিকটা, ৪০ কদম শেষে আরো একটু এগুতেই সুমনের বিড়বিড় করে বলা কিছু কথা যেনো অনুবাদ হিসেবে আমার কানে বাজলো… আর তাহলো পৃথিবীর এত্তো কঠিন ভার আমি আর বইতে পারবো না!!!’ সুমন অন্যদের কাছে ছেড়ে দিলো তার প্রান্তটি… আমার অন্তরজগতে ভূমিকম্প ঘটে গেলো! এমন এক বাবাকে এই সময় কী বলা যায় তা আমার বোধের বাইরে, জানাজার নামাজে দাঁড়াতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম এই পরিস্থিতি থেকে আমাকে পালাতে হবে।
‘ মঙ্গলবার বিকালে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। সুমনের সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। অসহায় করুণ আকুতি ভেসে উঠে তার ফেসবুকের পাতায়, ‘ছোট বেলায় খেলতাম আচ্ছা বলতো what অর্থ কি? অন্যজন বলতো বোকার মত প্রশ্ন করলে উত্তর দিবো – কি। আজ আমার মাসুম ছেলে আরিশ প্রচন্ড ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে আমাকে প্রশ্ন করছে ‘ বাবা আমি এখন কি করতাম? আমি সুমহান দয়ালু আল্লাহ সুবহানাহু তাআলাকে প্রশ্ন করছি ‘ আমি এখন কি করতাম? ইয়া মাবুদ দয়া করো দয়া করে..” সাংবাদিক বখতেয়ার মুন্না তার স্ট্যাটাসে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে লিখেন, ‘ আরিশ ব্যাথা নিয়ে চলে গেলো ঠিকই । কিন্তু তার বাবা মায়ের সন্তান হারানোর ব্যাথা বইতে হবে আমৃত্যু।’ গত মঙ্গলবার বাবা মায়ের কোল ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলো সাংবাদিক মরহুম শহিদ মাহমুদ ফেরদাউস এর নাতি ও ফেনী থিয়েটারের সিনিয়র নাট্যকর্মী সুমন মাহমুদের ছেলে আরিশ। ছয় মাস আগে সাড়ে তিন বছরের আরিশের ব্রেইন টিউমার এর অপারেশন করানো হয়েছিল। মঙ্গলবার খেলতে গিয়ে মাথায় আঘাত পায় সে। চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেবার পথে তার মৃত্যু হয়।
বুধবার সকালে ফেনী ওয়াপদা মাঠে ১ম নামাযে জানাযা ও সদরের বাঁলিগাও ইউনিয়নের সুন্দরপুরে ২য় জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আরিশের এমন মৃত্যুতে শোকাহত ফেনীর সাংস্কৃতিক অঙ্গন। সর্বত্র বিষাদের ঘন ছায়ার প্রলেপ।
তানভীর আলাদীনের কথাই সর্বত্র যেন প্রতিধ্বনিময় হয়ে ওঠে, ‘আরিশ মনি, জান্নাতে ভালো থেকো…বাবা..’ তোমার জন্য সবার নিরন্তর ভালোবাসা