হারুন আল রশিদ ও লুৎফরজামান-জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন—প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার এ বক্তব্যের পর প্রতিক্রিয়া দেখানোর ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সিইসির বক্তব্য নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা থাকলেও নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত না করার পক্ষেই দলটি বেশির ভাগ নেতারা।
প্রকাশ্যে এ নিয়ে দলের নেতারা এখন পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া না দেখালেও এ বক্তব্য নিয়ে সব পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে কথা হচ্ছে। কেউ কেউ বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, আবার কেউ বলছেন, এ ব্যাপারে দলীয় বক্তব্য থাকা উচিত। দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপির নানা সমালোচনার মধ্যে বর্তমান কমিশন কাজ করছে। কমিশনের আমন্ত্রণে বিএনপি সংলাপে এসেছে। সেখানে সিইসির বক্তব্যটি প্রকাশ্যে ছিল না। তাঁর লিখিত বক্তব্য থেকে সাংবাদিকেরা বিষয়টি সামনে এনেছেন। নেতারা বলছেন, বিএনপিকে খুশি করতে গিয়ে সিইসি একটু বেশি বলে ফেলেছেন। এটিকে সব দলের আস্থা অর্জনে সিইসির কৌশল বলেই মনে করছে দলটি।
নির্বাচনী আইন সংস্কার বিষয়ে রোববার বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই আলোচনার সূচনায় সিইসি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে প্রকৃত নতুন ধারার প্রবর্তন করেছে।’ সিইসি আরও বলেন, বিএনপি সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় করেছে, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ দিয়েছে। র্যাব, দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আইন কমিশন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩০ বছর করেছে।
সিইসির এ বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার পর এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সোমবার সংলাপে অংশ নিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বক্তব্যের জন্য সিইসির পদত্যাগ দাবি করেন।
তবে এ বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ বা তাঁদের নেতাদের দিক থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। সোমবার একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা সিইসির বক্তব্যকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁদের মতে, সিইসি তাঁর কর্মকৌশলের অংশ হিসেবে এ কথা বলেছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, সিইসির বক্তব্য আমলে নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, দেশের মানুষ ভালো করেই জানে, জিয়া বহুদলীয় নয়, বহুদলীয় সামরিক গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, হতে পারে সিইসি বিএনপিকে খুশি করার জন্য এসব বলেছেন। এর আগে জাতীয় পার্টিকে খুশি করে বক্তব্য দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ যখন যাবে, তখন তাদেরও খুশি করার জন্য এমন বক্তব্য দিতে পারেন।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই। বঙ্গবন্ধুর বাকশালে সব দলই ছিল, সুতরাং ওটাকে একদলীয় শাসন বলা যাবে না। বাকশালে সফলতা আসেনি, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু একজন সামরিক শাসক হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে ক্ষমতা দখল করে কীভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক হন?