নিজস্ব প্রতিবেদক-বাংলাদেশে ইয়াবার একটি বড় অংশ আসে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে। চাহিদার কারণে দেশেই ভেজাল ইয়াবা তৈরি শুরু হয়েছে। আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েও স্থাপন করা হয়েছে ইয়াবার কারখানা। মঙ্গলবার এমনি এক ভেজাল ইয়াবা তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ ব্যাপারী পাড়ার কমিশনার গলির একটি বাসায় ভাইবোন পরিচয়ে ভাড়া নেওয়া হয়। বোনের দুটি সন্তানও রয়েছে। অন্য ভাড়াটেদের মতো বাসায় খাট, সোফাসহ প্রয়োজনীয় সব আসবাব রয়েছে। বাসায় দুটি শোয়ার ঘর। ব্যতিক্রম শুধু একটি শোয়ার ঘর। সেখানে খাট থাকলেও কেউ থাকেন না। পুরো কক্ষে ইয়াবা তৈরির যন্ত্র ও কাঁচামাল। সেখানেই তৈরি হতো ভেজাল ইয়াবা। ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ভেজাল ইয়াবাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ বলছে, উদ্ধার হওয়া ইয়াবাগুলো ভেজাল। দামেও কম। এক নারীসহ গ্রেপ্তার চার আসামিও বলছেন, দুই নম্বর ইয়াবা বলে তাঁরা পাইকারি বিক্রি করে। মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার সঙ্গে এগুলো মিশিয়ে বাজারে খুচরা বিক্রি করা হয়। অভিযানে গোয়েন্দা পুলিশ ওই বাসা থেকে ইয়াবা তৈরির দুটি যন্ত্র, আড়াই লাখ ইয়াবা এবং ২০ লাখ ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল উদ্ধার করেছে।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার এ এ এম হুমায়ুন কবির তাঁর কার্যালয়ে বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা প্রতিটি ইয়াবা ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু উদ্ধার করা ভেজাল ইয়াবাগুলো বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকায়। দামে কম থাকায় মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার সঙ্গে এগুলো মিশিয়ে পাইকারি বিক্রেতারা বিক্রি করে থাকেন। মেয়াদোত্তীর্ণ প্যারাসিটামল এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, চক পাউডার, ট্যালকম পাউডার, গ্লুকোজ, বিশেষ ধরনের মোম কেমিক্যাল ও ভ্যানিলা পাউডার দিয়ে ভেজাল ইয়াবা তৈরি করা হয়।
বুধবার বিকেলে নগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে ওই বাসা থেকে গ্রেপ্তার শ্যামল সাংবাদিকদের বলেন, ২০১২ সালে নগরের বাকলিয়া থানা-পুলিশের হাতে তিনি ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিন বছর কারাভোগের পর আবার তিনি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। রাখাল নামের এক ব্যক্তির কাছে ইয়াবা তৈরি করা শেখেন। ইয়াবা তৈরি শেখার পর মাদারবাড়ি এলাকায় কারখানায় ইয়াবা তৈরির যন্ত্র বানান। এরপর থেকে সাত থেকে আট মাস পর পর বাসা বদল করে ইয়াবা তৈরি চালিয়ে আসছিলেন। তিনি জানান, দৈনিক চার হাজার ইয়াবা তৈরি করেন। কাঁচামালগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করেন।
শ্যামলের কারখানায় তৈরি ইয়াবা বিক্রেতা আবদুল্লাহ আল আমান সাংবাদিকদের বলেন, বাজারে বিক্রি করার সময় বলা হয় ইয়াবাগুলো দুই নম্বর। জেনেশুনে ক্রেতারা এগুলো কেনেন। বিশেষ করে পাইকাররা। ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে কখনো ক্রেতারা সরাসরি আসেন। আবার কখনো পাঠানো হয়। নিজের তৈরি এই ইয়াবা খেয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান। তারপরও কেন বাইরে বিক্রি করা হয় প্রশ্নের জবাবে বলেন, লাভ বেশি তাই।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ মুহসীন বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ভেজাল ইয়াবা তৈরির সঙ্গে আরও কারা কারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করা হবে।