বিশেষ প্রতিনিধি-ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নিয়ে রীতিমতো ঝড় বইছে আদালত ও রাজনৈতিক অঙ্গনে। ছুটি নেয়ার ১০ দিনের মাথায় দিনে দেশ ছেড়েছেন। এই ১০ দিনে তাকে ঘিরে ছিল নানা আলোচনা, বিতর্ক। পর্দার আড়ালে থাকা এসকে সিনহা এই কয়দিনে গণমাধ্যমের সামনে আসেননি একবারও। শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে প্রথম গণমাধ্যমের সামনে এসে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তার অসুস্থতা নিয়ে চলা বিতর্কের ইতি টেনে স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। দেশ ছাড়ার আগে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে নিজের শঙ্কার কথাও জানান এস কে সিনহা। প্রধান বিচারপতির এই বিবৃতি প্রকাশের ১৮ ঘণ্টার মাথায় সুপ্রিম কোর্টের দেয়া পাল্টা বিবৃতি ঘিরে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। বিরল এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, অর্থপাচারসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট জবাব দিতে না পারায় আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা তার সঙ্গে বিচারকার্যে বসতে চাননি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়। এদিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিবৃতির বিষয়ে গতকাল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এসেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন ডেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সার্বিক বিষয়ে আজ সরকারের অবস্থান জানাবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বক্তব্য প্রমাণ করে বিচার বিভাগের ওপর সরকার হস্তক্ষেপ করছে। এছাড়া এ বিষয়ে বিএনপি আগে থেকে যে অভিযোগ করে আসছে তাও সত্য প্রমাণ হয়েছে। আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সংবাদ সম্মেলন থেকে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে সমিতির অন্য অংশ অভিযোগ করেছে- সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বক্তব্য রাখছেন। এদিকে রাতে আওয়ামী লীগের যৌথ সভায়ও প্রধান বিচারপতি ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খসরু গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, এসকে সিনহার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের তদন্ত করা হবে। সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে সংবাদ সম্মেলন করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ফিরে এসে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দায়িত্বে বসা সুদূরপরাহত।
সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি:
বিদেশ যাওয়ার আগে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে গতকাল বিবৃতি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে আপিল বিভাগের চারজন বিচারপতি উপস্থিত হলে তাদের কাছে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে উঠা ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সংবলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন প্রেসিডেন্ট। এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি নিচে হুবহু দেয়া হলো-
ছুটিভোগরত মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয় গত ১৩ই অক্টোবর বিদেশ গমনের প্রাক্কালে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট হস্তান্তর করেন। উক্ত লিখিত বিবৃতিটি সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টিগোচর হইয়াছে। উক্ত লিখিত বিবৃতি বিভ্রান্তিমূলক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য নিম্নরূপ:
গত ৩০শে সেপ্টেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয় ব্যতীত আপিল বিভাগের অন্য ৫ জন বিচারপতি মহোদয়গণকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। মাননীয় বিচারপতি মো. ইমান আলী মহোদয় দেশের বাহিরে থাকায় উক্ত আমন্ত্রণে তিনি উপস্থিত থাকিতে পারেন নাই। অপর চারজন, অর্থাৎ মাননীয় বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, মাননীয় বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং মাননীয় বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার মহোদয়গণ মহামান্য রাষ্ট্রপতির সহিত সাক্ষাৎ করেন। দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয়ের বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সংবলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। তন্মধ্যে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্থলনসহ আরো সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রহিয়াছে। ইতিমধ্যে মাননীয় বিচারপতি মো. ইমান আলী মহোদয় ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর ১লা অক্টোবর আপিল বিভাগের উল্লিখিত ৫ জন বিচারপতি মহোদয় এক বৈঠকে মিলিত হইয়া উক্ত ১১টি অভিযোগ (সংযুক্তিসহ) বিশদভাবে পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ওই সকল গুরুতর অভিযোগসমূহ মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয়কে অবহিত করা হবে। তিনি যদি ওই সকল অভিযোগের ব্যাপারে কোনো সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তাহা হইলে তাহার সঙ্গে বিচারালয়ে বসে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হইবে না। এই সিদ্ধান্তের পর ওইদিনই বেলা সাড়ে ১১টায় মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয়ের অনুমতি লইয়া উল্লিখিত ৫ জন বিচারপতি মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের ১৯, হেয়ার রোড, রমনা, ঢাকা বাসভবনে তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া অভিযোগসমূহ লইয়া বিশদভাবে আলোচনা করেন। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পরও তাহার নিকট হইতে কোন প্রকার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর না পাইয়া আপিল বিভাগের উল্লিখিত মাননীয় ৫ জন বিচারপতি তাহাকে সুস্পষ্টভাবে জানাইয়া দেন যে ‘এমতাবস্থায়’ উক্ত অভিযোগসমূহের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাহার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসিয়া তাহাদের পক্ষে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হইবে না। এ পর্যায়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, সে ক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করিবেন।
তবে এ ব্যাপারে পরের দিন অর্থাৎ ২রা অক্টোবর তিনি তাহার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাইবেন। অতঃপর ২রা অক্টোবর তিনি উল্লিখিত মাননীয় বিচারপতিগণকে কোনো কিছু অবহিত না করিয়াই মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট ১ (এক) মাসের ছুটির দরখাস্ত প্রদান করিলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন। তৎপ্রেক্ষিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি, মাননীয় বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সেই পদের ও বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে ইতিপূর্বে সুপ্রিম কোর্টের তরফ হইতে কোনো প্রকার বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয় নাই। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে উপরি উক্ত বিবৃতি প্রদান করা হইল।
পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন:
ছুটিতে যাওয়া প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিদেশ যাওয়ার আগে দেয়া বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারা। সভাপতি জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে একাংশ প্রথমে সংবাদ সম্মেলন করে। পরে সমিতির সহসভাপতি মো. অজি উল্লাহ পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন।
দুপুর ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সমিতির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে জয়নুল আবেদীন বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান রাষ্ট্রপতি। কাজেই রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান বিচার বিভাগকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের তিন বিভাগ শাসন, আইন ও বিচার বিভাগ। সংবিধান অনুসারে বিচার বিভাগ হচ্ছে সংবিধানের অভিভাবক। সেই অভিভাবককে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অভিমান দুঃখজনক। প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাচ্ছি, অভিমান ভুলে বিচার বিভাগ রক্ষায় এগিয়ে আসুন। তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে আইনমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের যে পরিবর্তনের কথা বলেছেন, সে সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে গেলেন যে অতীতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কখনো করেননি। আইনজীবী সমিতি মনে করে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার জন্য দৃঢ় থাকবেন। সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রশ্ন এসেছে, প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নন। আইনমন্ত্রী বলেছেন, উনি অসুস্থ, চিঠি পেয়েছেন। ওই চিঠি প্রধান বিচারপতির নয় দাবি করে তিনি বলেন, ওই চিঠি আইন মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা চিঠি। ২রা অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল প্রথম জানিয়েছিলেন যে উনি একটি চিঠি পাঠিয়েছেন; উনি কীভাবে জানলেন? রাষ্ট্র জড়িত আছে বলেই উনি জেনেছেন। এ জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। সংবাদ সম্মেলনে সহ-সভাপতি উম্মে কুলসুম বেগম, সহসম্পাদক শামীমা সুলতানা, সদস্য শেখ তাহসিন আলী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন। এদিকে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে অজি উল্লাহ বলেন, সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। আমরা এর সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, উনি ছুটি নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন স্বেচ্ছায়। ছুটি শেষে আবার ফিরে আসবেন। বিচারকাজ পরিচালনা করবেন। প্রশাসনিক পরিবর্তন বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত নন জানিয়ে অজি উল্লাহ বলেন, ‘৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে যাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেয়া হবে, তিনিই প্রশাসনিক ও বিচারিক সব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সাংবিধানিকভাবে তার এ কাজ পরিচালনায় বাধা নেই।
সিনহার দায়িত্বে বসা সুদূরপরাহত:
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ফিরে এসে স্বপদে বসা সুদূরপরাহত বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যখনই প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, তখন জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি দায়িত্ব পালন করবেন। আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা তো সাংবিধানিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের সব দায়িত্ব পালন করবেন। এস কে সিনহার ফিরে এসে দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওনার আবার ফিরে এসে বসা সুদূরপরাহত। গত শুক্রবার বিদেশে যাওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীণতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে মাননীয় আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো রেওয়াজ নেই। তিনি শুধু রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। তার এ বক্তব্য প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা তো কোনো যুক্তির কথা হলো না।
সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতের এস কে সিনহার নৈতিক স্খলন, অর্থপাচারসহ ১১টি অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, এ অভিযোগগুলো ল-এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিগুলোর কাছে আছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে সমস্ত অভিযোগ আনা হয়েছে, যদি প্রমাণিত না হতো তাহলে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কথা বলা সম্ভব হতো না।
প্রধান বিচারপতি সত্য কথাগুলো বলে দিয়েছেন: ফখরুল
প্রধান বিচারপতি বিদেশ যাওয়ার আগে সত্য কথাগুলো বলে দিয়েছেন- বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিদেশ যাওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিবৃতির মাধ্যমে সত্য কথাগুলো বলে দিয়েছেন। আর এতেই প্রমাণিত হয়েছে, সরকারের অভিপ্রায়টা কী। প্রধান বিচারপতির বিবৃতির মধ্যে একটা জিনিস বেরিয়ে এসেছে। তার এই কথাটা সুনির্দিষ্ট যে সরকারকে ভুল বোঝানো হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী অভিমান করেছেন। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। সরকারে কে ভুল বোঝাচ্ছে? যেদিন তার অফিসে যোগদান করার কথা সেদিন কারা প্রধান বিচারপতিকে অফিস ছেড়ে যেতে বাধ্য করলো? কারা ভুয়া ডকুমেন্ট তৈরি করলো?
গতকাল দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধান বিচারপতি ছুটিতে যাওয়ার পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রী কয়েক ঘণ্টা বসেছেন। বেরিয়ে এসে বলেছেন, বিচার বিভাগ কীভাবে চলবে, কর্মকর্তাদের নিয়োগ-এসব ব্যাপারে আলাপ করেছি। এটা সরাসরি বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ। এটা ডাইরেক্ট ইন্টারভেশন ইন জুডিশিয়ারি, ইট ইজ পেরোগেটিভ অব দ্যা চিফ জাস্টিস।