ফেনী
শনিবার, ২রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৪:৩৭
, ২৯শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

‘এ ক্যামন কথা!’

 

নিজস্ব প্রতিবেদক-‘এ ক্যামন কথা! সমবায়সচিব ম্যাডামকে কালকেও (রোববার) ধরলাম। মামলা হলো। সোমবার আবারও তিনি উল্টো পথে এসে ধরা পড়েছেন।’ পুলিশের সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তা বেশ বিচলিত। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়সচিবের কালো রঙের পাজেরো স্পোর্টস গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৫-৪৮৮৯) আটকে রেখেছেন সার্জেন্টরা। গাড়ির ভেতরে বসা সমবায়সচিব মাফরুহা সুলতানা। অফিস শেষে আবারও উল্টো পথে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি।

শুধু সমবায়সচিবের গাড়িই নয়, সোমবার হেয়ার রোডে উল্টো পথে অনেক সরকারি গাড়ি চলতে দেখা গেছে। এগুলো ঠেকাতে বিকেলে বাংলামোটরে ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দিনের মতো চলে বিশেষ অভিযান। সেই অভিযানস্থলে দ্বিতীয় দিনের মতো সমবায়সচিবের গাড়িটি ধরা পড়লে পুলিশের কর্মকর্তারা করণীয় ঠিক করতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন।

এর আগে গতকাল রোববার পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরে সমবায়সচিবের গাড়িচালক বাবুল মোল্লা হতবাক হয়ে সার্জেন্টকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘স্যার, নতুন কোনো আইন হইছে নাকি?’ বাবুলের এ উদ্ধৃতিটি সোমবারের প্রথম আলোর দিনের উক্তিও হয়েছিল। তবে আজ ধরা পড়ার পর বাবুল মোল্লা আর কোনো কথা বলেননি। দরজা-জানালা আটকে ভেতরে বসে ছিলেন আর পুলিশ চাওয়ার পর কেবল কাগজপত্রগুলো জানালা গলে বাড়িয়ে দিয়েছেন।

সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বাংলামোটরে ওই অভিযানে সচিবের গাড়িসহ দুটি সরকারি গাড়ি ও সাতটি মোটরসাইকেলকে উল্টো পথে চলার অভিযোগে মামলা ও জরিমানা করা হয়। উল্টো পথে চলা আরেকটি সরকারি গাড়ির ব্যবহারকারী ছিলেন একজন পুলিশ সুপার। সেটির চালকের বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশ সেই কর্মকর্তার নাম জানায়নি। আর একটি মোটরসাইকেলের কাগজ না থাকায় সেটি জব্দ করেছে পুলিশ।

বিকেলে মোটরসাইকেলে তিনজন চেপে উল্টো পথে চলে ধরা পড়েন সোহেল আলম নামের এক ব্যক্তি। পুলিশ তাঁকে মামলা দিতে গেলে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তিনি হম্বিতম্বি শুরু করেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ডেকে বলেন, ‘ভাই দেখেন তো ইনি কোথাকার সাংবাদিক। মোটরসাইকেলে তিনজন বসে উল্টো পথে চলে ধরা পড়েছেন। এখন মামলা দিতে গেলে ঝামেলা করছেন।’
সোহেল আলম কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় দেখাননি। তিনি বলেন, তিন টাইম নিউজ বলে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাঁর মোটরসাইকেলের কাগজপত্রের সঙ্গে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একটি পরিচয়পত্র ছিল। পরে পুলিশ উল্টো পথে চলা ও তিনজন বসার কারণে মামলা দেয়।

দুই ঘণ্টার অভিযানের পুরোটা সময় বাংলামোটর ট্রাফিক বক্সে বসে ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ উদ্দীন আহমদ, যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মফিজউদ্দীন আহম্মেদ, উপকমিশনার (দক্ষিণ) রিফাত আহমেদ শামীমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলামোটরের অভিযানস্থলের এক কিলোমিটারের মধ্যে হেয়ার রোডে  রোববার উল্টো পথে চলে পুলিশের জালে ধরা পড়ে ৫৭টি যানবাহন। এর মধ্যে ৪০টির বেশি ছিল সরকারি গাড়ি। শাস্তি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী, সাংসদ, সচিব, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ, পুলিশ, সাংবাদিক, বিচারক ও ব্যবসায়ী। এখানেই রোববার ধরা পড়েছিল সমবায় সচিবের গাড়িটি।

গতকালের অভিযানের পরও পরিস্থিতি যে খুব বেশি পাল্টায়নি, তা সোমবার বিকেল ৪টা থেকে ২০ মিনিট হেয়ার রোডে সুগন্ধার সামনে দাঁড়িয়েই বোঝা গেল। কাকরাইল মসজিদ থেকে রূপসী বাংলা সিগন্যাল পর্যন্ত এ সড়কটিতে ২০ মিনিটে ছয়টি গাড়িসহ বেশ কিছু মোটরসাইকেলকে উল্টো পথে চলতে দেখা গেছে। গাড়িগুলোর মধ্যে পাঁচটিই সরকারি।

এ সময় কয়েকজন সংবাদকর্মী মিলে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস থামানোর পর চালক জাকির হোসেন জানান, গাড়িটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের, ভেতরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন। কেন উল্টো পথে চলছেন—জানতে চাইলে চালক বলেন, অর্থমন্ত্রীর বাড়িতে জরুরি প্রয়োজনে যেতে হবে। তাই উল্টো পথে এসেছেন।

এসব বিষয় নিয়ে আজ বাংলামোটরে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, এখন থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে উল্টো পথে চলা বন্ধে নিয়মিত অভিযান হবে। তিনি জানান, রোববার সারা দিনে উল্টো পথে চলার অভিযোগে ৩০০ যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।

 

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo