ফেনী
বুধবার, ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১২:৩৪
, ৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
শিরোনাম:
আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিমের দুর্নীতির তদন্ত শুরু ফেনীতে দুর্গাপূজায় নাশকতা ঠেকাতে মণ্ডপ পাহারায় থাকবে বিএনপি নেতাকর্মীরা দুই বছর ধরে প্রবাসী হয়েও উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক পদে বহাল! ধর্মপুর এডুকেশনাল এস্টেটের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বন্যা প্রতিকারে ৮ দফা দাবি জানিয়ে ফেনীতে এবি পার্টির মানববন্ধন ফাজিলপুরে জামায়াতের ইউনিট সভাপতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর রোগমুক্তি কামনায় ফেনীতে দোয়া মাহফিল ফেনীতে অসহায়দের মাঝে জামায়াতের অটোরিকশা-নগদ অর্থ বিতরণ  ৫৩ বছরেও তিস্তা নদীর চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারেনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ অর্থ সহায়তা তুলে দিলেন ছাত্রদল নেতা 

কেমন হবে শিশুদের চলচ্চিত্র

জাফর ফিরোজ-আজকের শিশুরা নেতৃত্ব দিবে আগামীর পৃথিবীকে। শিশুরা গাছের চারার মত। যদি আমরা পৃথিবীর জন্য ভালো চারা রোপণ করি তাহলে পৃথিবী হবে সুন্দর বাসযোগ্য। আর যদি আগাছা রোপণ করি তাহলে পৃথিবী হবে বাসহীন অসুন্দর। আজ ক্রমশ-ই বাসহীন হয়ে পড়ছে আমাদের এই পৃথিবী। আগাছায় ভরে যাচ্ছে চারিদিক। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাচ্ছে মানুষের আচরণ।

আমাদেরকে এখনই ভাবতে হবে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার জন্য। শিশুরা দেখে দেখে শিখে। এই শিখাটাই তাদের মনে স্থায়ী ভাবে গেঁথে যায়। যখন বড় হয় তখন এই শিক্ষাটাকেই তারা প্রয়োগ করার চেষ্টা করে। গ্রিক বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটো তাঁর বিখ্যাত বই রিপাবলিকে লিখেছেন, ‘আমাদের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলো, গল্প লেখকদের ব্যাপারে খুব সতর্কতা অবলম্বন করা। তাঁরা যদি ভালো গল্প লেখেন তাহলো আমরা গ্রহণ করবো কিন্তু যদি খারাপ হয় তাহলে পরিহার করবো। তারপর মায়েদের বা অভিভাবকদের কর্তব্য হলো যেসব গল্প ভালো এবং বিজ্ঞদের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য কেবল সেগুলোই শিশুদেরকে শোনানো। মনে রাখতে হবে গল্পের মাধ্যমে শিশুদের যে মন তৈরি হয় তা খেলাধুলা বা শারীরিক অনুশীলনের প্রশিক্ষণের চেয়ে বহুগুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

সাম্প্রতিক সময়ে শিশু মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ছোটদের সিনেমা কার্টুনের ভয়ঙ্কর চরিত্রগুলো শিশুদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী প্রভাব বিস্তার করছে, বিশেষ করে শিশুরা রাগী মেজাজের হচ্ছে, যা চাচ্ছে তা পেতেই হবে এমন অসহিষ্ণু মানসিকতা তারা ধারণ করে। কারণ কার্টুনের চরিত্রগুলো এরকমই। বর্তমান সময়ে বাবা-মার পরিবর্তে সিনেমা বা কার্টুনের চরিত্রগুলো শিশুদের বেশি প্রিয়। শিশুদের ধর্ম হচ্ছে যার সান্নিধ্যে বেশি থাকবে তাকেই অনুকরণ করবে, তাকেই ভালবাসবে। শিশুরা কার্টুনের সান্নিধ্যে বেশি থাকায় কার্টুনের চরিত্রগুলো ওদের আদর্শ।

সিনেমা বা কার্টুনের একটা নিজস্ব জগত আছে, যে জগতের বাসিন্দা আমাদের অবুঝ শিশুরা, এই জগতে যেমনি খারাপ দিক আছে তেমনি ভাল দিক আছে। তাই অভিভাবকদের প্রয়োজন ভাল, শিক্ষণীয়, মজার, আনন্দদায়ক কার্টুন যেন শিশুরা দেখে তা নিশ্চিত করা। আর যারা শিশুদের জন্য নির্মাণ করছেন তাঁদের উচিত শিশুদের জন্য যা কল্যাণকর তা-ই শুধু নির্মাণ করা; অর্থের লাভ থেকে গুরুত্ব দেয়া উচিত শিশুর ভবিষ্যতের দিকে। একটি ভালমানের চরিত্র শিশুর জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়েটট্রিস (এএপি) তাদের গবেষণায় বলেছে, দুই বছরের কম কোন শিশু অবশ্যই টিভি দেখবে না, দুই বছরের বেশি বয়সের শিশুরা দিনে দুই ঘণ্টার বেশি টিভি যেন না দেখে, এটা পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্য প্রযোজ্য। প্রথম দুই বছর শিশুর ব্রেন গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই বয়সে শিশুরা খেলাধুলা, পড়ালেখা, বন্ধুত্ব তৈরি এবং পরিবারের নিবিড় সময়ের সান্নিধ্যে থাকবে।

গবেষকরা আরও বলছেন, নিজেকে আধুনিক মানুষ হিসেবে টিভি একটি ভাল ধারণা, যদি শিশু উপযোগী শিক্ষণীয় অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। উক্ত গবেষণায় তিনটি বিষয় নির্ধারিত হয়েছে, (১) একজন শিশু যদি একনাগারে চার ঘণ্টা টিভির সামনে বসে থাকে, তবে সে অতিরিক্ত ওজনদার হবে, যা শিশুর জন্য মঙ্গলজনক নয়। (২) কার্টুন সিনেমায় ভায়োলেন্স দেখে যে শিশু বড় হয়, তার আচরণ আক্রমণাত্ম হয়। (৩) টিভিতে ঝুঁকিপূর্ণ চরিত্র যখন প্রচারিত হয়, যেমন ধূমপান ও মদ, কিছু সময় লিঙ্গ চরিত্রগুলো শিশুদের মাঝে অস্বাভাবিক ধারণা জন্ম দেয়।

বাংলাদেশে এই মুহুর্তে দেড় থেকে দুই ডজন চ্যানেল আছে। কিন্তু সেই চ্যানেলগুলোতে শিশুদের জন্য কোন অনুষ্ঠান নেই বললেই চলে। যতদূর মনে পড়ে বিটিভিতে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সিসিমপুর, মীনা নামে দুইটা অনুষ্ঠান চালু আছে, দেশ টিভিও মাঝে মাঝে মীনা কার্টুন দেখায় এবং অন্য দুয়েকটা চ্যানেল টম এন্ড জেরি ডাবিং করে দেখায়। শিশুদের অনুষ্ঠান বলতে সব মিলিয়ে এই গোটা তিনেক। বাকী সব ধারাবাহিক নাটক, খবর, টক-শো, রান্নার অনুষ্ঠান, রূপচর্চা বিষয়ক অনুষ্ঠান আর প্রতিভা অন্বেষণের জোয়ারে ভরা; যা শিশুদের রঙ্গিন জগতে মূল্যহীন। কাঠখোট্টা কথাবার্তা, হাঁড়ি-কড়াইয়ের ঘটমটি কিংবা প্রেম-রোমান্স-ট্রাজেডি এসব জটিল বিষয় শিশুদের আকর্ষণ করে না। শিশুদের চিন্তা সরলরৈখিক, ভাবনার জগত পূর্ণ বিচিত্র রঙ্গে, ওদের বিচরণ কল্পনা আর রূপকথার রাজ্যে।ওরা স্থির কিছু দেখতে চায়না। শিশুরা চায় বস্তুর দ্রুত নড়াচড়া এবং বর্ণিল উপস্থাপন। একটি শিশু যখনি পারিবারিক অঙ্গনে পা রাখে তখনি তারা প্রথমেই বাবা-মায়ের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে আর বাবা-মা চায় তাদের সন্তানদের যথাযথ বিকাশ ও উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা করতে। প্রাচ্য সমাজে বিশেষ করে মুসলিম সমাজে পরিবারের গুরুত্ব এমন যে তারা সন্তানদেরকে গড়ে তোলার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। এজন্যে বাবা-মার উচিত যথাযথ বিনোদন ও প্রশিক্ষণ সরঞ্জামাদির মাধ্যমে এবং সঠিকভাবে পরিচালনার মাধ্যমে সন্তানদেরকে গড়ে তোলা। খেলনা সামগ্রী, বই-পুস্তক, ফিল্ম, টিভি অনুষ্ঠানমালা ইত্যাদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রশিক্ষণের জন্যে বা তাদেরকে গড়ে তোলার জন্যে বর্তমান পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য উপাদান।

বিশেষজ্ঞদের মতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ইত্যাদির জন্যে পরিবারগুলো এইসব প্রশিক্ষণ সরঞ্জামাদির কাছে ব্যাপকভাবে ঋণী। আমরা ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করে থাকবো যে, অধিকাংশ বাবা-মা-ই তাদের সন্তানদেরকে টেলিভিশনের কার্টুন অর্থাৎ এনিমেশন চ্যানেল দেখার জন্যে টিভি সেটের সামনে বসিয়ে দেয়। আবার কেউ কেউ বাচ্চাদেরকে সিনেমা হলেও নিয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে কি, এ ধরনের ফিল্ম বা অনুষ্ঠান বাচ্চাদেরকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের অন্তরাত্মার ওপর ভীষণ প্রভাবও ফেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুরা কেবলমাত্র দর্শকের ভূমিকা পালন করে, ভালো কিংবা মন্দ বোঝার শক্তি তাদের হয় না। সেজন্যে তারা যা-ই দেখে তাকেই তারা সত্য এবং বাস্তব হিসেবে ধরে নেয়। এভাবে যেসব উপায়-উপকরণ বা গণমাধ্যম উচ্চতর ক্ষমতাধর প্রযুক্তির অধিকারী সেগুলো শিশু-কিশোরদের ওপর অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। শিশুদের ওপর এই অতিরিক্ত প্রভাবের কারণেই ফিল্মগুলো ধীরে ধীরে তাদের সাংস্কৃতিক এবং প্রশিক্ষণের ভিত্তিগুলোকে বদলে দেয়।

দুঃখজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করবো যে, বর্তমানে সহিংসতা, ভয়-ভীতি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, ঝগড়া-বিবাদ এমনকি বড়োদের পার্থিব বিষয়গুলো যেমন যৌনতার মতো বিষয়গুলো পর্যন্ত বিভিন্ন রূপে ও কৌশলে এনিমেশনগুলোতে চালু হয়ে গেছে। এমনিতেই শিশুদের মাঝে বিশ্লেষণী শক্তি, সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি কিংবা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাববার শক্তির উপস্থিতি থাকে কম, ফলে এই এনিমেশনগুলো তাদের ভবিষ্যৎকে একেবারেই পাল্টে দিতে পারে এমনকি বলা যায় ধ্বংস করে দিতে পারে। ‘নিনজার কচ্ছপগুলো’ একটি কার্টুন বা এনিমেশন ফিল্ম। এই ফিল্মটিতে কচ্ছপগুলোকে এমনভাবে ফুটিয়ে বা চিত্রিত করে তোলা হয়েছে যেন দর্শকরা মোটেও ভীত বা সহিংস না হয়ে পড়ে। এই এনিমেশনের মূল চরিত্র বা নায়ক যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে সেগুলো শুধুমাত্র রোবটদের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে এনিমেশনগুলো শিশুদের জন্যে কোনোরকম আশঙ্কার কারণ ছিল না। কিন্তু আজকাল এনিমেশনের ভুবন আগেকার অবস্থায় নেই। আগেকার তুলনায় এখনকার এনিমেশনগুলোর চরিত্র আমূল আলাদা। এখনকার দিনে শিশু-কিশোরদের পূত পবিত্রতাকে ধ্বংস করবে না-এরকম এনিমেশন ফিল্ম খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন ব্যাপার। হ্যারি পটার কিংবা নারনিয়া-এই দুটি এনিমেশন ফিল্মের কথাই ধরা যাক। এগুলো শিশু কিশোরদের জগতকে অলীক কল্পকাহিনী, যাদুগিরীর মতো কুসংস্কারের সাথে মিশিয়ে দেয়।

টয় স্টোরি থ্রি ফিল্মটির কথাই ধরা যাক। এই এনিমেশন ফিল্মটির প্রথম পর্ব নির্মিত হয়েছে ১৯৯৫ সালে। এর পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই বাকি পর্বগুলোও তৈরি হয়ে সিনেমার পর্দায় প্রদর্শিত হয়। ফিল্মটির গল্প হলো অ্যান্ডি নামের একটি ছেলে তার খেলনা সামগ্রিগুলো নিয়ে খেলা করে। ছবিটির তৃতীয় অংশে বারবি নামের একটি পুতুলের সাথে কান নামের আরেকটি পুতুলের পরিচয় ঘটে এবং তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। কান এমন একটি ছেলে যে কিনা বেশ চঞ্চল এবং অস্থির প্রকৃতির। তাকে এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ফিল্মে যেন সে শিশু নয় বরং প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মতোই তার সকল কাজকর্ম এবং আচার আচরণ।

ফিল্মটির পরিচালক কান সম্পর্কে নিজেই বলেছেনঃ ‘গল্পের হাস্যরসাত্মক গুণটিকে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়ার জন্যে কানকে এই ফিল্মে নিয়ে এসেছি।’ অবশ্য ফিল্মটি আরেকটি বিষয়কে ফুটিয়ে তুলেছে। কানের চরিত্রটি কমেডি বা হাস্যরসের চেয়ে বরং গল্পকে রোমান্টিক করে তোলার ক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রখেছে এবং সেইসাথে বড়দেরকেও এই ফিল্মের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। পুতুলগুলোর মাঝে এই রোমান্টিক ঘটনার অবতারণা করার কারণে ফিল্মের গল্পটি বিভিন্ন পর্যায়ে আর শিশুসুলভ থাকেনি। এ কারণেই বিশেষজ্ঞমহল উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন এবং তাঁরা মনে করেন যে, শিশুদের জন্যে এ ধরনের গল্প পরিবেশন অসংলগ্ন অর্থাৎ তাদের মাঝে পরিপক্কতা আসার আগেই এ ধরনের গল্প তাদের জন্যে অসমীচীন। আর এ ধরনের অসমীচীন গল্প শিশুদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

‘শার্ক ফরএভার’ আরেকটি আলোচিত এনিমেশন ফিল্ম। ২০১০ সালে এই এনিমেশনটি সিনেমার পর্দায় প্রদর্শিত হয়েছে। শার্ক নামের চার পর্বের ফিল্ম সিরিজের সর্বশেষ পর্ব এটি। শার্ক হচ্ছে সবুজ রঙের বিশালদেহী এক দৈত্য। বিয়ের পরে শার্ক তিন সন্তানের পিতা হয় এবং তারপর মানসিক সংকটে ভুগতে দেখা যায়। সঙ্গত কারণেই তাকে তখন খানিকটা আনমনা বা ব্যথিত দেখায়। সে তখন মনে মনে ভাবতে থাকে আগের মতো দৈত্যরূপটি যদি সে পুনরায় ধারণ করতে পারতো তাহলে সবাইকে সে ভয় দেখিয়ে সন্ত্রস্ত করে তুলতে পারতো। মজার ব্যাপার হলো, তার সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়। তবে পরিবর্তে তার জীবনের বহু ইতিবাচক দিক তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। শার্ক ফরএভার ফিল্মটি ব্যাপক ব্যবসা সফল ছবি ছিল। তারপরও ছবিটি দর্শকদের ইতিবাচক দৃষ্টি বা রায় লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বয়স্কদের বিভিন্ন পার্থিব সমস্যা এবং স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ভালো-মন্দ দিক ইত্যাদি শিশুদের বোধগম্য করে উপস্থাপিত হয়নি এই ফিল্মিটিতে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই ফিল্মটির দর্শকদের ওপর পরিচালিত মতামত জরিপে দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক দর্শকরা এই ফিল্মটি দেখার পর মনে করেছে যে, পারিবারিক জীবনের বিচিত্র সমস্যা শিশুদের জন্যে যেরকম বেপরোয়াভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা দর্শকরা ঠিকমতো পছন্দ করেনি। তাছাড়া শার্ক নামের চরিত্রটির মন-মানসিকতার কালো বা মন্দ দিকগুলোকে বেশি বেশি রঙ দেওয়া হয়েছে। মারদাঙ্গাময় ছবি, ভীতিকর গল্পময় ছবি কিংবা সহিংসতাপূর্ণ এনিমেশন ফিল্ম ইত্যাদি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জণ্যে হুমকি স্বরূপ। সেজন্যে এ ধরনের ফিল্ম বাচ্চাদের জন্যে মোটেও উপেযাগী নয়। যদি এইসব বিষয় এনিমেশনের মধ্যেও থাকে তাহলেও তা শিশুদের মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই ধরনের এনিমেশনগুলোর মধ্যে বিখ্যাত কার্টুন সিরিজ টম এ্যান্ড জেরিও রয়েছে, কেননা শত্রু দমনের ক্ষেত্রে এই সিরিজে ব্যাপক সহিংস চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই এনিমেশনটি সারা বিশ্বের শিশুরাই কমবেশি দেখেছে বা দেখে থাকে। শিশু বিশেষজ্ঞ ও শিশু প্রতিপালন এবং প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞগণ টম এন্ড জেরি এনিমেশনটিকে বাচ্চাদের জন্যে ক্ষতিকর বলে ঘোষণা করেছেন। বিড়াল এবং ইঁদুরের মধ্যকার সহিংস দ্বন্দ্ব সংঘাত এমন যে পারস্পরিক ধূর্তামি এবং প্রতারণাকে সেখানে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি যে বেশি ছল-চাতুরিতে পারদর্শী তাকেই বিজয়ী দেখানো হয়েছে।

এজন্যেই এনিমেশনটি বাচ্চাদের জন্যে ক্ষতিকর কেননা এই নেতিবাচকতা শিশুর মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এনিমেশনের ভুবনটাই কল্পকাহিনী আর আজব রূপকথায় ঠাঁসা। আর কল্পনার জগতে অসম্ভব বলে কিছু নেই, যা ইচ্ছা তাই তৈরি করা সম্ভব। তাই আমাদের উচিত এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এমন কিছু নির্মাণ করা যা দেখে এই শিশু বড় হয়ে ভাববে ‘ সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo