ঢাকা অফিস-সম্প্রতি কক্সবাজার যাওয়ার পথে ফেনীতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে যে হামলা হয় তার নেপথ্যে ছিল ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। তাছাড়া ফেনীতে যে অপকর্ম হচ্ছে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন দুইজন লোক। একজন নিজাম হাজারী, অন্যজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। তাদের বিরুদ্ধে কেউ অবস্থান নিলেই তার বিরুদ্ধে দেয়া হয় মিথ্যা মামলা। এতে কাজ না হলে ওই ব্যক্তিকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। স্থানীয় প্রশাসনকে তারা ব্যবহার করছেন লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য আজহারুল হক আরজু।
লিখিত বক্তব্যে আরজু বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। সেদিন বেছে বেছে ডিবিসি, চ্যানেল আই, একাত্তর, বৈশাখী টেলিভিশন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুরো ঘটনার নেপথ্য নায়ক নিজাম হাজারী।
সংবাদ সম্মেলনে ফেনী জেলা যুবলীগের ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আজহারুল হক আরজু ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর বিরুদ্ধে খুন, দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ আনেন।
তিনি জানান, নিজাম হাজারীর ব্যক্তিগত আক্রোশ ও রোষানলের কারণে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী এখন এলাকাছাড়া। ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নে টানা ১৯ বছর দায়িত্বপালনকারী চেয়ারম্যান আজহারুল হক আরজু বলেন, নিজাম হাজারী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে ৩৭ ভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) থেকে ১৫ ভাগ, সড়ক ও জনপথ (সওজ) থেকে ২০ ভাগ, গণপূর্ত থেকে ১৫ ভাগ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রকল্প থেকে ২০ ভাগ, পৌরসভার কাজ থেকে ২০ ভাগ, জেলা পরিষদ থেকে ১৫ ভাগ ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে ১০ ভাগ হারে কমিশন নেন নিজাম উদ্দিন হাজারী।
এছাড়া তার নামে বিভিন্ন টার্মিনাল থেকে টোল আদায় করা হয়। টোল আদায়কারীরা হলেন- সালেহ বাবুল, শুশেন শীল, দিদার হোসেন, ফোরকান চৌধুরী, নূরুল আফছার আপন, স্বপন মিয়াজী প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ নেতা আজহারুল হক আরজু অভিযোগ করে বলেন, নিজাম উদ্দিন হাজারীর বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা ছিল। ওই মামলায় তিনি নির্দিষ্ট মেয়াদের কম সময় সাজা খাটেন। এ ঘটনায় একটি রিট করেন জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন। সাখাওয়াতের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ সম্মেলনে সাখাওয়াতের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আরজু। এ কারণে গত ১৪ নভেম্বর গভীর রাতে ফেনী সদর থানার ওসির নেতৃত্বে আরজুর গ্রামের বাড়িতে ও ছোট ভাইয়ের ডেইরি ফার্মে হামলা চালানো হয়। ডেইরি ফার্মের সিসি ক্যামেরা থেকে মেশিন খুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের ভাংচুর থেকে রক্ষা পায়নি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও। নিজাম উদ্দিন হাজারীর পক্ষে না থাকায় এর আগে আরজুর বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনসহ বিভিন্ন ধারায় নয়টি মামলা করা হয় বলে আভিযোগ করা হয়।
নিজাম হাজারীর অপকর্মের চিত্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম ও মহিবুল হাসান চৌধুরীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান আরজু।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি গুলি করে, গলা কেটে ও পুড়িয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ফুলগাজী উপজেলার তৎকালীন চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক একরামকে। এর ২৪ ঘণ্টা আগে একরাম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম এবং নিজাম হাজারীর অপকর্ম তুলে ধরেন। এর জের ধরেই তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। নাসিম-নিজামের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় পর্যায়ক্রমে যুবলীগ নেতা জয়নাল, মিন্টু, তাঁতি লীগ নেতা রেজাউল করিম এবং ছাত্রলীগ নেতা রিপনসহ অনেককে হত্যা করা হয় বলে আরজু উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, একরাম হত্যায় সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হলে অবশ্যই নিজাম হাজারী ও নাসিমের নাম আসবে। তাই ভবিষ্যতে যাতে এ মামলার সম্পূরক চার্জশিট দেয়া না যায় সে বিষয়ে উঠেপড়ে লেগেছেন এই দুই নেতা। অন্যদিকে একরাম হত্যার বিষয়টি মেনে নিতে না পারায় আওয়ামী লীগ নেতা আরজুর ওপর অত্যাচার নির্যাতন নেমে এসেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এ সময় ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, জেলা তাঁতি লীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান, জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হুদা এবং জেলা তাঁতি লীগের উপদষ্টো কাজী ফারুকসহ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার বিকালে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আজহারুল হক আরজু দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। তার মতো একজন নেতা আমাকে নিয়ে কী বলল আর না বলল তা নিয়ে মন্তব্য করার মতো রুচি এবং সময় আমার নেই’।
অন্যদিকে নিজাম হাজারীর বক্তব্য জানতে তার দুটি মোবাইল নম্বরে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নম্বর দুটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সুত্র-যুগান্তর