দেশের এই সঙ্কট মুহূর্তেও গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্নভাবে বাধা, হয়রানি ও নির্যাতন চলছে উল্লেখ করে সরকারের উদ্দেশে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ বা হয়রানি নয় বরং দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করুন।গণমাধ্যম যাতে অবাধ ও মুক্ত ভূমিকা পালন করতে পারে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। ৩ মে জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২০ উপলক্ষে শনিবার এক বিবৃতিতে একথা বলেছে টিআইবি।
বিবৃতিতে টিআইবি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নাগরিকদের তথ্যপ্রাপ্তি ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতে গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষার পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলো যেন সচল থাকতে পারে সেই ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছে।
টিআইবি বলেছে, কোভিড-১৯ সঙ্কট মোকাবেলায় ত্রাণ বিতরণে জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের একাংশের দুর্নীতির সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশের সংশ্লিষ্টতার সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্নভাবে বাধা, হয়রানি ও নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ অপপ্রয়োগের মাধ্যমে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে নিবর্তনমূলক নজরদারি প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা, হুমকি-ধামকির মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত রাখা ও সাংবাদিকদের সেল্ফসেন্সরশিপে বাধ্য করার প্রয়াস চলছে। চলমান দুর্যোগের কার্যকর মোকাবেলার স্বার্থে এ আত্মঘাতী চর্চাগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে বলে টিআইবি মনে করে।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কোভিড-১৯ মহামারীকে দুর্নীতির মহোৎসবে পরিণত করার পাঁয়তারায় যারা লিপ্ত তাদের অশুভ তৎপরতা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম শক্তি হতে পারে মুক্ত গণমাধ্যম। শুধু স্থানীয় পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ্র করে অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ নয়, এই দুর্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ক্রয় ও বিতরণ কার্যক্রমে বিভিন্ন প্রকার যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের নিবৃত্ত করতে তথ্যের অবাধ প্রকাশের বিকল্প নেই। আর এক্ষেত্রে সংবাদকর্মীদের অবারিতভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যর্থতা আত্মঘাতী হবে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ বা হয়রানি নয়, বরং দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গণমাধ্যম নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। করোনা দুর্যোগেও এর ব্যতিক্রম হয়নি বরং অভাবিত এ সঙ্কটে জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করেই নাগরিকদের বস্তুনিষ্ঠ তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতে ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ফ্রন্টলাইনে গণমাধ্যমকর্মীরা সাহসী ভূমিকা পালন করছেন এবং অনেকেই বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২০ এর প্রতিপাদ্য ‘ভয় বা পক্ষপাতিত্ববিহীন সাংবাদিকতা’—এর যথার্থ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। তাদের আমরা অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের এ সাহসী ভূমিকা অব্যাহত রাখতে গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করার উপযোগী পরিবেশ ও এর কর্মীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা এবং নিয়মিত বেতনভাতার পাশাপাশি আপৎকালীন ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।