মাহমুদ ইউসুফ-বাংলা গানের ইতিহাসে এক রোমাঞ্চকর অধ্যায়ের জন্মদাতা আব্বাসউদ্দীন আহমদ। বাংলার শিল্প, সংস্কৃতি, তাহজিব, তমদ্দুনিক ইতিহাসে আব্বাসউদ্দীন এক অপরিহার্য নাম। যাঁর কণ্ঠনিঃসৃত গানে একদা বাংলার মানুষ নেচে উঠেছিল, মুক্তির মূলমন্ত্র খুঁজে পেয়েছিল। জনগণ-রাজনীতিক এক কাতারে দাঁড়িয়েছিল আজাদি হাসিলের লক্ষ্যে; সেই মহান মহানায়ক হলেন আব্বাসউদ্দীন। বাংলার ইতিহাসের রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক বোদ্ধাদের মধ্যে যাঁর প্রতি জনগণ সবচেয়ে বেশ আকর্ষিত হয়েছিলেন তিনি হলেন সবার প্রিয় সঙ্গীত তারকা আব্বাসউদ্দীন আহমদ। তিনি রাজা-বাদশাহ ছিলেন না বটে, কিন্তু নামজাদা রাষ্ট্রনায়কদের চেয়েও ছিলেন খ্যাতিমান।
সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় স্থানিক, কালিক ও মানষিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি ছিলেন সবার ঊর্ধ্বে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বলেছেন, ‘আমি যদি কাজী আর আব্বাসকে নিয়ে বাংলাদেশে বের হই তাহলে সারা বাংলা আমি জয় করতে পারি কদিনের ভেতরেই।’ (আব্বাসউদ্দীন আহমদ : আমার শিল্পী জীবনের কথা, পৃ ৬৯) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, ‘বাংলার গ্রামে গ্রামে আব্বাসউদ্দীন সাহেব জনপ্রিয় ছিলেন। জনসাধারণ তাঁর গান শুনবার জন্য পাগল হয়ে যেত। তাঁর গান ছিল বাংলার জনগণের প্রাণের গান। বাংলার মাটির সাথে তাঁর ছিল নাড়ির সম্বন্ধ।… নদীতে বসে আব্বাসউদ্দীন সাহেবের ভাটিয়ালি গান তাঁর নিজের গলায় না শুনলে জীবনের একটি দিক অসম্পূর্ণ থেকে যেত। তিনি যখন আস্তে আস্তে গান গাইতে ছিলেন তখন মনে হচ্ছিল, নদীর ঢেউগুলিও যেন তাঁর গান শুনছে।
তাঁরই শিষ্য সোহরাব হোসেন ও বেদারউদ্দিন তাঁর নাম কিছুটা রেখেছিলেন। আমি আব্বাসউদ্দীন সাহেবের একজন ভক্ত হয়ে পড়েছিলাম।’ (শেখ মুজিবুর রহমান : অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃ ১১১)
তখন আজকের মতো প্রযুক্তিগত বিপ্লব হয়নি। দূরদর্শন, ইউটিউব, ইন্টারনেট ছিল গরহাজির। গ্রামোফোন রেকর্ড, মঞ্চ বা উন্মুক্ত মাঠই ছিল গান পরিবেশনের একমাত্র মাধ্যম। আব্বাসউদ্দীন প্রায় পাঁচ হাজার সভায় যোগদান করে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। মিটিং-মাহফিলে লাখ লাখ লোক হাজির হতো শুধুই তার গান শোনার জন্য। স্কুল-কলেজের চ্যারিটি শো, দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপনের জন্য বিচিত্রানুষ্ঠান, পূজার জলসা, মিলাদ মাহফিল, পুরস্কার বিতরণী সভা, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক সমাবেশ এরকম হাজারো রকমের জনসমাগমে প্রধান আকর্ষণ থাকত আব্বাসউদ্দীন। বিশেষত গ্রামোফোন রেকর্ডের কল্যাণে দেশের আনাচে কানাচে তাঁর সুনাম পৌঁছে যায়। অজস্র মানুষের কোলাহল, হই চই, কলরব, হট্টগোল, উচ্চবাচ্য, চিৎকার, চেঁচামেচি নিমিষেই উবে যেত তাঁর সুরের জাদুতে। তাঁর গানের সুরলহরীতে নীরব, নির্বাক, মৌনী হয়ে যেত জনতা। কলকোলাহলময় জনতাকে মুহূর্তে নিঝুমদ্বীপের বাসিন্দায় রূপান্তরিত করতে পারতেন তাঁর কণ্ঠসুধা দিয়ে। তাঁর গলার আওয়াজ থেকে দর্শক শ্রোতারা খুঁজে পেয়েছিল জীবনের দিশা, দেশাত্মবোধ, আত্মসচেতনা, বাঁচার অধিকার। তাদের অবচেতন মনে জিজ্ঞাসা, কৌতূহল, প্রেরণা, নির্দেশনা জাগিয়ে দেন আব্বাসউদ্দীন। শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ রাজনৈতিক নেতাদের সাথে অসংখ্য সভায় পাকিস্তানের আজাদি আন্দোলনের সমর্থনে গান গেয়েছেন আব্বাসউদ্দীন। আজাদি উত্তরকালেও হাবিবুল্লাহ বাহারের সভাপতিত্বে অগণিত সভায় গান পরিবেশন করেছেন তিনি। গেয়েছেন সাহিত্য সভায় গান। এভাবে সাধারণ মানুষের অন্তরে প্রবেশ করেছেন আব্বাসউদ্দীন। তাই তো সমকালীন সমাজ তাঁকে লুফে নিয়েছিল অপরিমেয় কলহাস্যে।
আব্বাসউদ্দীন মূলত সঙ্গীতশিল্পী হলেও তিনি এক অসাধারণ সাহিত্যকর্ম রেখে গেছেন। এটি তাঁর আত্মজৈবনিক কাহিনী। ‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’ নামে এই জীবনালেখ্য প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালের এপ্রিল মাসে। বইটিতে যথাক্রমে আমার গানের প্রেরণা, কলেজ জীবন, শিল্পীর আসনে, নবজাগরণে বাংলার মুসলমান, উত্তরকাল, বিদেশ ভ্রমণ, জীবন সায়াহ্নের স্মৃতি, আমার রেকর্ডের গানের তালিকা শীর্ষক মোট আটটি অধ্যায় রয়েছে। বইটি সম্পর্কে সৈয়দ মুজতবা আলী বলেন, ‘আব্বাসউদ্দীন সাহেবের আত্মজীবনী আমাদের নবগঠিত জাতির উত্থান-পর্যায়ের সনদ।’ কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার ১১ ডিসেম্বর ১৯৬০ তারিখে লিখে, ‘আত্মজীবনী পাঠের একটি বিশেষ আনন্দ আছে। বিশেষত সে-জীবন যদি কোনো শিল্পীর হয়। এ যেন সেই প্রদীপ জলবার পেছনের সলতে পাকানোর ইতিহাস। কুড়ি থেকে ফুল হয়ে ওঠার কাহিনী… আলোচ্য গ্রন্থটি সে দিক থেকে অত্যন্তই আকর্ষণীয় সন্দেহ নেই।
মহুয়া সুন্দরী আব্বাসউদ্দীনের রেকর্ড করা একটি নাটক। নাটকটি রচনা করেন আবদুল করিম, অভিনয়ে আব্বাসউদ্দীন আহমদ অ্যান্ড পার্টি। হিজ মাস্টার্স ভয়েস এটি রেকর্ড করে। চট্টগ্রামের অতি পুরনো একটি সত্য ঘটনাকে এই নাটিকায় রূপ দিয়ে রেকর্ড করা হয়েছে। বাংলার বেশির ভাগ স্থানে আজো এ মহুয়ার কাহিনী লোকের মুখে মুখে। ছেলেমেয়ে-মুরব্বিরা রূপকথার মতো আজো এই মহুয়াকে নিয়ে গল্প করে। আজো তাদের অন্তরে মহুয়া করুণ সুরজাল টেনে এনে হাসি-কান্না-ব্যথায় তাদের বুকখানি ভরে দিয়ে যায়। তাঁর রচিত কয়েকটি গান হলো : কোথা গেল হৃদয়ের প্রেম/কোথায় লুকানো আজি আঁখির মদিরা, সকল স্বপ্ন সফল করিয়া/কুটিল যে দিন ফল, কী যে মন চেয়েছিল একদিন/চাহিয়া কী যেন, মন পায়নি। (সেলিনা বাহার জামান : আব্বাসউদ্দীন আহমদ, পৃ ৪৬-৫৩) জীবনের কোনো একসময়ে গল্প ও কবিতাও লিখতেন। কিন্তু সঙ্গীতকেই জীবনের সাধনা হিসেবে গ্রহণ করায় ওদিকে আর অগ্রসর হননি।
আব্বাসউদ্দীন ছিলেন সুরজ্ঞ, সঙ্গীতজ্ঞ, সুরশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, গণশিল্পী, সুরের দুলাল, সুরের জাদুকর, সুরের রাজা, গানের রাজা। সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তাফা কামাল (মরহুমের জ্যেষ্ঠপুত্র) লিখেছেন, ‘তিনি যখন গান গাইতেন- কী বাসায়, কী বাইরে- মনে হতো তাঁর শরীরটাকে মর্তে রেখে তিনি তাঁর কণ্ঠকে তুলে দিয়েছেন মহাকালের হাতে। গানের এই বিমূর্ত প্রকাশ ঘটে থাকে কিছুটা বিধিদত্ত প্রতিভা, কিছুটা সাধনা এবং অনেকটা আরাধনার ভেতর দিয়ে। তাঁর গানে বিশেষ করে ইসলামি গানে মরমি হৃদয়ের যে নিবেদিতচিত্ততা লক্ষ করি তা কোনো আকস্মিক কণ্ঠগত কৌশল নয়। জন্মগত প্রতিভার সাথে ব্যাপক চর্চার মিশ্রণ ঘটিয়ে এসব গানে একটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির প্রয়াস নেই। এসব গান যাঁরা শুনেছেন তাঁদের হৃদয়ের গভীর অন্তর্লোকে স্পন্দন এসেছে। তার কারণ ভক্ত হৃদয়ের আকুতি ও উচ্ছ্বাস এসব গানে ধরা পড়ে আছে।’ (আল মাহমুদ সম্পাদিত আব্বাসউদ্দীন, পৃ ৬৬-৬৭) আব্বাসউদ্দীনের সঙ্গীত সাধনার বৈশিষ্ট্য ও তার কণ্ঠে গীত অজস্র গানের বিষয় ও পরিমাণ সম্পর্কে তথ্যসমৃদ্ধ নির্ভরযোগ্য বই হচ্ছে মোস্তাফা কামাল ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সঙ্কলিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ ‘আব্বাসউদ্দীনের গান।’ ১৯৬১ সালে প্রকাশিত কিতাবটিতে আব্বাসউদ্দীন গীত ২০৪টি গান স্থান পেয়েছে। তবে বাস্তবে গানের সংখ্যা বহু। বইটিতে তাঁর গানের বর্ণবৈভব ও ভাবৈশ্বর্যের ছটা আমরা দেখতে পাই। সঙ্কলিত গানগুলো ইসলামি, ভাওয়াইয়া, লোকসঙ্গীত ও পল্লীগীতি ও কাব্যগীতি- এ চারটি শ্রেণীতে বিন্যস্ত। তন্মধ্যে ইসলামি গান ৮৪টি, ভাওয়াইয়া ৩১টি, লোকগান ৫৮টি ও কাব্যগীতি ৩১টি। (আল মাহমুদ সম্পাদিত আব্বাসউদ্দীন, পৃ ১১৪-১১৫)
তাঁর কণ্ঠে ঝঙ্কৃত ইসলামি গানের মধ্যে রয়েছে ও মন রমজানের ওই রোজার, আল্লাহ আমার প্রভু, মোদের নাবি কমলিওয়ালা, যাবার বেলা সালাম লহ, ত্রিভুবনের প্রিয় মুহম্মদ, মোহাম্মদ মোর নয়নমণি, ইয়া নবী সালাম আলায়কা, ওরে ও দরিয়ার মাাঝি, খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে, হে নামাজি আমার ঘরে, গুন গরিমায় আমাদের নারী, নৈরাশা হয়ো না, ফোরাতের পানিতে নেমে, খাতুনে জিন্নাত ফাতেমা জননী, ওগো মা ফাতেমা ছুটে আয়, ইসলামের ওই সওদা লয়ে এল নবীন সওদাগর, সেই রবিউল আউয়ালেরি, ত্রাণ করো মওলা মদিনার, মহররমের চাঁদ এলো ওই, ভেসে যায় হৃদয় আমার, খয়বর জয়ী আলী হায়দার, বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, ওয়াজ মাহফিল, চলবে কাবার জেয়ারতে, মোহাম্মদের নাম জপেছিলি, আল্লাহতে যার পূর্ণ ইমান, আল্লাহ নামের বীজ বুনেছি, তুমি কোথায়, আমার যখন পথ ফুরাবে, জাগ মুসাফির রাত পোহাল, তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের, তৌহিদেরি বান ডেকেছে, খোদা এই গরিবের শোনো, রোজ হাশরে আল্লা আমার, ঈদ মোবারক, নামাজের এই পাঁচ পিয়ালা, কারো মনে তুমি দিও না আঘাত, দুঃখের দিনের দরদি মোর, দিকে দিকে পুনঃজ্বলিয়া উঠিছে দীন ইসলামি লাল মশাল প্রভৃতি।
হারিয়ে যাওয়া পল্লীর কথা, পল্লীর গাঁথা, পল্লীর সুর, পল্লীর গান, পল্লীর কিংবদন্তি কাহিনীকাব্য গানে গানে তুলে ধরেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। তাঁর গাওয়া লোকগানগুলোর মধ্যে রয়েছে নদীর নাম সই অঞ্জনা, ও কী গাড়িয়াল ভাই, তোরষা নদীর ধারে ধারে, ওই যে ভরা নদীর বাঁকে, আমার গহিন গাঙের নাইয়া, ঠগ্ মিনসে মুখপোড়া, কী মোর জঞ্জাল হইল রে, আগে জানলে তোর ভাঙা, তোরা কে কে যাবি লো জল, আমার হাড় কালা করলাম রে, আমায় এত রাতে কেনে ডাক দিলি, আজি নদী না যাইও যে, পতিধন প্রাণ বাঁচে না, আমায় ভাসাইলি রে, মনই যদি নিবিরে বন্ধু, থাকতে পারঘাটাতে তুমি, প্রেম জানে না রসিক, তুমি মোরে নিদয়ার কালিমা, আগা নাওয়ে ডুবুডুব, সোনা বন্ধুরে কোন দোষেতে, ও কন্যা হস্তে কদমের ফুল, নদীর কূল নাই কিনার নাই, বন্ধু আজো মনে রে পড়ে, যামো যামো যামো কন্যা হে, ও মোর চান্দরে মোর সোনা, আল্লা মেঘ দে পানি দে, নাও ছাড়িয়া দে, দিনার দিন দিন ফুরাইল, হাত ধরিয়া কও যে কথা, আরে ও ভাটিয়াল গাঙের, আগো না দাড়ীটা মরিয়া, নাও ছাড়িয়া দে, বাজান চল যাই চল, পরের অধীন কইর্যাছে আমায়, হারে আমার আকুল প্রাণের আশা, আমার কার জন্য প্রাণ এমন করে, ও সুখের ময়না রে, ও শহরবানু কান্দে, তোমার লাগিয়া রে কালা, ওই না মাধবী বনেতে বন্ধু ছিল, ওই না রূপে নয়ন দিয়ে, গুরুর পদে প্রেমভক্তি, দাওয়ায় করছে মেঘ মেঘালি, ওরে ও পরানের মাঝি, শোন নলিতে ও বিশাখে, কি ওরে বাবার দেশের ওড়ে কুড়ুয়া, মুখ কোনা তোর জিবা ডিবোও, কোন বনে ডাকিলু কোকিল, ছাড়বে মন ভবের খেলা, আমায় দাগের মতো দাগ, সে যেন কী করল রে আমায়, বাওকুমটা বাতাস যেমন, ও ভাই মোর গাঁওয়ালিয়া রে, গাও তোলো গাও তোলো কন্যাহে, কাগাতুয়া বলোং মুই ঠোঁটকরি প্রভৃতি।
পালাগান : রূপধন কন্যা, মরুচমতি কন্যা, হলদি-শানাই, দেশের গান : সকল দেশের চেয়ে পিয়ারা, উড়াও উড়াও আজি, আল্লা আল্লা বলরে ভাই প্রভৃতি। উর্দু গান : য়্যায় চাদে স্যবা গুজরেযো, ইয়া মোহাম্মাদ আপসা মহবুবে, যবসে দেখি হ্যায় কালামউল্লাহ, আল্লাহ ভি হ্যায় খুদ শেকত্যয়ে, মোহাম্মদকে কদমো পর কোরবান প্রভৃতি। স্বদেশী গান : ভারতের দুই নয়ন তারা, নম নম নম বাংলা দেশ মন। আধুনিক গান : বেণুকার বনে কাঁদে বাতাস বিধূর, ফিরে চাও বারেক ফিরে চাও, আর কিগো ফিরে আসিবে না, বরষ বরষ দিবস যামিনী, সাধ জাগে মনে পরজীবনে, বসিয়া নদীকূলে এলোচুলে। এই বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব ১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর তিন মাস আগে ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ সালে তিনি তাঁর জীবনেতিবৃত্তে লিখেন, ‘দুদিন পর আমি যখন এ-ধরার আনন্দ কোলাহল থেকে চিরদিনের মতো চলে যাবো তখন তো দুনিয়াই আমাকে ভুলে যাবে। চিরকাল জেগে আছে এবং থাকবে শুধু আকাশের ওই চন্দ্র-সূর্য অগণিত তারকা সজাগ প্রহরীর মতো। চলমান হয়ে থাকবে আলো-বাতাস, দখিনা হাওয়া, পাখির কলতান, কুলুকুলুনাদিনী স্রোতস্বতী- আমার, এর, তার বাগানের হাসনাহেনা, জুঁই, চামেলী। এরা ফুটবে-ঝরবে-আর ফুটবে। আমি ফুটেছিলাম- দিন কয়েক হেসেছিলাম- এবার ঝরার পথে- ঝরব। কিন্তু আর ফুটব না।’ (আব্বাসউদ্দীন আহমদ : আমার শিল্পী জীবনের কথা, পৃ ১৪০-১৪১)