আন্তর্জাতিক ডেস্ক- ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের প্রায়ই বলে থাকেন, নির্বাচনে লড়াইয়ের ভিত্তি হল পারফরম্যান্স। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়, এর জন্য আরও প্রয়োজন জনগণের সঙ্গে আবেগতাড়িত সংযোগ। গুজরাট নির্বাচনে আবেগকে অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করেছে বিজেপি। প্রথমত, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদবিরোধিতার তকমা লাগিয়েছে এবং দ্বিতীয়ত মোদির মাটিতেই কংগ্রেস তাকে অপমান করছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। গুজরাট নির্বাচনে জয়ের পর বিজেপি দুটি উপাদানকে অগ্রাধিকারে রাখবে, আর তা হল, দলটির সরকার পরিচালনার রেকর্ড এবং হিন্দুত্ববাদী বন্দর। এ ছাড়া বেকারত্ব ও গ্রামীণ দুর্ভোগ নিয়েও কাজ করবে বিজেপি।
গুজরাট নির্বাচনী প্রচারণায় মোদির ভাষণে দেখা গেছে, গরিব ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে কেন্দ্রীয় কল্যাণর্মলক প্রকল্পগুলোকেই পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করেছে বিজেপি। অধিকাংশ সমাবেশে নেতারা বিজেপি সরকারের ‘উজ্জ্বলা এলপিজি’ স্কিমের সুবিধাগুলোকে সামনে তুলে ধরেছেন। তারা দাবি করেন, গ্রাম্য এলাকায় টয়লেট নির্মাণ মানুষের জীবনের পরিবর্তন এনে দিয়েছে। বিভিন্ন বিকাশ প্রকল্প যেমন রাস্তাঘাট, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের মতো কর্মকাণ্ডকে ফলাও করে প্রচার করেছে বিজেপি। কিন্তু প্রতিটি নির্বাচনে বিজেপি তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে সামনে এগিয়েছে। গুজরাটের ভোটাররা বিজেপির নীতি নিয়ে মর্মাহত হলেও তাদের মতাদর্শকে বাতিল করেননি। প্রতিবারই বিজেপি হিন্দু উদ্বেগকে ইন্ধন হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং হিন্দুত্ববাদকে পুঁজি করে এগিয়ে গেছে। নির্বাচনী কৌশল থেকে মুসলিমদের বাদ দিয়েছে দলটি। তারা বিশ্বাস করে, সংখ্যাগরিষ্ঠ্য হিন্দুদের একত্র করতে হলে সংখ্যালঘু মুসলিমদের তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে।
এ ছাড়া গুজরাট রাজ্যের জন্য মোদি একটা ফ্যাক্টর। গুজরাটের এ জয় সন্দেহাতীতভাবে মোদি ও মোদি ব্র্যান্ডের জন্যই সম্ভব হয়েছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ও গত বছরের উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের মতোই গুজরাটের নির্বাচনেও মোদি ছিলেন ব্র্যান্ড। গুজরাট নির্বাচনের প্রচারণায় তার নেতৃত্বে ভোটাররা আরও উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। নোট বাতিল ও জিএসটির (পণ্য ও সেবা কর) মতো বিতর্কিত দুটি অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের পরেও গুজরাটের সন্তানকেই পছন্দ করেছেন ভোটাররা। ১৫ দিনের নির্বাচনী প্রচারণায় ৩৪টি সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন মোদি। বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ ও মোদির সুসংগঠিত প্রচারণাও গুজরাট জয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
কিন্তু গুজরাট ফাড়া কাটলেও ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপিকে জিতলে হলে দু’টি স্পর্শকাতর বিষয়ে আরও জোর দিতে হবে। প্রথমত, কর্মসংস্থান তৈরি। কারণ, ভারতের গ্রাম্য ও আধা-শহুরে এলাকার অধিকাংশ যুবক সরকারি চাকরি চান। কিন্তু সে তুলনায় চাকরি খুব অপ্রতুল। এ ছাড়া তারা স্থায়ী বেসরকারি চাকরির প্রত্যাশাও করেন। কিন্তু সেটিরও অভাব রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জটি ভারতজুড়ে বেশ প্রকট। দেশটিতে শিক্ষার্থীরা চড়া ফি দিয়ে লেখাপড়া করছেন। কিন্তু পরে কিছুই পাচ্ছেন না। বিজেপি বরাবরই যুবকদের ভোটেই জয়ী হয়, আর দলটির প্রতি তাদের অখুশির মাত্রা এখন বাড়ছে।
এ ছাড়া কৃষকদের দাবি পূরণেও ব্যর্থ হচ্ছে মোদি সরকার। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। ২০১৭ সালের গুজরাট নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বিজেপি অবশ্যই জনকল্যাণ ও হিন্দুত্ববাদকে অগ্রাধিকারে রাখবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কৃষকদের অসন্তোষ নিরসনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবে মোদি সরকার। বারক্লেস ইন্ডিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ সিদ্ধার্থ সান্ন্যাল বলেন, ‘২০১৯ সালের নির্বাচনে নতুন অঞ্চল জয় করার চেষ্টা না করে আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি তার অর্থনৈতিক সংস্কার এবং পরিকাঠামো প্রকল্পগুলোর সাফল্যের পাশাপাশি তার সীমাবদ্ধতার দিকে অগ্রসর হবেন। ব্যষ্টিক-অর্থনীতির বিষয়ে নতুন আইন সংস্কার না করে প্রশাসনিক অগ্রগতির দিকে আরও নজর দেবেন। তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে মোদি তার রাজনৈতিক পুঁজি কাজে লাগাবেন। আমরা আশা করছি, এজন্য তিনি সংস্কারমূলক ভাবমূর্তির চেয়ে বিজেপির জাতীয়তাবাদের মন্ত্রকে ব্যবহার করবেন। হিন্দুস্তান টাইমস ও ইকোনমিক টাইমস।