ফেনী
মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৯:৩৪
, ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ডিজিটাল বাংলাদেশ কতদূর…

 

 

মমতাজ মম-কানেক্টিং ডিজিটাল বাংলাদেশ, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্ট এবং আইসিটি শিল্পের উন্নয়ন- এই চার মূলমন্ত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে কাজ করছে সরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের এ কর্মযজ্ঞ কতদূর এগিয়েছে।এ বিষয়ে  লিখেছেন তিনি।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গত ১২ ডিসেম্বর দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হলো জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবস। চতুর্থ শিল্প বিপল্গবের অন্যতম হাতিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অগ্রযাত্রার চিত্র মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নানা আয়োজনে দেশজুড়ে পালিত হয় দিবসটি। দিবসটিতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাস্তবায়িত নানা উদ্যোগ উপস্থাপন করা হয়। সদ্য সমাপ্ত বছরটিতে উন্নত বিশ্বের আদলে জাতীয়ভাবে জরুরি সেবা প্রদানে ইমার্জেন্সি নম্বর ৯৯৯ চালু করা হয়। এছাড়া এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যালায়েন্স অ্যাওয়ার্ড (এপিআইসিটি) ২০১৭ আয়োজন, ৯৪টি আইসিটি পণ্য আমদানিতে শুল্ক্ক প্রত্যাহার, আইসটি পণ্য রফতানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা, হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০২৪ সাল পর্যন্ত ট্যাক্স হলিডে ঘোষণা, দেশের ৬৪ জেলার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে আইসিটি ক্যারিয়ার ক্যাম্প ও চাকরি মেলার আয়োজন করে তরুণ শিক্ষার্থীদের আইসিটিতে ক্যারিয়ার গড়ে তোলায় উদ্বুদ্ধ করার মতো কর্মযজ্ঞে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মতো।

কানেক্টিটিং বাংলাদেশঃ

আইসিটি অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশে ২৮টি হাইটেক/আইটি পার্ক নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পার্কগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হলে ২৮.৭২ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস বরাদ্দ প্রদান করা যাবে এবং এর মাধ্যমে প্রায় ৩ লাখ জনের কর্মসংস্থান হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আইসিটি শিল্পের সুষম উন্নয়ন ও বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর এ পার্কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আধুনিক সুবিধাসহ এতে রয়েছে ১৫ তলা মাল্টিটেন্যান্ট বিল্ডিং (এমটিবি), জিমনেশিয়ামের সুবিধাসহ ১২ তলা ডরমিটরি বিল্ডিং এবং ক্যান্টিন ও অ্যাম্ম্ফিথিয়েটার, অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগ এবং অন্যান্য ইউটিলিটি সেবা। পার্কটিতে ইতিমধ্যে ৪১টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জনতা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে এবং এর ৪র্থ তলায় ১০টি স্টার্ট-আপকে বিনামূল্যে স্পেস বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের ১২টি সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ঘোষণা করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে তিন হাজার ৫৩০ জনের কর্মসংস্থান হয়। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় দেশের প্রথম হাইটেক পার্ক ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি’র প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে এ পর্যন্ত ৯টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সিলেট জেলায় ‘সিলেট ইলেক্ট্রনিক্স সিটি’র অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এ ছাড়া রাজশাহীতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক’, জেলা পর্যায়ে আইটি/হাইটেক পার্ক স্থাপন (১২টি জেলায়), দেশের ৭টি স্থানে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন স্টোর স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলা পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ইনফো-সরকার (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় উপজেলা হতে দুই হাজার ৬০০টি ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবারের সংযোগ ও প্রতিটি ইউনিয়নের একটি করে পিওপি স্থাপন, লিজড লাইনের মাধ্যমে এক হাজারটি পুলিশ অফিস সংযোগসহ পৃথক ভিপিএন স্থাপন করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

দেশের ৫৮টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান, ২২৭টি সরকারি দপ্তর ও ৬৪ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ ১৮ হাজার ৪৩৪টি সরকারি অফিসকে একটি একীভূত নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করা হয়েছে। দেশের সব উপজেলার সঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সরাসরি কথোপকথনের জন্য এবং একসঙ্গে একাধিক উপজেলায় বার্তা/তথ্য প্রেরণ, সভা/অনুষ্ঠান সম্পন্নের উদ্দেশ্যে ৮৭৬টি ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। আইসিটি শিক্ষার বিস্তার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুই হাজার ৯০১টি কম্পিউটার ল্যাব, জেলা পর্যায়ে ৬৫টি ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব এবং ১০০টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। ল্যাবগুলোকে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাবের মাধ্যমে ৯টি ভাষা (ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, জার্মান, জাপানিজ, কোরিয়ান, রাশিয়ান, আরবি ও চায়নিজ) শেখানোর লক্ষ্যে সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। তথ্য ও ডাটা সুরক্ষা ও অধিক হোস্টিং ক্ষমতার একটি টিয়ার ফোর ডাটা সেন্টার নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

দক্ষ মানবসম্পদ :

দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বিকাশের জন্য এলআইসিটি শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩০ হাজার আইটি প্রশিক্ষিত দক্ষ মানুষ তৈরি করা হচ্ছে ইতিমধ্যে প্রায় ১৬ হাজার জনের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইটি কোম্পানি এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে চাকুরি মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২ হাজার ৩১৩ জন চাকরি পেয়েছেন।

লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ৩৯ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা হয়েছে এবং নতুন আরও ৪০ হাজার জনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রফেশনাল আউটসোর্সিং ট্রেনিং প্রাপ্ত ১৩ হাজারের মধ্যে ইতিমধ্যে ১২ হাজার ৭৬৮ জন অনলাইন মার্কেটপেল্গস থেকে ১৫ লাখ ৭২ হাজার ৫৮২ ডলার আয় করেছেন।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতা উন্নয়নে এ পর্যন্ত মোট ৬৩১ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং ৩২০ জনের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইসিটি খাতে মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘সাপোর্ট টু ডেভেলপমেন্ট অব কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন বিষয়ে ৬ হাজার ৪১৮ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এবং ১ হাজার ৮৯১ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। আইসিটি ব্যবসায় নারীর ক্ষমতায়নে ‘শি পাওয়ার’ নামক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪ হাজার নারীকে উদ্যোক্তা ও ৪ হাজার নারীকে আইটি সেবাদাতা হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

ই-গভর্নমেন্ট :

সরকারের ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, ৬৮টি অধিদপ্তর এবং সংস্থাকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল এন্টারপ্রেনার্স আর্কিটেকচারের আওতায় আনার জন্য একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে। সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে ডাটা/তথ্য ইলেক্ট্রনিক উপায়ে আদান-প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ই-গভর্ন্যান্স ইন্টার অপারেবিলিটি ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুত করা হয়েছে। এ জন্য একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ১০টি পৌরসভার জন্য ডিজিটাল মিউনিসিপ্যালিটি সার্ভিসেস সিস্টেম নামে একটি সফটওয়্যারের উন্নয়ন করা হচ্ছে।

ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের ডাটা সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে স্থাপিত ডাটা সেন্টার সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং এতে সরকারি ওয়েবসাইট (২৪৫টি), ই-মেইল হোস্টিং সার্ভিস (৩৯৫৫৪টি ই-মেইল অ্যাকাউন্ট), বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকার তথ্যভাণ্ডার, ই-সেবা-সংক্রান্ত কার্যক্রম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ই-ভ্যাট, ই-ট্যাক্স ইত্যাদি সিস্টেম, অর্থ বিভাগের অনলাইন বেতন ও পেনশন নির্ধারণী সিস্টেম হোস্টিং করা হয়েছে।

আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন :

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার ও এ খাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৯-এর সংশোধন, সংযোজন ও পুনর্বিন্যাস করে ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা-২০১৫’ প্রণয়ন করা হয়। ভেনচার ক্যাপিটাল বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে। ই-সেবা আইনের খসড়া ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে এবং তা পাস প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তির নানা আয়োজন :

আইসিটি পণ্য ও সেবাগুলোর ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি ও বিনিয়োগ উৎসাহিত করা এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন ইভেন্ট ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে প্রতি বছর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড শীর্ষক তথ্যপ্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সম্মেলনসহ নানা আয়োজন থাকে বছরজুড়ে।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!