ফেনী
রবিবার, ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১:৫৪
, ১৭ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম:
খুলে দেওয়া হলো মুহুরী সেচ প্রকল্পের সব ফটক,বন্যার পানি দ্রুত কমছে ফেনী শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ভরাটকৃত খাল পুনরুদ্ধারের দাবীতে মানববন্ধন ফেনীতে ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫ স্থানে ভাঙন ৩০ গ্রাম প্লাবিত,পানিবন্দি অর্ধলক্ষ্য মানুষ মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত,বাধের ৫ স্থানে ভাংগন,বন্যার আশংকা ফেনীতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা,পানিবন্দি হাজারো মানুষ,দুর্ভোগ চরমে স্থানীয় নির্বাচন আগে করতে হবে ফেনীতে অস্ত্রসহ ছাত্রদলের দুই নেতা আটক ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান খালেদা জিয়ার রাতের ভোটের’ দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিলেন নুরুল হুদা

নারীর সর্বনাশে নারী

ইফতেখায়রুল ইসলাম-এক বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রী হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার, বরমশাই আমার বন্ধুস্থানীয় ছিলেন! আচ্ছা বন্ধুমশাইকে একটা নাম দেই( ধরে নেই তিনি এক্স) যাই হোক বিয়ের আগে যতবারই এক্স আমাকে ফোন করলো ততবারই জানালো, তোর কিন্তু ভাবী একটু অপছন্দ হতে পারে!! আমি বললাম কেন?! সে জানালো হবু ভাবীর নাকে একটু সমস্যা আছে! আমি বুঝে উঠতে পারিনি সমস্যা আসলে কতটা! হবু ভাবী নাক ফোঁড়ানোর পর সম্ভবত কাঠি ঢুকিয়েছিলেন নাকে, সেই থেকে ইনফেকশন হয়ে তার নাকের প্রায় ৫০% পঁচে যায় কিংবা তারও কিছু বেশি। ডাক্তার প্লাস্টিক সার্জারি করেও খুব একটা শেইপে আনতে পারেননি হবু ভাবীর নাকে। ও এর মাঝে একটু বলে নেই এক্স মশাই ও হবু ভাবী দুজনই স্নাতকোত্তর সম্পন্ন এবং সম্পর্কে কাজিন। যা বুঝলাম বিয়েটা অনেকটাই পারিবারিক সিদ্ধান্তে হতে যাচ্ছে।এক্স মশাই এর চেয়ে হবু ভাবীর পরিবার সবদিক থেকেই উত্তম ছিল।

যাইহোক মূল প্রসঙ্গে আসি, প্রায় সময় আগে বাংলা চলচ্চিত্রের অসংগতিপূর্ণ দৃশ্যায়ন দেখলে খুব হাসতাম এই ভেবে যে পরিচালক মহোদয়দের মাথায় এরুপ আবোল তাবোল ভাবনা কোথা থেকে আসে! ভুল ভাঙলো সেদিন। কত ঘটনাই না ঘটে যায়, আমরা জানতে পারি না, কত ধরনের অপরাধই না হয় আমরা মুখ খুলি না। সামাজিকতা নামক দণ্ডায়মান বাধার কারণে। বিয়ে পড়ানো শুরু হবে, হঠাৎ দেখলাম ও শুনলাম বরের বড় বোন চিৎকার করছে আর বলছে কী সব দিতে হবে নয় তো বিয়ে আজ হবে না!

তিনি বলছেন, এত সহজে বোকা বানিয়ে চলে গেলে হবে না, আগে ওসব দিন পরে আমার ভাই নিন! অধঃপতনে গলিত এক জড় পদার্থকে বিক্রির চেষ্টা চলছিল। হঠাৎ বরের ও কনের কমন মামা তার ভাগ্নীর অর্থাৎ বরের বোনকে চুপ করতে বলেন এবং সজোরে থাপ্পড় মারেন। নীল বিষে বিষাক্ত সেই বড়বোন তার মামাকে যত জঘন্য গালি দেয়ার দেন এবং এর পাশাপাশি সজোরে লাথি মারেন এবং তারপর অশ্রাব্য যত গালি সেই নারী প্রয়োগ করতে থাকেন এবং মারপিট করতে থাকেন ঠিক বাংলা ফিল্মের ভিলেনের মতো।

কানে তালা লেগে যাওয়ার অবস্থা। পারছিলাম না দাড়াঁতে, বের হচ্ছিলাম আর আবারও ঢুকছিলাম হবু ভাবী নয় আপুটার জন্য। মেয়েটাকে তখন আমার বোন মনে হচ্ছিল। অঝোর ধারায় এক দুঃখিনী বোন কেঁদে চলছিল। নাকে সমস্যার কারণে যে মেয়েটির বিয়ে হচ্ছিলই না, তার বিয়ের আসরে বিয়ে ভাঙার যে তীব্র বেদনা এবং তার যে পরবর্তী প্রভাব তা কি তাকে স্বাভাবিক হতে দেবে কখনো? অনুষ্ঠানস্থল পরিণত হলো রণক্ষেত্রে! এক সরকারি আমলার মেয়ের অসহায়ত্ব দেখছি,উহ ভাবীর বাবা সরকারি আমলা ছিলেন আর আমি সাধারণ ছাত্র তখন। কিচ্ছু করছে না কেউ। উনি কাউকে পুলিশও ডাকতে দিচ্ছেন না। হায়রে বিয়ে নামক সামাজিক প্রথা। কত বেদনাতুর আখ্যান যে রচিত হয়েছে এই প্রথা রক্ষায় তার ইয়ত্তা নেই।

বর মশাইয়ের বন্ধু প্রায় সাতজন (আমি নব্যপরিচিত বন্ধু তাই নিজেকে বাদ দিলাম মহান তালিকা থেকে)। আপনাদের প্রশ্ন জাগছে বরমশাই কী করেছেন? হুম ঠিক ধরেছেন উনি তীব্র প্রতিবাদ করেছেন! তিনিও কাঁদছিলেন অঝোর ধারায় কিন্তু তা শুধু যৌতুক না পাবার বেদনায়! তাইতো যে বোনকে দু চোখে দেখতে পারতেন না তার সঙ্গে দ্রুততার সাথে বেরিয়ে গেলেন বরমঞ্চ থেকে। তারপর তার কান্না, দুঃখবিলাসী কথাবার্তায় আমার গা জ্বলে যাচ্ছিল। আমি ও আমার সাথে আর একটা প্রাণী বলছিলাম সংশোধনের সুযোগটি নিতে কিন্তু পাশের ছয়জন প্রতিক্রিয়াশীলের বক্তব্যের তোড়ে আমার বক্তব্য মিইয়ে যাচ্ছিল। আমাকে বারবার দুঃখিত বলার পর আমি বরমশাইকে বললাম, হবু ভাবীকে আমি বোনের আসনে বসিয়েছিলাম, তাই আমার বোনের অপমান আমারও অপমান। ভাই হয়ে এরকম ভণ্ড, শিক্ষিত নামের রক্তচোষা বর্বর আমার সংস্পর্শে থাকতে পারে না! খবরদার ভণ্ড আমার সাথে কোনো যোগাযোগ নয়… ভণ্ড কথা রেখেছে যোগাযোগ করেনি, পরে শুনলাম খুব ভাল বিয়েও করেছে! কেন করবে না বলুন পৃথিবীতে এই শ্রেণির মানুষের আজ জয়জয়কার যে। আপনি যত শক্তভাবে মুখোশ পরিধান করবেন, ততবেশি আকর্ষণীয় ও গৌরবোজ্জ্বল হয়ে উঠবেন আপনি।

নিজ চোখে দেখলাম এক নারী আরেক নারীর কত বড় সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। প্রভাবক ছিল আরও কিন্তু মুখ্য প্রভাবক সেই সময়ের সেই বিষাক্ত নারী। আচ্ছা চেহারাটা খানিক বিকৃত হয়ে যাওয়া বোনটা কেমন আছে; নিশ্চয়ই ভাল আছে। ভণ্ডের কাছে আসতে যে হয়নি। বিবাহ নামের একটি সামাজিক প্রথা নাই বা পালন করলো বোনটি…

শিক্ষিতা আমার সেই বোন নিশ্চয়ই ভাল আছেন, খোঁজ নেয়া হয়তো যেত, নেইনি। ভাবতে চেয়েছি বোনটি আমার জ্বলে উঠেছে তেজস্বিনীর মতো; থাকুক না এভাবেই কল্পনায় আমার।

বি.দ্র:এই পৃথিবীতে মহিয়সী নারীর পাশাপাশি বিষাক্ত নারীও আছেন, যারা নারী হয়েও নারীর মর্যাদা দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন! একরাশ ঘৃণা তাদের প্রতি)

লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডেমরা জোন)

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!