বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘ এক যুগ ধরে টানা তিনবার সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।সরকার প্রধান হিসাবে রয়েছেন জাতির জনক ও বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গত কারণেই জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির শেষ ভরসাস্থল হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্র পরিচালনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা যা বলেছেন তার সবকিছুই বাস্তবায়ন করেছেন। তাই বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যার প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহস করে এ খোলা চিঠি লেখা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ‘গ্রাম হবে শহর’। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও ব্যক্ত হয়েছিল এ প্রত্যয়। যার ভিত্তিতে উন্নয়নের বিকেন্দ্রিকরণ ও সুষম বন্টনের কারণে প্রতিটি গ্রাম ক্রমান্বয়ে শহরে উন্নীত হবে। বর্তমান সরকারের আমলে সারাদেশে ভৌত অবকাঠামোসহ সর্বক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। কিন্তু অতীতের ন্যায় ঢাকামুখিতা অথবা ঢাকামুখী স্রোত আমরা ঠেকাতে পারিনি। দুই দিনের অধিক যখন কোন ছুটি ঘোষণা হয় তখন দেখা যায় যে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নাড়ির টানে অসংখ্য ঢাকাবাসী গ্রামে বা নিজ এলাকায় আসেন। ছুটি শেষ হলে আবার যে যার কর্মস্থলে কিংবা শিক্ষাঙ্গনে যোগ দিতে ঢাকা ফিরে যান। আমাদের দেশ আটটি বিভাগীয় শহরে বিভক্ত হলেও উন্নয়নের সবকিছু ঢাকাকেন্দ্রিক। নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ লোক বিভিন্ন কারণে বসবাসের জন্য ঢাকায় নতুন করে স্থায়ী হচ্ছে। উদ্বেগজনকভাবে ইতিমধ্যেই ঢাকা নগরী বসবাসের অযোগ্য নগরীর তালিকায় তৃতীয় স্থানের স্বীকৃতি লাভ করেছে (দ্য ইকোনমিস্ট)। যেখানে একটি আদর্শ শহরের মোট আয়তনের কমপক্ষে ২৫% রাস্তা ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য থাকতে হয়, সেখানে আমাদের ঢাকা নগরীতে এ হার মাত্র ১০ ভাগেরও কম। এ ১০ ভাগের উপর আবার হচ্ছে নতুন নতুন মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভার। রাস্তা দিনে দিনে সংকুচিত হচ্ছে, পাশাপাশি যানজটের তীব্রতাও দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা নগরীকে বাসযোগ্য করতে হলে ঢাকামুখী জনস্রোত ঠেকাতে হবে। বর্তমান করোনা ভাইরাসের এ সময়ে বিষয়টি জনমনকে আরও বেশী ভাবিয়ে তুলেছে। গণপরিবহনসহ যাতায়াতের সকল মাধ্যম বন্ধ থাকার পরও মানুষ তাদের জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রাম আবার গ্রাম থেকে ঢাকায় যাতায়াত করছে।
ঢাকামুখী জনস্রোতের বেশ কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে যার মধ্যে তিনটি কারণ আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে এ খোলা চিঠির অবতারনা। ১) মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ২) মানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা ৩) উপযুক্ত কর্মসংস্থান ১) মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ঃ অনেক পরিবারের গ্রামের বাড়িতে সকল রকম সুযোগ সুবিধা থাকার পরেও শুধুমাত্র সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মানসম্মত ও প্রতিযোগতামূলক শিক্ষার উদ্দেশ্যে তারা ঢাকায় থাকছেন। লক্ষ্যণীয় যে, আমাদের দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের অধিকাংশের একাধিক শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার সব কটিই ঢাকায় সীমাবদ্ধ। ২) মানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা ঃ মানসম্মত হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার না থাকার কারণে উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য সাধারন মানুষ ঢাকায় আসে। অনেক প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ঢাকাকেন্দ্রিক একাধিক শাখা রয়েছে। যার কারণে উন্নত চিকিৎসা সেবা শুধুমাত্র ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে। ৩) উপযুক্ত কর্মসংস্থান ঃ সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে সবধরনের প্রাতিষ্ঠানিক/প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা এবং উন্নয়ন কর্মকান্ড বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হলে জেলা শহরগুলোতে উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব হবে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত প্রান্তিক পর্যায়ে যে অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিপ্লব ঘটেছে তার সুযোগ নিয়ে জেলা শহর ভিত্তিক কর্মসংস্থানের জন্য উপযুক্ত মাধ্যমে বিনিয়োগ সম্ভাবনা সৃষ্টি করা জরুরী। সরকারের একটি মাত্র সিদ্ধান্ত আইনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হলে মানসম্মত শিক্ষা জেলা শহরে পৌছে যাবে বলে মনে করি। এতে সরকারের কোন বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না। প্রয়োজনে বিনিয়োগ করবে প্রাইভেট সেক্টর। আইনটি হল যে কোন সিটি কর্পোরেশন অথবা জেলা শহরে যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একের অধিক কোন শাখা রাখা যাবেনা। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ২০-২৫% শহরমুখী জনস্রোত নিজ নিজ জেলা শহর কিংবা গ্রামে নিজ এলাকায় বাস করে মান সম্মত শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা গ্রহণে সক্ষম হবেন। সাধারন বিবেচ্য বিষয় ঃ ক্স একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে ঢাকা শহরে অবস্থান করার জন্য বাসা ভাড়া সহ মাসে কমপক্ষে ৪০,০০০/- টাকার প্রয়োজন। জেলা শহর কিংবা নিজ এলাকায় গ্রামে থাকলে বাসা ভাড়া বাবদ প্রতিটি পরিবারের কমপক্ষে ১৫,০০০-২০,০০০/- টাকা সাশ্রয় হবে। ক্স সরকারী কর্মকর্তাদের জেলা শহরে থাকার জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলেও অনেকেরই জেলা শহরে না থাকার মানসিকতা লক্ষ্যণীয়। ক্স জেলা শহর ভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে দীর্ঘ মেয়াদে জেলার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে ও সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা সহজ হবে, বৃদ্ধি পাবে জীবন যাত্রার মান। পরিশেষে সরকারী সিদ্ধান্ত ও আইনের প্রয়োগ কিংবা জনসচেতনতা যে প্রকারেই হোক ঢাকামুখী জনস্রোত ঠেকাতে সরকারী উদ্যোগ আরও বেগবান করার প্রস্তাব করছি। এ উদ্যোগ দীর্ঘ মেয়াদী হলেও এর বাস্তবায়ন সহজ হবে কারণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সা¤প্রতিক ঘটনা প্রবাহে সাধারন মানুষ শহর বিমুখ হয়ে ইতিমধ্যেই গ্রামের উদ্দেশ্যে ছুটতে শুরু করেছে। জীবন ও অস্তিত্বকে টিকানোর মৌলিক রসদ শহরে নয় গ্রামেই রয়েছে এ উপলব্ধি এখন সকলের। অচিরেই ‘গ্রাম হবে শহর’ এ প্রতিপাদ্যের বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরও চিন্তাশীল হবেন বলে আশা করছি।
নিবেদক মাইন উদ্দিন
পরিচালক স্টার লাইন গ্রুপ
শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, ফেনী।