প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহাআতঙ্কে বাসাবাড়িতেই কাটাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। তবে এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মাঝেও জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে মাঠে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী নিয়েই করোনা যুদ্ধে সামনের সারিতে কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে অকাতরেই প্রাণ বিলিয়ে দিচ্ছেন তারা।
তবে অভিযোগ উঠেছে, নির্ভীক এসব পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হলেও কোয়ারেন্টাইনে গিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। নিম্নমানের আবাসিক হোটেলে থাকা, উন্নত মানের খাবারের অভাবসহ স্বাস্থ্যগত সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার বেশ ঘাটতি অনুভব করছেন আক্রান্ত বা করোনা সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যরা।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে পুলিশের পাঁচজন সদস্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। রোববার পর্যন্ত সারা দেশে ৮৫৪ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগর পুলিশেই (ডিএমপি) আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪৯ জন। এ ছাড়া কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১ হাজার ২৫০ জন, আইসোলেশনে আছেন ৩১৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৫৭ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর রাজারবাগ সংলগ্ন আশপাশের কয়েকটি আবাসিক হোটেল, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন, পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) কয়েকটি ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে করোনা আক্রান্ত বা সন্দেহজনক পুলিশ সদস্যদেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। কিন্তু এসবের মধ্যে আবাসিক হোটেলগুলোর ছোট ছোট থাকার রুম, অপরিচ্ছন্ন বাথরুমসহ অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ পরিবেশই নিম্নমানের বলে অভিযোগ ওঠেছে।এসব স্থানে যাবতীয় প্রায় সব কিছু করতে হচ্ছে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদেরকেই। তবে কোয়ারেন্টাইনে থাকা পুলিশ সদস্যরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুতই তাদের রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পুলিশ সদস্য বলেছেন, করোনা মোকাবেলায় মাঠে কাজ করতে গিয়ে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা নিয়ে অনেক ভাবতে হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ রোধে পুলিশ সদস্যদের নানা সামগ্রী দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেটি প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। আরও সুরক্ষা সামগ্রী প্রয়োজন। যেমন যারা ডিউটি করবেন তাদের প্রত্যেকের জন্য ফুলহাতা ইউনিফর্ম বা জামা, ফুল প্রটেকশন পিপিই, প্রত্যেককে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করাতে হবে। এসব ক্ষেত্রে এখনও কিছুটা দুর্বলতা রয়ে গেছে। পরিস্থিতি যেহেতু আরও খারাপ হচ্ছে তাই এসব সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাপনা নিশ্চত করা জরুরি।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য করোনা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে দেশের জনগণের জীবন রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ, অসহায়দের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি করোনায় মৃতদের সৎকার ও জানাজার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজও করছেন পুলিশ সদস্যরা। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর মাঝেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্তদের বিষয়ে পুলিশের আইজিপি নিজেও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ এক বার্তায় বলেছেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে নিজের জীবন বিপন্ন করে পুলিশ সদস্যরা দেশের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে অহর্নিশ তাদের পাশে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। জনগণকে সেবা দিতে গিয়েই বীর পুলিশ সদস্যরা করোনাক্রান্ত হয়ে জীবন উৎসর্গ করছেন। আইজিপি বলেন, প্রতিটি মৃত্যুই আমাদের হৃদয়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। তবুও প্রিয় সহকর্মীকে হারানোর এ শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাংলাদেশ পুলিশকে এগিয়ে যেতে হবে।