ফেনী
শুক্রবার, ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৮:২১
, ৩০শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
শিরোনাম:
আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিমের দুর্নীতির তদন্ত শুরু ফেনীতে দুর্গাপূজায় নাশকতা ঠেকাতে মণ্ডপ পাহারায় থাকবে বিএনপি নেতাকর্মীরা দুই বছর ধরে প্রবাসী হয়েও উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক পদে বহাল! ধর্মপুর এডুকেশনাল এস্টেটের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বন্যা প্রতিকারে ৮ দফা দাবি জানিয়ে ফেনীতে এবি পার্টির মানববন্ধন ফাজিলপুরে জামায়াতের ইউনিট সভাপতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর রোগমুক্তি কামনায় ফেনীতে দোয়া মাহফিল ফেনীতে অসহায়দের মাঝে জামায়াতের অটোরিকশা-নগদ অর্থ বিতরণ  ৫৩ বছরেও তিস্তা নদীর চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারেনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ অর্থ সহায়তা তুলে দিলেন ছাত্রদল নেতা 

রূপকথাকেও হার মানায় রিজেন্টের সাহেদের উত্থান

প্রতারণায় মোড়ানো ‘বিলাসী জীবন’

‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার সময় বিমানবন্দরে দেখা। ভদ্রলোক বললেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি সংক্রান্ত প্রধান। জনাব আবুল কালামের স্থলাভিষিক্ত। ঢাকা ফিরে জানলাম বিষয়টি পুরাই মিথ্যা। কিন্তু কিছু পুলিশ ও আনসার তাকে সালাম দিয়ে বিদায় দিল। বিগত ডিসেম্বরের ঘটনা বলছি।’ একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদের প্রতারণার একটি ‘ছোট্ট’ ঘটনা তুলে ধরলেন।

করোনা টেস্টের নামে ভুয়া সার্টিফিকেট, বেআইনিভাবে অর্থ আদায়, আইসিইউ সেবার নামে প্রতারণা, বিনামূল্যে চিকিৎসার নামে রোগীর কাছ থেকে অর্থ আদায়, একই চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছ থেকেও বিল আদায়ের চেষ্টার ঘটনায় আবার আলোচনায় সাহেদ। যদিও বহু বছর ধরেই প্রতারণায় মোড়ানো তার জীবন। প্রতারণা করেই কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। মাথায় ওপর মামলা রয়েছে ৩০টির বেশি। তবে চলতেন সমাজের উঁচু স্তরে। প্রভাবশালীদের সঙ্গে ছবি তুলে বেড়াতেন। ফেসবুকে এসব ছবি পোস্ট করে বাড়াতেন ‘নিজের দর’। নিজের ‘খ্যাতিকে’ ধরে রাখতে ‘নতুন কাগজ’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকও তিনি। নিয়মিত ঢাকার নামিদামি ক্লাবে ছিল তার আড্ডা।

জানা গেছে, তার নাম আসল নাম মো. সাহেদ করিম। বাবার নাম- সিরাজুল করিম, মা মৃত সুফিয়া করিম। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএস‌সি। তবে একাধিক নামে তার আইডি রয়েছে। সাহেদ কখনো কখ‌নো মেজর ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী, ক‌র্নেল ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী, কখ‌নো মেজর সাহেদ করিম বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি সংক্রান্ত প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় দিতেন। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম সাহেদ করিম। কিন্তু বর্তমানে তিনি মো. সাহেদ নামে আ‌রেক‌টি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করছে যার নম্বর ২৬৯২৬১৮১৪৫৮৮৫, আর এ জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয় ২০০৮ সালে। কিন্তু তাতে লেখা- তার মা মারা গেছেন। অথচ তার মা মৃত্যুবরণ করেন ২০১০ সালে। ঠিকানা হরনাথ ঘোষ রোড, লালবাগ, ঢাকা-১২১১ রয়েছে। গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও প্রতারণা করেই শত শত কোটি টাকার মালিক তিনি।

বিএনপি সরকারের আমলে রাজাকার মীর কাসেম আলী ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে সর্ম্পক গড়ে হাওয়া ভব‌ন ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন সাহেদ। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি ২ বছর জেলও খাটেন। জেল থে‌কে বের হ‌য়ে সাহেদ ২০১১ সালে ধানমন্ডির ১৫নং রোডে এমএলএম কোম্পানি বিডিএস ক্লিক ওয়ান নামে বাটপারী ব্যবসা প্র‌তিষ্ঠান খু‌লে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ক‌রে ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। আর ওই সময় তিনি মেজর ইফতেখার করিম চৌধুরী বলে পরিচয় দিতেন। মাঝে কিছু দিন পরিবারসহ ভারতে পালিয়ে ছিলেন তিনি।

তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় ২টি, পল্লবী থানায় একটি, বরিশালে একটি, বিডিএস কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরির নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণার কারণে উত্তরা থানায় ৮টি মামলাসহ রাজধানীতে ৩২টি মামলা রয়েছে।

ফেসবুকে নিজের নানা পরিচয় ব্যবহার করেন তিনি। ন্যাশনাল প্যারা অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট; রিজেন্ট ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড, কর্মমুখী কর্মসংস্থান সোসাইটি, রিজেন্ট হসপিটাল লিমিটেড ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান। সেন্টার ফর পলিটিক্যাল রিসার্চ নামে একটি প্রতিষ্ঠানেরও চেয়ারম্যান তিনি। মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ থেকে ছয় কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার নথিতে নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল হিসেবে পরিচয়য় দেন। এ ঘটনায় আদালতে দুটি মামলা চলছে।

র‌্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ব্যক্তির করোনার টেস্ট করায় রিজেন্ট হাসপাতাল। তার মধ্যে ৪ হাজার ২৬৪টি বৈধ জায়গা থেকে করানো হয়েছে। ৬ হাজারের মতো করোনার রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে কোনো বৈধ টেস্ট ছাড়াই। প্রথমবার টেস্টের জন্য জনপ্রতি সাড়ে ৩ হাজার টাকা ও দ্বিতীয়বার টেস্টের জন্য ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়।

র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতারণার এ ঘটনায় নিজে বিপদে পড়তে পারেন- এটা আচ করে পেরেই কর্মচারী ছাটাইয়ের নাটক সাজান রিজেন্ট মালিক সাহেদ। শুধু কর্মচারীদের ওপর এ অপকর্মের দায় চাপানোর চেষ্টা করেছিলেন। তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা করোনা টেস্টের জালিয়াতিতে জড়িত এমন একটি অভিযোগ তুলে নিজেকে আড়াল করতে কয়েকদিন আগে থানায় একটি জিডিও করেন সাহেদ।

সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট কেসিএস পূর্বাচল প্রজেক্টে বালু সরবরাহের কাজ পেয়েছিল ফেনীর জুলফিকার আলী। তিনি বলেন, সিলেট থেকে বালু সরবরাহের পর তার পাওনা ৪২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৫৯ টাকা সাহেদ পরিশোধ করেনি। টাকা চাইলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় তিনি জিডি করেন। সাহেদে হুমকিতে প্রাণভয়ে জুলফিকার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানান।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, বাংলাদেশের হর্তা-কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে সে ছবি তুলেছে। এটা আসলে তার একটা মানসিক অসুস্থতা। ছবি ব্যবহার করেই সে প্রতারণা করতো। প্রতারকদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। প্রতারণাই ছিল তার প্রধান ব্যবসা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাহেদের মোবাইল নম্বরে ফোন দেওয়া হলেও তা বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo