মঈন উদ্দিন খান -লন্ডন থেকে চিকিৎসাশেষে বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে বেশ কিছু নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা করছে বিএনপি। সহায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরার পাশাপাশি এই ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ তৈরির জন্য কর্মসূচির ধরনও পাল্টে ফেলতে পারে দলটি। বছর দুয়েক ধরে সাদামাটা কর্মসূচিতে থাকা বিএনপি নির্বাচনকে মূল লক্ষ্য ধরে এখন সামনে এগোচ্ছে। আসছে ডিসেম্বর থেকে কিংবা নতুন বছরে সত্যিকারভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে চায় তারা। দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, লেভেল প্লেয়িংফিল্ড আদায় করেই তারা একাদশ সংসদনির্বাচনে অংশ নেবেন। এজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাংগঠনিক কৌশলও প্রয়োগ করা হবে।দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার কিংবা সহায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। এখন সরকার আপসে এ ব্যাপারে রাজি হলে সহায়ক সরকারের বিষয়ে আমাদের নতুন করে প্রস্তাব দিতে হবে না। তবে এর প্রধান কে হবেন তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, সমঝোতা হতে পারে। এর বাইরে গেলে আমরা বাধ্য হবো আন্দোলনে। যদি আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি, তাহলে ২০১৪ সালের উদাহরণ আছে। এ ঝুঁকি সরকার আবার নিবে কি না সেটা হচ্ছে বিষয়।চিকিৎসা ও পরিবারের সাথে সময় কাটাতে গত ১৫ জুলাই লন্ডনে গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি কবে ফিরবেন কিংবা সেখানে কী করছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যথেষ্ট কৌতূহল রয়েছে। লন্ডনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা গতকাল জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বেগম খালেদা জিয়া। ১২ সেপ্টেম্বর তিনি যুক্তরাজ্য বিএনপির একটি সমাবেশে যোগ দেবেন। এরপর অল ইউরোপীয় বিএনপির নেতাদের সাথে মতবিনিময় করবেন তিনি। এসব কর্মসূচি শেষ করে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তিনি দেশে ফিরতে পারেন বলে ওই নেতা ধারণা দিয়েছেন।লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসনের সময় কিভাবে কাটছে, সে সম্পর্কে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দলের সিনিয়র এক নেতা জানান, খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ বিশ্রামে রয়েছেন। চোখের অপারেশন হয়েছে ৮ জুলাই। তিন-চার দিন আগে তার চোখের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। এ ছাড়া পায়েও সমস্যা অনুভব করছেন তিনি। পায়ের চিকিৎসাও শুরু হয়েছে।খালেদা জিয়া দেশের বাইরে যাওয়ার সাথে দলের কূটনৈতিক তৎপরতারও একটি সংযোগের বিষয় সবসময় আলোচিত হয়। দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ থাকা কিংবা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দেশগুলোর কর্তাব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় করার বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। তবে লন্ডনে এখনো পর্যন্ত কোনো বৈঠক হয়েছে কি না তা জানাতে পারেননি তিনি। জানা গেছে, লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র এক নেতা সেখানে কূটনৈতিক পর্যায়ে কিছুটা যোগাযোগ রাখছেন।জানা গেছে, বিএনপি তিনটি বিষয় সামনে রেখে আগামী দিনের কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছে। প্রথমত. সহায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরা, দ্বিতীয়ত. নানা তৎপরতার মাধ্যমে আলোচনা ও সমঝোতার পথে সরকারকে টেনে আনা এবং তৃতীয়ত.আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। নির্বাচনের আগে একটি সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছতে দলটি খুব বেশি সময় নিতে আগ্রহী নয়। নভেম্বরের মধ্যে সহায়কসরকারের রূপরেখা তুলে ধরা হলে নতুন বছরের শুরু থেকেই অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল থেকে বিএনপির কর্মসূচিতে নতুন গতি পাবে এমন আভাসই পাওয়া গেছে।
সহায়ক সরকারের ফর্মুলা কেমন হবে প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকেই সহায়ক সরকার গঠন করা যেতে পারে। অথবা সংবিধান সংশোধন করে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সহায়ক সরকার হতে পারে। অথবা প্রধানমন্ত্রীকে ছুটিতে রেখে কিংবা তার কার্যপরিধি সীমিত করে নির্বাচন পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি সহায়ক সরকার গঠন করা যেতে পারে। ওই নেতা বলেন, ফর্মুলা যেটাই হোক এ ক্ষেত্রে সমঝোতা কিংবা আলোচনার মনোভাব সবার আগে জরুরি।ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া দেশে ফিরেই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন। এটা আমাদের ঘোষিত বিষয়। নেত্রী দেশে থাকা অবস্থায় বিশেষজ্ঞ দল এটা নিয়ে কাজ করেছে। তিনি আসার পর তা চূড়ান্ত করা হবে। পরে তা নিয়ে জনমত সৃষ্টি করা হবে। ফলে আরো জনসংযোগ কর্মসূচি আসবে সামনে।নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তুলে না ধরলেও গত প্রায় এক বছর ধরে নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একই দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিল এ দল।ওই নির্বাচনের আগে রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ’৯৬ ও ২০০১ সালে নির্বাচনকালীন দু’টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে ১০ জনকে নিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন যা আমলে নেয়নি দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অনড় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপির এখন এই বিশ্বাস জন্মেছে যে, সরকার ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি একতরফা নির্বাচন কোনোভাবেই করতে পারবে না।