রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত নানা অপকর্মের দায়ে প্রায় খবরের শিরোনাম হচ্ছে ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদ নগর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দ জাহাঙ্গীর। পরকীয়া, অবৈধ ব্যবসা, জায়গা দখল, শালিস বাণিজ্য, অঢেল সম্পদ গড়াসহ নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হচ্ছে। যা নিয়ে প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র সমালোচনার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিএনপি নেতাকর্মীরা চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। করোনাকালীন সময়ে দলীয় কার্যক্রম স্থগিত থাকায় পরবর্তীতে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
দলীয় সূত্র মতে, ২০০১ সাল পরবর্তী বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে ফরহাদ নগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করে সৈয়দ জাহাঙ্গীর নানা অপকর্ম করে বেড়ালেও ভয়ে কেউ মুখ খুলেনি। ক্ষমতার দাপটে খুন, বিরোধকৃত জায়গা দখল করে দেয়া, শালিস বানিজ্য, সরকারি জায়গা দখল করে দীঘি খনন, চরকালিদাস গ্রামের বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও এলাকার রাস্তাঘাটসহ সরকারের নানা উন্নয়নকাজে অনিয়ম-দূর্ণীতি ও নানা অপকর্ম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও এলাকায় আত্মীয়তার সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে আতাত করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে পূর্বের ন্যায় নানা অপকর্ম করে আসছে বিএনপির এই নেতা। এসব অপকর্মে সরকার দলীয়দের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তাদেরকে সামনে রেখে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে জাহাঙ্গীর নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে বলে স্থানীয় ও দলীয় একাধিক সূত্র জানান।
সম্প্রতি চরকালীদাস গ্রামের ছালাদার বাড়ি সংলগ্ন স্থানে জাঙ্গীরের নেতৃত্বে সিন্ডিকেটের লোকজন ব্যবসায়ী হোনা সওদাগরের ১ হাজার শত জায়গা জোরপূর্বক দখল করে দিঘী খননের চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলেও জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক ও অনলাইন পত্রিকায় বিএনপির এ নেতার বিরুদ্ধে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিষয়টি বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নজরে আসলে তারাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। ব্যক্তিগত অপকর্মের দায়ে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
৩০ জুন ফরহাদ নগর ভোর বাজারে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং চালু অনুষ্ঠানে দেয়া তথ্যমতে সংবাদ কর্মীরা ব্যাংকের অনুষ্ঠানের নিউজটি প্রকাশ করে। এতে বাজার কমিটির সভাপতি ও বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীরের ভাই আবুল বশরের নাম বাদ পড়ায় সরকার দলীয়দের দিয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া ও মামলা করার হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে বিএনপির এ নেতার বিরুদ্ধে।
এর আগে ১২ মে কৃষকদলের উদ্যোগে কেএমহাটে ত্রাণ বিতরণ শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে বৌদ্দ্যকোণা সংলগ্ন স্থানে পরকিয়া সম্পর্কের জেরে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীরকে লাঞ্ছিত করা হয়। যদিও এ ঘটনাকে সরকার দলীয়দের হামলা বলে জাহাঙ্গীর দাবি করলেও স্থানীয়রা এবং বিএনপি-অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে জাহাঙ্গীরের পরকিয়া সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি শাহাদাত হোসেনের নিকট ভুক্তভোগী পরিবার বাদি হয়েছেন বলেও তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন যুবদলের এক নেতা জানান, ২০১৩-১৪ সালে বিএনপির ডাকে হরতাল-অবরোধ চলাকালিন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে অসংখ্য মামলা-হামলা হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে আতাত থাকায় সৈয়দ জাহাঙ্গীর সব কিছু থেকে রক্ষা পায়। এছাড়া ভোরবাজার কমিটির নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের ভাই বশরকে সভাপতি বানানোসহ সকল সুবিধা ভোগ করে আসছে। অথচ অন্য নেতারা ঠিকমতো বাড়িতেও থাকতে পারেনি বলে এই নেতা জানান।
ফরহাদ নগর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক আবুল হোসেন কমান্ডার আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে জাহাঙ্গীরের সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ব্যক্তিগত অপর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আমান উদ্দিন কায়সার সাব্বির জানান, ব্যক্তির অপর্কের দায় দল নিবে না। দলকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে যাচাই করে সাংগঠনিক পদ্ধতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফজলুর রহমান বকুল জানান, এটি অবশ্যই বিব্রতকর। এ বিষয়ে খোজ খবর নেয়া হচ্ছে।দলীয় মিটিংয়ে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার জানান, সরকারী দলের রোষানলে পড়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা মামলা হামলা থেকে রেহাই পায়নি। সে জায়গায় সরকারী দলের নেতাকর্মীদের সাথে আতাঁত করে অপকর্ম লিপ্ত হওয়ার খবরে আমরা বিব্রত। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি