এম এ জাফর-ফেনী শহরের সুলতানপুর এলাকার বাসিন্দা এমএলএস সুদীল চন্দ্র দাস অবসরে যান গত ক’বছর আগে। পেনশন, কল্যাণ তহবিল, জিপিএস ফান্ড ও গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স এর টাকা উত্তোলনের জন্য তার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা উৎকোচ নেন শংকর দেবনাথ। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় মাষ্টার রোলে সেফটি অপারেশন থিয়েটারে নিয়োগ পেতে তাকেই ম্যানেজ করতে হয়। শুধু সুদীলই নয় শংকরের কাছে অসহায় ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালের নার্স সহ কর্মচারীরা। সুবিধাবঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে কেউ প্রধান অফিস সহকারির অনিয়মের প্রতিবাদ করে না। টাকা পেলে সব অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টাইম স্কেলের জন্য ডিজি অফিস থেকে অফিসারদের কাছে স্বাক্ষর নেয়ার জন্য নার্সদের কাছ থেকে ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন অফিস সহকারি শংকর দেবনাথ। টাকা না দিলে স্বাক্ষর নেওয়া হয় না বলে নার্সদের হয়রানি করা হয়। হাসপাতালের টিকেট কাউন্টারে টিকেট বিক্রির টাকা ধার নিয়ে ফেরত দেয় না শংকর। তাকে টাকা না দিলে তাদেরকে বিভিন্নভাবে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। হাসপাতালের কোন কর্মচারী মারা গেলে তার পেনশন, কল্যাণ তহবিল, জিপিএস ফান্ড ও গ্রুপ ইন্স্যুরেন্সের টাকা সহ সকল পাওনা উত্তোলনের জন্য শংকরকে ধাপে ধাপে ঘুষ দিতে হয়।
সূত্র জানায়, হাসপাতালের সুইপার মনি বালার স্বামী হারাধন চন্দ্র দাস মারা যাওয়ার পর পেনশন, কল্যাণ তহবিল, জিপিএস ফান্ড ও গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স এর টাকা উত্তোলনের জন্য শংকরকে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। অপারেশন থিয়েটারে কর্মরত মিন্টু অবসরে যাওয়ার পর রাজু নামের এক মেডিকেল সহকারির কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পোস্টিং দেয়া হয়। এছাড়া জিপিএস ফান্ড থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা নিতে তাকে দিতে হয় ১০-২০ হাজার টাকা। প্রতিটি ওয়ার্ডের ইনচার্জকে বদলীর ভয় দেখিয়ে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করেন। মাষ্টার রোলের কর্মচারীদের চাকুরিচ্যুত করার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহন করে। হাসপাতালের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ডাক্তার থেকে শুরু করে সকল কর্মচারীরা ফিঙ্গার দিতে হয়। শংকরের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিতরা সকাল ১১টায় কর্মস্থলে আসলেও ফিঙ্গারে দেখানো হয় সাড়ে ৮টায়।
অপর একটি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে পৌরসভার সুলতানপুরে ৮শতক জায়গা ক্রয় করেন তিনি। সামান্য বেতনের এ চাকুরীজিবি ছাগলনাইয়ার শিলুয়ায় নির্মাণ করছেন বহুতল ভবন। তার দুই ছেলে রাজধানীর একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত। দুই ভাতিজা নর্দান ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার দায়িত্বও তার।
জানতে চাইলে শংকর দেবনাথ কিছু কিছু অভিযোগ স্বীকার করলেও টাইমস্কেল, টিকেট কাউন্টার থেকে টাকা ধার নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির জানান, কেউ এসব বিষয়ে অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।