ফেনী
শনিবার, ১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ভোর ৫:৪১
, ১৭ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
শিরোনাম:
রাজাপুরে হিলফুল নূর ফাউন্ডেশনের শীতবস্ত্র উপহার ফেনীতে বর্নাঢ্য আয়োজনে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত  ফেনী বড় মসজিদের এলইডি স্ক্রিনে ভেসে উঠলো আ.লীগ আবার ফিরবে,জয়বাংলা উপজেলা-পৌর কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে চরদরবেশ ইউনিয়ন বিএনপির আনন্দ মিছিল নিজ দলীয় ত্যাগী-নির্যাতিত কর্মীর পাশে থাকায় ষড়যন্ত্রের শিকার বিএনপি নেতা আহবায়ক কমিটি দিয়ে ৫ বছর পার ফেনীর বিএনপির ফাজিলপুরে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর মানববন্ধন নানা আয়োজনে ফেনী মুক্ত দিবস পালিত ঢাকাস্থ ফাজিলপুর যুব কল্যাণের জিপিএ ৫ সংবর্ধনা আ.লীগের রাজনীতি করার অধিকার আছে কিনা তা জনগণই ঠিক করবে-ফখরুল

বন্ধুত্বের ভাঙা-গড়া

মোস্তফা মনোয়ার-বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দিয়ে আমরা যেন হঠাৎ নিজেদের আবিষ্কার করি এক বিশাল জনসমুদ্রে। স্কুল-কলেজের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বেশি মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই হিসেবে আমাদের বন্ধুত্বও হয় বেশি। কিন্তু সবাই কি আসলেই বন্ধু হয়? বন্ধুত্বের বীজ হয়তো রোপিত হয় অনেকের সঙ্গে, কিন্তু সেই বীজ থেকে চারা হয়ে ডালপালা মেলতে মেলতে সংখ্যাটা কমে যায়। এখানে বন্ধুত্ব গড়তে যেমন কারণ লাগে না, বন্ধুত্ব ভাঙতেও না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এমন একটা বয়স পাড় করি, যেখানে আমাদের নিজস্ব একটা দর্শন থাকে, আদর্শ থাকে। সাজিদ, সানি আর রাত্রি (ছদ্মনাম) তিনজন বন্ধু। দলগত পড়াশোনা থেকে শুরু করে ক্লাস বাদ দিয়ে ঘুরতে যাওয়া, যেকোনো কাজেই এ তিনজনকে দেখা যাবে একসঙ্গে। সানি কিছুদিন ধরে খেয়াল করছিলেন—সাজিদ আর রাত্রির মাঝে কিছু একটা চলছে। পরে প্রেমই হয়ে গেল তাঁদের। সানি এতে খুশিও হয়েছিলেন। এরপর দেখা গেল তাঁদের তিনজনের আর একসঙ্গে থাকা হচ্ছে না। সাজিদ আর রাত্রি দুজনই বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছেন। এমন না যে তাঁরা সানিকে তাঁদের সঙ্গে থাকতে না করছেন, কিন্তু সানিরই কেমন যেন লাগে আসলে। পরে সানিই তাঁদের সঙ্গ ছেড়ে দিলেন। ভেঙে গেল তিনজনের বন্ধুত্বটা। সাজিদ আর রাত্রির দেখা গেল সানিকে আর তেমন প্রয়োজনও হচ্ছে না।

মাঝেমধ্যে বন্ধুত্বের মাঝখানে বাদ সাধে দূরত্ব। জয় আর শান্ত (ছদ্মনাম) তিন বছর ধরে বন্ধু। হোস্টেলেও রুমমেট তাঁরা। নিজেদের তাঁরা ভাইও বলেন। সামনের মাসে জয় চলে যাচ্ছেন কানাডা, উচ্চশিক্ষার জন্য। শান্তর দেশের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। তাহলে? বন্ধুত্বটাও শেষ হয়ে যাচ্ছে? একজন বাংলাদেশে, আরেকজন কানাডায় থেকে নিশ্চয় দিন-রাত একসঙ্গে থাকা সম্ভব না?

ভালো বন্ধু মনে করছেন কাউকে, কিন্তু তিনি আসলে আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখেছেন তাঁর প্রয়োজনে। জানতে পারলে কী করবেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মু. কামাল উদ্দীন মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুত্বটা আসলেই অন্যান্য বন্ধুত্বের চেয়ে আলাদা। এখানে যাঁদের বন্ধুত্ব হয়, তাঁরা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। আবার একসঙ্গে থাকা হয় দীর্ঘ একটা সময় ধরে। তাই এই বন্ধুত্ব আলাদাই বটে।

বন্ধুত্বের মাঝে স্বার্থ নিয়ে তিনি বলেন, প্রকৃতিগতভাবেই আমরা একজন আরেকজনের ওপর নির্ভরশীল। প্রকৃতিগতভাবেই আমাদের সম্পর্কের সঙ্গে স্বার্থ জুড়ে আছে। কিন্তু কোনো বন্ধুত্বের সম্পর্কের মুখ্য উদ্দেশ্যই যদি স্বার্থ হয়, তাহলে সেটা বন্ধুত্বই নয়। প্রতিটি মানুষই বেড়ে ওঠে নিজস্ব স্বকীয় পরিবেশে। কোনো একটা বিষয়ে আমাদের স্বতন্ত্র ধারণা, পছন্দ থাকতে পারে। অন্য কোনো নতুন ধারণাকেও গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকা উচিত, সেটা বন্ধুত্বসহ সব সম্পর্কেই। পরীক্ষার ফল বন্ধুত্ব নির্ধারণ করে দিতে পারে না। বন্ধু ভালো করলে ঈর্ষা না করে খুশি হওয়া উচিত। এখন যদি বন্ধুর ভালো ফল দেখে হীনন্মন্যতায় ভুগি কিংবা পরাশ্রীকাতর হই, তাহলে সে বন্ধুত্বটার ব্যাপারে প্রশ্ন থেকে যায়।

প্রযুক্তির যুগে বন্ধুত্বের মাঝে দূরত্ব খুব বেশি একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। দেখা না হলেও চাইলে সম্পর্ক রক্ষা যায়। খুবই তুচ্ছ বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝির কারণেও অনেক সময় ভেঙে যায় অনেক বছরের বন্ধুত্ব। ব্যাপারটা পুরোপুরিই নির্ভর করছে আপনি আপনার বন্ধুত্বটাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, তার ওপর। যদি আপনার কাছে বন্ধুত্বের গুরুত্ব বেশি হয়ে থাকে, তাহলে ভুল বোঝাবুঝিগুলো দেখা যায় নিজেরাই মিটিয়ে নিচ্ছেন, নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ালেও বন্ধুর কথা ভুলছেন না। আর গুরুত্ব কম থাকলে দেখা যায়—ওই সম্পর্কটা আর টেকে না কিংবা আপনার তেমন ইচ্ছাও থাকে না টিকিয়ে রাখার।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo