ঢাকা অফিস-নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর মহিপালে উড়ালসড়ক বা ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি দেশের প্রথম ছয় লেনের উড়াল সড়ক।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে নিজ কার্যালয়ে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৬৬০ মিটারের এই উড়ালসড়কটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উড়ালসড়কটি নির্মিত হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রামে সড়ক পথে যাতায়াতে সময় কমবে। পাশাপাশি নোয়ালাখী লক্ষ্মীপুর, ফেনী, এবং চাঁদপুরে যাতায়াতে ভোগান্তিও কমবে।
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন করার সময় এই উড়াল সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতার পর সেনাবাহিনীকে ২০১৫ সালের মে মাসে দায়িত্ব দিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু সেনাবাহিনী ছয় মাস আগেই কাজ শেষ করেছে। প্রকল্পটি ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের অন্তর্ভুক্ত ১৯ কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের মাধ্যমে করা হয়েছে।
এই সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৬১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এটি নির্মাণ হয়েছে।
উড়াল সড়কের পাশাপাশি ছোট ও ধীরগতির যানবাহন চলাচলে নিচের চার লেন সড়কের পাশপাপাশি নির্মিত হয়েছে দুই লেনের সার্ভিস রোড। ফলে ধীরগতির যানবাহনকে এখন আর মূল সড়কে উঠতে হবে না সেখানে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ফেনী সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ফেনীতে বসে প্রধানমন্ত্রীকে জেলাটিতে সফরের আমন্ত্রণ জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাস্তা যখন করলাম, এই রাস্তা দিয়ে একবার তো আসতেই হবে, সড়ক পথেই আসব।’
এর আগে শেখ হাসিনা বলেন, ফেনীর মহীপাল জায়গাটা ছিল যানজটের। চট্টগ্রামমুখী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, বা চাঁদপুর যাওয়ার সময় এখানে দীর্ঘ যানজটে আটতে থাকতে হতো। সেই সমস্যাটা দূর করার জন্যই এই উড়াল সড়ক নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এই এলাকাটি ফেনীবাসীর একটি দুঃখ ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফেনীবাসীর দীর্ঘদিনের যে দুঃখ ছিল, সে দুঃখ মোচন হবে, সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থাটাও আনও উন্নত হবে।’
ওই অঞ্চলে প্রায় প্রতিটা জেলায় সড়ক যোগাযোগ এখন আরও সহজ হবে এবং ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে বলেও আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী।
‘প্রায়ই এখানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটতো, সেটাও আর ঘটবে না।’
কেবল নোয়াখালী বা ফেনী নয়, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকার ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ সালে জাতির জনকের জন্ম শতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করতে চাই এমন বাংলাদেশ সৃষ্টি করে যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন।’
‘বাংলাদেশকে আমার এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, এই উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে, সে জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, মহীপালের উড়ালসড়কের মতো এখন থেকে বাংলাদেশে যতগুলো রাস্তা বা ফ্লাইওভার হবে প্রতিটি জায়গায় মূল রাস্তার সঙ্গে ধীর গতির গাড়ি চলাচলের জন্য আলাদা রাস্তা করা হবে। ফলে ধীরগতির যানবাহনকে আর মহাসড়ক ধরে চলতে হবে না।
নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগে উড়াল সড়কটি নির্মাণ করায় সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে যে কোনো কাজ দ্রুত করে ফেলা যায়। এতে আর্থিক সাশ্রয় যেমন হয়, তেমনি মানুষ দ্রুত সেবাটা পায়।’
সেনা প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিকুল হক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এই স্থানটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরে যাতায়াতের জন্য একটি মোহনা বা সংযোগ স্থল হিসেবে পরিচিত। তাই স্থানে যানজট সব সময় লেগেই থাকত। … এই ফ্লাইওভারটি নির্মিত হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রামে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন আরও নিরবচ্ছিন্ন, যানজটমুক্ত হবে, তেমনি ফেনীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে।’
জনকল্যাণকর কাজে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে সেনা প্রধান বলেন, ‘দেশ গঠনে একত্রে কাজ করলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়ন দ্রুততর হবে।’
উদ্বোধন শেষে ফেনী সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘সবাই জানত ফেনী বেগম খালেদা জিয়ারে এলাকা। কিন্তু ফেনীর উন্নয়নের জন্য তিনি কোনো ভূমিকা রাখেননি। আপনি ফেনীতে বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন, ফেনীতে সিক্সলেন ফ্লাইওভার করেছেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছেন।’
এর আগে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম এই উড়াল সড়কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সময় উপস্থিত থাকলেও তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।