স্পোর্টস ডেস্ক-মাসে মাসে চিকিৎসা খরচ বাবদ এক হাজার ইউএস ডলার আর বছরে রোজারিওতে তার স্টিল মিলের ম্যানেজার বাবার ঠিকানায় ৪০ হাজার পাউন্ড পাঠানো, এ শর্তেই হাতের কাছে কিছু খুঁজে না পেয়ে একটা টিস্যু পেপারেই মেসির সঙ্গে প্রথম চুক্তিটি হয়েছিল ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনায়। বছর তেরোর এক বিস্ময় বালকের ফুটবলশৈলী মাত্র সাত মিনিট দেখেই পাকা জোহরির মতো হীরা চেনে নিয়েছিলেন বার্সেলোনার ফাস্ট টিমের ডিরেক্টর চার্লি রেক্সাস। আর তারপর তো সবই ইতিহাস, আজও ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার জাদুঘরে মেসির বাবার সঙ্গে করা রেক্সাসের সেই চুক্তিপত্রটি যত্ন করে রেখে দেওয়া হয়েছে। যে ছেলের জন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় বছরে মাত্র ৪২ লাখ টাকা খরচ করেছিল বার্সা, তাকেই এখন হাসিমুখে প্রতিদিন ৭৬ লাখ টাকা দিচ্ছে স্পেনের এই বড় ক্লাবটি। জীবন বোধহয় এমনই! চাকা ঘোরার জন্য শুধু সময়ের অপেক্ষা করতে হয়। মেসির সঙ্গে চুক্তি করার জন্য ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলো ব্লাঙ্ক চেক নিয়ে বসেছিল, শুধু মেসির মুখ থেকে ‘হ্যাঁ’ শব্দটি শুনতে চেয়েছিল তারা। গেল বছর স্পেনে কর ফাঁকি, জেল-জরিমানা নিয়ে মেসির মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল- অন্যরা সেটাই কাজে লাগাতে চেয়েছিল। কিন্তু মেসি পারেননি, যে ক্লাব তাকে পৃথিবী চিনিয়েছে, তাদের সঙ্গে আত্মার সম্পর্কটি ছিন্ন করতে পারেনি। তাই ২০২১ পর্যন্ত বার্সার সঙ্গে বাসা বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অবশ্য বার্সাও তাকে যোগ্য সম্মানী দিচ্ছে, আগের চেয়ে সপ্তাহে অন্তত ২০ শতাংশ বেতন বাড়িয়েছে তার। সপ্তাহে পাঁচ লাখ পাউন্ড (কর দেওয়ার পর) বেতনের পাশাপাশি নতুন চুক্তি করায় বোনাসও পাচ্ছেন ৬০ কোটি ইউএস ডলার। স্প্যানিশ দৈনিক এল মুন্ডো হিসাব করে দেখিয়েছে, সব মিলিয়ে মেসির সপ্তাহে বেতন হবে ছয় লাখ ৬৭ হাজার ইউএস ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ!
বার্সেলোনা ছেড়ে প্যারিসে পাড়ি জমানোর পর নেইমারও মেসির মতো সমপরিমাণ অর্থই পেয়ে থাকেন প্রতি সপ্তাহে। তবে সে তুলনায় রোনালদোর বেতন কিন্তু বেশ কম। রিয়াল মাদ্রিদে এই পর্তুগিজ তারকা ফুটবলার প্রতি সপ্তাহে পেয়ে থাকেন তিন লাখ ৬৫ হাজার পাউন্ড। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ। প্রতি দিনে আসে ৫৪ লাখ টাকা। যদিও মেসির এই বেতন দেখে চোখ কপালে তোলার কিছু নেই। ফুটবল বিশ্বে মেসির চেয়েও সপ্তাহে বেশি বেতন পান কার্লোস তেভেজ। আর্জেন্টিনার এই ফুটবলার চীনের সাংহাই সিনহুয়াতে খেলে এখন সপ্তাহে প্রায় ছয় কোটি ৭৬ লাখ টাকা আয় করেন। তারই সতীর্থ লাভেজ্জিও চীনের অন্য আরেকটি ক্লাবে খেলে সপ্তাহে আয় করেন চার কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
বিশ্বের ক্রীড়াবিদদের মধ্যে মেসির এই বেতনও তেমন আকর্ষণীয় নয়। আমেরিকার বিখ্যাত বাস্কেটবল খেলোয়াড় এমভিপি কারির সপ্তাহে আয় প্রায় ছয় কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ফোবর্সের হিসাবে তিনিই কোনো ক্লাব থেকে সপ্তাহে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ক্রীড়াবিদ।
মেসির এই নতুন চুক্তি নিয়ে অনেক গুজব, অনেক গল্প ছড়িয়েছিল গত চার মাসে। এমনও শোনা গিয়েছিল, মেসি তার প্রিয় কোচ পেপ গার্দিওলার ডাকে ইংল্যান্ডের ম্যানসিটিতে চলে যাবেন। মেসির বাবার সঙ্গে নাকি ম্যানসিটির লোকজন দেখাও করেছিল। কিন্তু বার্সেলোনার প্রেসিডেন্ট বার্তামেউ গতকাল জানিয়ে দিয়েছেন, গেল জুনেই নিজের ত্রিশতম জন্মদিনে মেসির সঙ্গে বার্সার এই নতুন চুক্তিটি পাকাপাকি হয়। বাকি ছিল শুধু মিডিয়ার সামনে এদিনের এই ফটোসেশনটিই। নতুন চুক্তিতে শুধু মেসির বেতনই বাড়েনি সেইসঙ্গে ‘বাই আউট ক্লজে’র রেকর্ড গড়া হয়েছে। ৭০ কোটি ইউরো, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ছয় হাজার ৪৪০ কোটি টাকা! অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে মেসি যদি অন্য ক্লাবে যেতে চান তাহলে এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে তাকে বার্সেলোনা ছাড়তে হবে। ফুটবল ইতিহাসে এত অর্থ দিয়ে দলবদলের ঘটনা কখনোই ঘটনি, যা থেকে বার্সাই শুধু নয়, মেসিও বাকি ক্লাবগুলোকে এই বার্তায় দিলেন যে, মেসি আর বার্সা সমার্থক! এতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করা যাবে না। ‘আজ থেকে ৪ হাজার ৭৮৮ দিন আগে বার্সায় অভিষেক হয়েছে তার। এ পর্যন্ত ৬০২ ম্যাচে ৫২৩ গোল করে ৩০টি ট্রফি জিতেছেন মেসি। বার্সার সঙ্গে মেসির এই যাত্রার গল্পটি চলতেই থাকবে…।’ পাশে বসিয়ে বেশ গর্ব করেই কথাগুলো বলছিলেন ক্লাব প্রেসিডেন্ট বার্তামেউ।
বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলাররা
ফুটবলার ক্লাব প্রতি সপ্তাহে
কার্লোস তেভেজ সাংহাই সিনহুয়া (চীন) ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড (৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা)
মেসি বার্সেলোনা (স্পেন) ৫ লাখ পাউন্ড (৫ কোটি ২০ লাখ টাকা)
নেইমার পিএসজি (ফ্রান্স) ৫ লাখ পাউন্ড (৫ কোটি ২০ লাখ টাকা)
লাভেজ্জি হেবেই চায়ান ফরচুন (চীন) ৪ লাখ ৬০ হাজার পাউন্ড (৪ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা)
অস্কার সাংহাই এসআইপিজি (চীন) ৪ লাখ ৩২ হাজার ৬০০ পাউন্ড (৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা প্রায়)
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ (স্পেন) ৩ লাখ ৬৫ হাজার পাউন্ড (৩ কোটি ৭৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা)