ডা: তাপস বিশ্বাস ও সুমিত্রা চ্যাটার্জি-‘বীরের এ রক্তস্রোত মাতার এ অশ্রুধারা এর যত মূল্য, ধরার বুকে সে কি হবে হারা…’ বাঙালি পাঠক হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিষ্টান- আমার বাঙালি ভাইবোনেরা! আপনারা শুনেছেন কি কখনো এমন একটি মানবসম্প্রদায়ের কথা- যাদের নেই কোনো পরিচিতি, নেই কোনো আবাসভূমি, যাদের নেই কোনো শিক্ষা জীবিকা অর্জনের অধিকার!
আপনি কি জানেন এমন একটি মানবগোষ্ঠীর কথা- যাদের নেই সন্তান ধারণের কিংবা বিয়ে করার অধিকার, যাদের পূর্বপুরুষের ভিটামাটিতে নাগরিক বলে স্বীকৃতি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং হিংস্র দানবের নখরে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত যাদের দেহ; যাদের শিশুদের কুঠারাঘাতে অথবা তরবারির এক আঘাতে মস্তক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে আর জলজ্যান্ত আগুনে পুড়িয়ে ভস্ম করা হচ্ছে যাদের। বাবা-মায়ের সামনে কিশোরী-তরুণী মেয়েদের সম্ভ্রম লুটে নিচ্ছে মানুষরূপী হায়েনার দল কিন্তু তারা অসহায়, তাদের নেই কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা। সৃষ্টিকর্তার এ মাটিতে এমন কোনো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সাহসী শক্তি নেই যে, এ অসহায় জনগোষ্ঠীর সাহায্যে এগিয়ে আসবে; অত্যাচারী দুর্যোধনের ঊরুতে আঘাত করার জন্য, তাদের রক্ষার জন্য নেই কোনো সাহসী ভীমসেন?
তাদের রক্ষায় অত্যাচারী নব্য রডরিক্সের উপযুক্ত শাস্তি দিতে নেই কোনো তরুণ তারেক বিন জিয়াদ। আজ নেই কোনো ‘৭১-এর যিশু’ তথা সঙ্গিন হাতে বীর বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা যারা জীবন বাজি রেখে শায়েস্তা করতে পারে আজকের অত্যাচারী মিয়ানমারের নব্য খান সেনাদের। এই অবহেলিত মানবগোষ্ঠী জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে যেখানেই পালিয়েছে একটু আশ্রয়ের খোঁজে সেখানেই তাদের বাঁধা পড়তে হয় নতুন শৃঙ্খলে, কারণ ওরা পরিচয়হীন মানব। এই হতভাগ্য, অত্যাচারিত মানবের একটি পরিচয় বিপন্ন, বিধ্বস্ত সে রোহিঙ্গা, সে রোহিঙ্গা মায়ের সন্তান, তাই সে আজ অসহায় রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত।
কথিত সন্ত্রাসের শেষ শিকড়টি উপড়ে ফেলা তথা আরাকানকে বাঙালিমুক্ত করার হুঙ্কার দিয়েছেন ক্ষমতালিপসায় অন্ধ, উগ্র এক নারী নেত্রী। তার সামরিক বাহিনীর বহু দিনের লালিত স্বপ্ন আজ পূরণের পথে কসোভো ও বসনিয়ার মতো মুসলিমসহ বাঙালিমুক্ত করে আরাকানে বিজয় উৎসব করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সু চি ও তার সামরিক বাহিনী। দুর্বল নির্যাতিত বিশ্ববিবেক অবাক-অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় আর স্মরণ করে হয়তো কবিগুরুর বাণী : ‘প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে/বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’
তাহলে অপরাধীর বক্র হাত কি সোজা হবে না? ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো করা হবে না দুর্যোধনের পাপিষ্ঠ ঊরু? ধর্ষণকারী নব্য খান সেনাদের কি বিচারের আওতায় আনা হবে না? মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে না কি বার্মিজ খুনি জান্তার হোতাদের? পাপিষ্ঠ সেনাদের মতো নব্য পাপীদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত কি দেখবে না এই পৃথিবী! বীর বাঙালি আর বিশ্বের বিবেকবান বীর জনতা কি তাদের উদ্দেশে বলবে না- Hands off from Arakan অগণিত রোহিঙ্গার রক্ত আর শত শত নারীর সম্ভ্রমহানি কি বিফলে যাবে? অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জনতার সংগ্রাম চলবেই। বিজয়ী হতে হবে নিগৃহীত-লাঞ্ছিত মানবতাকে নির্যাতিত মানুষ মুক্তির আকাক্সক্ষায় একদিন রুখে দাঁড়াবেই- শুরু হবে আর এক মহান মুক্তিযুদ্ধ! আর কি শোনা যাবে না সেই মহান বজ্রকণ্ঠ (অত্যাচারী বর্মিদের উদ্দেশে) আর যদি একটা গুলি চলে, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা কিছু আছে…।
অজস্র রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশুর রক্ত ও সম্ভ্রম একদিন আনবে আরাকানে ভোর। ‘একদিন-না-একদিন ওই বিভাবরী সূর্যটা তো উঠবেই!’