কূটনৈতিক প্রতিবেদক-বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। একই সাথে রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মিয়ানমারে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিগগির মিয়ানমার যাবেন বলে জানিয়েছেন।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক দফতরের মন্ত্রী খিও টিন্ট সয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ সব কথা জানান।
বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১১টায় শুরু হওয়া বৈঠকটি দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলে।
মাহমুদ আলী বলেন, প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত চুক্তি সইয়ের পর মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নেয়ার অঙ্গিকার করেছে। খুব শিগগিরই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মিয়ানমার।
তবে এই প্রক্রিয়ায় জাতিসঙ্ঘকে অন্তর্ভুক্ত করার কোন সুযোগ নেই। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ সার্বিক প্রক্রিয়া দেখাশুনা করবে।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, মিয়ানমার এর আগেও বেশ কয়েকবার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার অঙ্গিকার করেও তা বাস্তবায়ন করেনি। ২০০৫ সালের পর বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এমনকি যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হওয়া অল্প কিছু সংখ্যাক রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নিতে তারা তালবাহানা করেছে।
এ কারণে বাংলাদেশই চাইছিল যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া তৃতীয় পক্ষ বা জাতিসঙ্ঘকে অন্তর্ভুক্ত করতে। তবে মিয়ানমারের আপত্তির মুখে সেই অবস্থান থেকে সরে এল সরকার।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠক বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মিয়ানমারে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি আন্তর্জাতিক চাপ সাময়িকভাবে সামাল দিতে মিয়ানমারের কৌশল হিসাবে ধারণা করা হচ্ছে।
গত অক্টোবরে সীমান্তচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার জেরে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ওই সহিংসতার পর প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য জানুয়ারিতে সু চির বিশেষ দূত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিউ তিন ও জুলাইতে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থং তুন বাংলাদেশে আসেন।
দুবারই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কী করা উচিত, সেটা বাংলাদেশ খুব স্পষ্ট করেই মিয়ানমারকে জানিয়েছে। মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে সহযোগিতার কথা জানালেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এর ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে মিয়ানমারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের রিরুদ্ধে নতুন করে নিধনযজ্ঞ শুরু হলে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশী রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
গত রাত একটায় ব্যাংকক থেকে ঢাকায় পৌছায় মিয়ানমার প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী তাদের স্বাগত জানান।