নিজস্ব প্রতিবেদক-সকালে বিএনপি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সংলাপের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপি ও এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রশংসা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। এর পর কমিশনের সঙ্গে প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা বৈঠক শেষে বেরিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আগামী নির্বাচন ও নির্বাচনের আগে সংকট সমাধানে বিএনপি ‘কিছুটা আশাবাদী’।
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সকাল ১১টায় বিএনপির ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইসির বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের শুরুতে প্রতিনিধিদলের উদ্দেশে বক্তব্য দেন সিইসি নুরুল হুদা। সেখানে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় থাকার সময়ে বিএনপির উন্নয়নকাজের প্রশংসা করেন।
লিখিত বক্তব্য সিইসি বলেন, জিয়াউর রহমানের সময় এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৯১ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০০১ সালের তাঁর নেতৃত্বে আবারও সরকার গঠন করেন। সিইসি বলেন, আজকের সংলাপে আসা অনেকে মন্ত্রী ছিলেন। তিনি তাদের অধীনে চাকরি করেছেন। তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে প্রকৃত নতুন ধারার প্রবর্তন করেছে।
বিএনপি সরকারের থাকার সময় নেওয়া উন্নয়নকাজের কথার বলতে গিয়ে নুরুল হুদা বলেন, দলটি প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় করেছে, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ দিয়েছে। র্যাব, দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, আইন কমিশন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর করেছে। সিইসি বলেন, এই সংলাপে বিএনপিই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।
পরে সংলাপ শেষে বেরিয়ে নির্বাচন ও সংকট মোকাবিলায় বিএনপি ‘কিছুটা আশাবাদী’ বলে সাংবাদিকদের বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনের খুব বেশি কিছু করার নেই। তারপরও এই সংলাপের পর বিএনপি কিছুটা আশাবাদী তো বটেই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ‘সংলাপে আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনও তাদের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেছে। তবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ আয়োজন ও সহায়ক সরকারের যে দাবির কথা তাদের বলেছি, সেই ব্যাপারে কমিশন তাদের ক্ষমতার মধ্য থেকে কিছু করার চেষ্টা করবে বলে আমাদের জানিয়েছেন।’
সংলাপে বিএনপি ২০ দফা দাবি তুলে ধরেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নির্বাচনের জন্য সহায়ক সরকার নিশ্চিত করতে হবে, ভোটের আগে অবশ্যই সংসদ ভেঙে দিতে হবে, বিরোধী দলের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে তা প্রত্যাহার করতে হবে, গুম-খুন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে, ই-ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার করা যাবে না, সব রাজনৈতিক দলকে এখন থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে, সব দলের জন্য এখন থেকে সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) তৈরি করতে হবে, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের অন্তত সাত দিন আগে থেকে মোতায়েন করতে হবে, সিইসি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিলে হবে না পুরো ইসি বসে সিদ্ধান্ত নেবে এবং ৫৭ ধারা বাতিল করতে হবে।
সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, জমিরউদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।