স্টাফ রিপোর্টার-সোনাগাজীর সুজাপুরে খাল খননের নামে এক্সেভেটর দিয়ে বসতঘর গুড়িয়ে দিয়েছে ইকবাল হোসেন রুমন নামে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা। বাধা দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হারুনুর রশিদের শিশু সন্তানকে লাথি মেরে খালে ফেলে দেয় রুমন। এসময় ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারিতে এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠলেও প্রাণভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। বসতঘরটি না ভাঙ্গার জন্য উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সভাপতি আজিজুল হক হিরণ এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল আরেফিনসহ সরকার দলীয় নেতারা বারবার বললেও রুমন কাউকে পরোয়া করেনি। অবশ্য রুমন ঘটনার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন।
সূত্র জানায়, সদর ইউনিয়নের পূর্ব সুজাপুর গ্রামে সরকারি উদ্যোগে খাল-খনন কর্মসূচীর আওতায় নয়ঠালিয়া খাল পুন:খননের কাজ শুরু হয়। ওই এলাকার মৃত জাকির আহম্মদের ছেলে হারুনুর রশিদের অভিযোগ, ঠিকাদার ও তার লোকজন সি.এস/ দিয়ারা এবং বি.এস জরিপের সরকারী নকশায় খালের প্রস্থ নির্ণয় না করে ব্যক্তি মালিকানা জায়গার উপর দিয়ে ড্রেজার মেশিন দিয়ে খাল পুন:খনন কাজ শুরু করে। হারুনের বাড়ি ভেঙ্গে নিকটস্থ বাড়ির চলাচলের সুবিধা করে দিতে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয় রুমন। একপর্যায়ে বাড়ি রক্ষা করতে হলে হারুনের কাছেও রুমন ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে বলে তার অভিযোগ। তিনি গত ২৫ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সামছুল আরেফিনের সুপারিশ নিয়ে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। এর আগে তিনি উল্লেখিত বিষয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
এদিকে দাবীকৃত চাঁদা না দেয়ায় গত শনিবার দুপুরে এক্সেভেটর দিয়ে বসতঘর ভাংচুর চালায়। বাধা দিতে এগিয়ে এলে তার ভাই মিজানুর রহমান ও স্ত্রী-সন্তানদের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। তাদের ভাংচুরে ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাড়ির সম্মুখস্ত স্থানে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার ইকবাল হোসেন রুমনকে প্রধান আসামী করে আরো ৪ জনের নাম উল্লেখ করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত হারুনুর রশিদ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনায় আদালতে মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করায় সন্ত্রাসীরা প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। তাদের অব্যাহত হুমকি-ধমকির মুখে ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন।
জানতে চাইলে স্থানীয় সদর ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল আরেফিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তিনি ঘর না ভাঙতে রুমনকে বারবার অনুরোধ করেন। এছাড়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক হিরণও রুমনকে হারুনের ঘরটি না ভাঙার জন্য অনুরোধ জানায়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী জাহিদ হোসেন খসরু জানান, আদালত অভিযোগটি গোয়েন্দা পুলিশের ওসিকে তদন্তের আদেশ দেন।
ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন রুমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, উল্লেখিত খাল খনন কাজের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এক্সেভেটর মেশিন ভাড়া দিয়েছি।
স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজে নিয়োজিত মিজানুর রহমান মিলন জানান, এক্সেভেটর মেশিনটি খালে নেয়ার জায়গা না থাকায় ঘরের কার্নিশ ভাঙ্গা হয়েছে। এছাড়া ঘরের একটি অংশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নকশায় রয়েছে বলে তার দাবী।