সোনাগাজী প্রতিনিধি- সোনাগাজীতে সম্পত্তির লোভ দেখিয়ে গৃহবধূ শাহানাকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্বামী শেখ সিরাজ উদ দৌলা। তাকে গলা কেটে হত্যা করার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেফতার গৃহকর্মীর নাতি আবদুল্ল্যাহ রানা (২২)। রবিবার সন্ধ্যায় ফেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক দেলোয়ার হোসেনের আদালতে রানার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
আবদুল্ল্যাহ রানা জবানবন্দি দেওয়ার সময় আদালতকে জানায়, তিনি দীর্ঘ ১৮বছর যাবত সোনাগাজী পৌরসভা এলাকার চর গণেশ গ্রামের শেখ সিরাজ উদ দৌলার বাড়িতে থেকে কাজকর্ম করে আসছেন। সে সুবাধে তিনি শেখ সিরাজের স্ত্রী শাহানা আক্তারকে মা বলে ডাকতেন।
গত ৪ মাস আগে শাহানা আক্তার অসুস্থ্য হয়ে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য বোনের বাসায় চলে যান। তখন তার স্বামী শেখ সিরাজ উদ দৌলা বাড়ি থেকে প্রায় সময় মুঠোফোনে কথা বলার সময় স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করতেন।
গত কিছু দিন আগে রানার নানী খতিজা বেগম ও তাকে শেখ সিরাজ উদ দৌলা ডেকে তাদেরকে কিছু জমি দেওয়ার কথা বলে। এসময় শেখ সিরাজ তাদেরকে জমি পেতে হলে শাহানাকে মেরে ফেলতে হবে বলে শর্ত জুড়ে দেয়। তখন তারা রাজি হয়। ৯ জানুয়ারী শেখ সিরাজ ঢাকায় শাহানাকে দেখতে যায়। তখনও শাহানা শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য ছিল। ১৫ জানুয়ারী তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করাবে বলে ঢাকা থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে সিরাজ। অসুস্থ্য শাহানাকে বাড়িতে নিয়ে এসে তাকে হত্যার জন্য শেখ সিরাজ তাদের(নানী ও নাতী)সঙ্গে একাধিকবার পরামর্শ করে।
সর্বশেষ শুক্রবার সকালে আবারও তিনজন এক হয়ে বাড়ির পাশে দোকানের পেছনে একত্রিত হয়ে শাহানাকে চুড়ান্তভাবে হত্যার পরিকল্পনা শেষ করে শেখ সিরাজ বাজারে যায়। কিছুক্ষণ পর বাজার থেকে ঘুমের ওষধ নিয়ে বাড়ি এসে গৃহকর্মী খতিজাকে গরম পানির সঙ্গে ঘুমের ওষধ মিশিয়ে শাহানাকে খাওয়াতে বলে। ওষধ মেশানো পানি খেয়ে শাহানা মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে নিজের শয়ন কক্ষে য়ায়। এসময় তিনি (আবদুল্ল্যাহ রানা) তাকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে খাটের মধ্যে ফেলে বুকের ওপর বসে মূখ চেপে ধরে ও হাত গুলো ধরে রাখি। তার নানী খতিজা বেগম পা চেপে ধরে রাখে। এসময় শেখ সিরাজ প্রথমে ঘরে থাকা একটি চোরা দিয়ে শাহানার গলায় ২টি আঘাত করে। এতে বেশি কাটা না যাওয়ায় ঘর থেকে দা এনে দা দিয়ে গলা কেটে দেয়। তখন তিনি (আবদুল্ল্যাহ রানা) কোল বালিশ দিয়ে শাহানার মুখ ও গলা চেপে ধরে রাখে যাতে করে রক্ত তাদের গায়ে না লাগে। তাঁর পরও রক্ত এসে তাঁর ও শেখ সিরাজের গায়ে থাকা শার্ট ও পাঞ্জাবীতে লেগে যায়। পরে তাঁরা রক্ত মাখা চোরা ও দা শাহানার বুকের ওপর রেখে পুকুর থেকে হাত মুখ ধুয়ে দোকানে চলে যায়। আবদুল্ল্যাহ রানা তাঁর গায়ের জামা ও শেখ সিরাজের পাঞ্জাবী নিয়ে বাড়ির পাশের খালে ফেলে দিয়ে খেলতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে গিয়ে শেখ সিরাজ তাদেরকে কেউ জিজ্ঞাসা করলে শাহানা আক্তার আত্মহত্যা করেছে এ কথা বলতে বলে। পরে তাঁরা শাহানাকে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ঘটনার পর পর খবর পেয়ে পুলিশ গৃহবধুর স্বামী শেখ সিরাজ উদ দৌলা, গৃহকর্মী খতিজা বেগম, খতিজার নাতি আবদুল্ল্যাহ রানা ও প্রতিবেশি আফলাজ হোসেনকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল্ল্যাহ রানা হত্যার সঙ্গে তিন জনের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
তিনি বলেন, ঘটনার তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় শেখ সিরাজের ভাই শেখ সেলিম বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা দুবৃর্ত্তদেরকে আসামী করে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। আদালতে ১৬৪ধারায় জবানবন্দি দেওয়া আবদুল্ল্যাহ রানাসহ আটককৃত তিনজনকে হত্যার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোসহ রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
তিনি বলেন, ঘটনার তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় শেখ সিরাজের ভাই শেখ সেলিম বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা দুবৃর্ত্তদেরকে আসামী করে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। আদালতে ১৬৪ধারায় জবানবন্দি দেওয়া আবদুল্ল্যাহ রানাসহ আটককৃত তিনজনকে হত্যার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোসহ রিমান্ডের আবেদন করা হবে।