ফেনী
সোমবার, ৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ২:১২
, ৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
শিরোনাম:
আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিমের দুর্নীতির তদন্ত শুরু ফেনীতে দুর্গাপূজায় নাশকতা ঠেকাতে মণ্ডপ পাহারায় থাকবে বিএনপি নেতাকর্মীরা দুই বছর ধরে প্রবাসী হয়েও উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক পদে বহাল! ধর্মপুর এডুকেশনাল এস্টেটের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বন্যা প্রতিকারে ৮ দফা দাবি জানিয়ে ফেনীতে এবি পার্টির মানববন্ধন ফাজিলপুরে জামায়াতের ইউনিট সভাপতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর রোগমুক্তি কামনায় ফেনীতে দোয়া মাহফিল ফেনীতে অসহায়দের মাঝে জামায়াতের অটোরিকশা-নগদ অর্থ বিতরণ  ৫৩ বছরেও তিস্তা নদীর চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারেনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ অর্থ সহায়তা তুলে দিলেন ছাত্রদল নেতা 

স্নাতক পাশ করে ছিনতাই পেশায়!

 

কথা ডেস্ক-চাকরির অভাবে নয়, স্বভাব নষ্টের কারণে স্নাতক পাশ করেও পেশা হিসেবে বেছে নিল ছিনতাই। এক সময় নিজে একাই করত ছিনতাই। এখন ‘হামকা গ্রুপ’ নামে ছিনতাইকারী চক্র গড়ে তুলে রীতিমত চট্টগ্রামের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেন গোলাম সরওয়ার মিলন (৪২)। শুধু তাই নয়, সাইলেন্ট কিলার হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ প্রশাসনের বুকে কাঁপনও ধরিয়ে দিয়েছে মিলন। যাকে গত শনিবার দিনগত রাত ১২ টায় নগরীর ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট পোস্তারপাড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে একটি এক নলা বন্দুক ও ৫ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করে পুলিশ।
মিলন ডবলমুরিং থানার পাশে ভাড়া বাসা নিয়ে আ্ততগোপনে ছিলেন বলে জানান ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম।

মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, গত ৮-১০ বছর ধরে চট্টগ্রাম মহানগরে যেসব ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে তার সবই ঘটিয়েছে মিলনের নেতৃত্বাধীন হামকা গ্রুপের সদস্যরা। এ গ্রুপে রয়েছে ২০-২৫ জন দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী কিলার। যারা নিরবে খুন করে টাকা-পয়সা, মুঠোফোন, মানিব্যাগ ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়ায় বেশ পটু। যাদেরকে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতেন মিলন। গ্রেপ্তারের পর মিলন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে এসব বিষয়ে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম।

মহিউদ্দিন সেলিম আরও বলেন, মিলন সাধারণ কোনো ছিনতাইকারী নয়। সে একজন শিক্ষিত ছিনতাইকারী। ওমরগণি এমইএস কলেজ থেকে ১৯৯৮ সালে স্নাতকপাশ করেন তিনি। সে সময় একজন ছাত্রনেতাও ছিলেন। যোগ দেন শীর্ষ সন্ত্রাসী কানা বক্করের গ্রুপে। এক পর্যায়ে নানা বিষয়ে বক্করের সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হলে সন্ত্রাসীদের নিয়ে আলাদা দল গঠন করে মিলন। পরে কোন্দলের কারণে ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে গোলাম সরওয়ার মিলন। ১৯৯৯ সাল থেকে সে নিজেই চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় একা ছিনতাই শুরু করে। পরে মোগলটুলি এলাকার দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী খোরশেদ ও কানা মান্নানের দলে ভিড়েন। তাদের কাছ থেকেই মূলত ছিনতাইয়ের দীক্ষা নেন মিলন। এরপর ছিনতাইয়ের পাশাপাশি খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনায় স¤পৃক্ত হন তিনি। ২০০২ সালে শুরুর দিকে এ দলে ছিল ১২ জন সদস্য। যারা তখন থেকে নগরীর বেশিরভাগ অংশের অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। ২০০৩ সালে পাঁচলাইশ থানার একটি অস্ত্র মামলায় মিলন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এ মামলায় খালাস পেয়ে ২০০৪ সালে জেল থেকে বেরিয়ে আসে। ২০০৬ সালে মিলনসহ কয়েকজন ছিনতাইকারী মিলে হামকা গ্রুপ গঠন করে। এরপর থেকে নগরবাসীর আতঙ্কে পরিণত হয় এ ছিনতাই চক্র। এ গ্রুপের হাতে চট্টগ্রামের মেধাবী ছাত্র শাওন, বিআরটিএ কর্মকর্তা প্রীতি রঞ্জন চাকমা, আইনজীবী দ্বীন মোহাম্মদসহ প্রায় ১১ জন সাইলেন্ট কিলিংয়ের শিকার হন। প্রথম দিকে নান্টু হামকা গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল। ২০১১ সালে নান্টু গ্রেপ্তার হলে মিলন গ্রুপটির একাংশের নেতৃত্বে আসে। ২০০৮ সালে ছিনতাইকালে পুলিশের গুলিতে আহত অবস্থায় ধরা পড়ে। ২০১০ সালে জামিনে বেরিয়ে আসার পর থেকে অপরাধ কর্মকান্ডে সরাসরি অংশ নিতে পারে না মিলন। পায়ে রড লাগানোর কারণে তার হাঁটতে কষ্ট হয়। তবে তার নির্দেশে অনুসারীরা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে ছিনতাই ও নানা অপরাধ করে। ২০১২ সালের ১লা এপ্রিল হালিশহর থানা পুলিশের হাতে আবারও গ্রেপ্তার হয় মিলন। এর কিছুদিন পর জেল থেকে বেরিয়ে ফের অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। ২০১৪ সালের ৩০শে জুন সদরঘাট থানার মোগলটুলি বাজার থেকে সন্ত্রাসী কানা মান্নানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নগরীর কমার্স কলেজ কেন্দ্রিক এ সন্ত্রাসীর শরীর থেকে হাতের কব্জি কেটে বিচ্ছিন্ন করে নৃশংস কায়দায় তাকে খুন করা হয়। এ ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কানা মান্নানকে খুন করে গোলাম সরওয়ার মিলন। ডবলমুরিং থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, হামকা গ্রুপের একাংশ মিলনের নেতৃত্বে সাইলেন্ট কিলিং করে পুরো নগরীকে আতঙ্কের নগরীতে পরিণত করেছিল। বর্তমানে মিলনের গ্রুপে ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য আছে। সে বিভিন্ন ছিনতাইকারী গ্রুপগুলোকে অস্ত্র সরবরাহসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা করে। বেশকিছু খুনের ঘটনায়ও সে জড়িত, টাকার বিনিময়ে সে এসব খুনের ঘটনায় ভূমিকা রাখে।

ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, মিলন জানিয়েছে তার বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা রয়েছে। আমরা আপাতত ৬টি মামলার তথ্য পেয়েছি। এরমধ্যে একটি মামলায় তার ১০ বছর সাজা রয়েছে। তাকে রোববার আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমান তিনদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

 

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo