ডা: শুভাগত চৌধুরী: কে না ভালোবাসে সুন্দর হাসি! হাসিতে ফাঁক হয়ে যাওয়া ঠোঁটের পরিসরে দু’সারি শুভ্র সুন্দর দাঁতের ঝিলিক। দাঁতের ব্যথা বড় ব্যথা। সহ্য করা যায় না। কোমল পানীয় পানে দাঁতে শিরশির করে ওঠা। মাড়ি পাতলা হয়ে যাওয়া। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের জেরিয়াট্রিকস বিভাগের প্রধান ডা: ববার্ট পামার বলেন, বয়স একটি বড় কারণ। দাঁত ও মাড়ি ক্ষয়ে যায় আর বয়স ৫০-৬০ হলে সমস্যার হয় শুরু।
সুখবর হলো : ডেন্টাল রুটিনে সামান্য কিছু পরিবর্তনে সুফল অবশ্য। সুস্থ দাঁতের জন্য টিপস। সতর্কসঙ্কেত চেনা বা ব্যবস্থা নেয়া।
সতর্কসঙ্কেত : দাঁত কনকন বা শিরশির করে ওঠা
ফ্লুরিডেটেড পানি তো পাওয়া গেলো না সবসময়, তাই সুবমা যখন বেড়ে উঠেছিল তখন ফ্লুরাইড দিয়ে কুলি তো ছিল না। আমাদের তো সবার তেমন সুরক্ষা নেই, আমাদের অনেকের দাঁতে ফিলিং, ৫০ ঊর্ধ্ব মানুষের সেসব স্থানে চির দেখা যায়। একটি দাঁত যখন মেরামত করা হয় তখন আসল দাঁতের মতো এটি তত মজবুত হয় না। তবে বয়সের সাথে অনেক দাঁতে চির দেখা যায়। সেখানে জীবাণু বাসা বাঁধে।
মাড়ি রেখাতেও টিস্যু বয়সের সাথে সরে যায়। আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের কিমবাবলি হামস ডিডিএস বলেন, ‘যেহেতু স্থানটি দাঁতের স্নায়ুর খুব কাছে সেজন্য সেখানে ক্ষয় দ্রুত গুরুতর হয়ে ওঠে।’
তাই দাঁত সামান্য কনকন করলে বা শিরশির করলে ডেনটিস্টকে দেখাবেন চটজলদি। দাঁতে চির দেখার জন্য এক্সরে করতে হতে পারে। এরপর একে মসৃণ করে দেয়া বা ফিল করে দেয়া।
বড় চির থাকলে পুরো ক্রাউন বা ক্যাপ প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিরোধ করবেন কিভাবে?
উপায় হলো দাঁত ব্রাশ করা, ফ্লস করা এবং ফ্লুরাইড কুলি করা। এলকোহল কুলি বরং ক্ষতিকর।
সতর্কসঙ্কেত
সংবেদনশীল দাঁত এবং ব্যথায় কাতর মাড়ি
যাদের দাঁত খুব সংবেদনশীল, এর পেছনে কারণ হতে পারে যে পেরিওডোন্টাল রোগ মাড়ি ক্ষয় করে ফেলেছে। এই ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগটি শুরু হয় উপসর্গ ছাড়াই, আর বড় রকমের ক্ষতি হওয়ার আগে অনেকেই বুঝতেই পারেন না যে রোগটি অনেকদূর এগিয়েছে। ৫৫ ঊর্ধ্ব অর্ধেকের বেশি লোক মৃদু ধরনের এ রোগের শিকার হয়েই থাকেন।
ব্যাকটেরিয়া দাঁতের মূলে গজাতে থাকলে, ব্রাশের সময় সামান্য রক্তক্ষরণ চোখে ধরা পড়ে। তবে অণুজীবগুলো সংখ্যায় বাড়তে থাকলে মাড়ির টিস্যু আলগা হতে থাকে, নিচের লিগামেন্ট ক্ষয় হতে থাকে, যে হাড়গুলো দাঁতকে যথাস্থানে রাখে সেগুলোও ক্ষয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়া চলে যেতে পারে রক্তে, বাড়ে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি।
আগাম মাড়ি রোগ বোধ করা এবং সুস্থ দাঁত পেতে হলে প্রয়োজন হবে পেশাদারি দাঁতের গভীর ক্লিনিং, দৈনিক এন্টিবায়োটিক কুলি, মাঝে মাঝে ডেনটিস্ট দর্শন (তিন মাসে একবার) ফ্লসিং ভালো করে করা। নরম, গোলাকার কুচিসহ ব্রাশ ব্যবহার করা (soft brush) সেনসোডাইন পেস্ট সংবেদনশীল দাঁতের জন্য।
সতর্কসঙ্কেত : শুকিয়ে যাওয়া লালারস সুস্থ দাঁতের জাদুকরী সালসা বটে। এটি ব্যাকটেরিয়ানাশক অম্ল প্রশমক, খনিজ উপাদানে ভরপুর যা এনামেলকে মজবুত করে। তবে ৫০ বছর বয়স ২৫% মহিলার লালারস কম বের হয়, তাই মুখে দুর্গন্ধ হয় অনেকের।
জিব বা ঠোঁট প্রায়ই শুকিয়ে গেলে, ডাক্তারকে বলুন। অনেক ওষুধ খেলে মুখ শুকিয়ে যায়। বিষন্নতারোধক ওষুধ, রক্তচাপের ওষুধ, মূত্রনালির ওষুধ অনেক নিলে মুখ শুকাতে পারে। মুখ সামান্য শুকানো, মুখে বদ গন্ধ হলে পামাবের পরামর্শ হলো- সুগারহীন শক্ত ক্যানডি বা গাম জাইলিটল দিয়ে মিষ্ট করা। প্রতিদিন জিব পরিষ্কার করা ভালো। উপর নিচ, পেছনে জিবকে পরিষ্কার করতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক ও ডিরেক্টর, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম, ঢাকা।
ক’দিন ধরে লাবণী কলেজে যাচ্ছে না। তার বান্ধবীরা বাসায় ফোন করে জানতে পারল তার দাঁতে ব্যথা হচ্ছে এবং মুখ ফুলে খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মুখ খুলতে পারছে না।
আমাদের দেশে সাধারণত ১৮-২৫ বছরের যুবক-যুবতীরা এ জাতীয় সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। আক্কেল দাঁতের এই সমস্যাকে পেরিকরোনাইটিস বলা হয়। সাধারণত দাঁত গজানোর সময় বা আংশিক গজানো অবস্থায় দাঁতের উপরস্থ বা পার্শ্বস্থ টিস্যুর সংক্রমিত অংশ পেরিকরোনাইটিস নামে পরিচিত।
এ রোগের লক্ষণ
১. আপনার বয়স যদি হয় ১৮-৩০ বছর।
২. কয়েকদিন ধরে নিচের চোয়ালের সর্বশেষ প্রান্তে চাপা চাপা ব্যথা অনুভব করেন।
৩. খাবার সময় বা দাঁত ব্রাশ করার সময় ওই স্থানে ব্যথা অনুভব হচ্ছে।
৪. মুখে দুর্গন্ধ হচ্ছে।
৫. ধীরে ধীরে মুখ ফুলে যাচ্ছে এবং সামান্য চাপ লাগলে পুঁজ বেরুচ্ছে।
৬. হা করতে কষ্ট হচ্ছে, কোনো কিছু চিবিয়ে খেতে পারছেন না। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, দুর্বল অনুভব করছেন।
চিকিৎসা
এ ক্ষেত্রে ওই দাঁতের এক্স-রে করতে হবে। এতে যদি দেখা যায় দাঁতের গতি ভালো তাহলে দাঁতের উপরস্থ অপারকুলাম টিস্যুগুলো ছোট একটি অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করলে দাঁতটি স্বাভাবিক গতিতে গজাতে পারবে। কিন্তু যদি দেখা যায়, দাঁতটির অবস্থান স্বাভাবিক নয় বা হাড়ের মধ্যে আছে; টিস্যু অপসারণ করলেও স্বাভাবিকভাবে দাঁতটি গজাবে না সে ক্ষেত্রে দাঁত তুলে ফেলাই উত্তম। অনেক সময় দেখা যায় ক্যারিজ হয়ে দাঁতের উপরের অংশ একবারেই নষ্ট হয়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে আক্রান্ত দাঁতটি তুলে ফেলাই ভালো, তা না হলে ভবিষ্যতে পাশের ভালো দাঁতটি আক্রান্ত হতে পারে।
অনেক সময় দেখা যায় দাঁতের অবস্থান ভালো এবং অপারকুলাম টিস্যু কিছুদিন পর এমনিতে মিলিয়ে যাবে সে ক্ষেত্রে মুখ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলেই চলবে, কোনো অপারেশনের দরকার নেই।
এ রোগের জটিলতা :
– পেরিকরোনাইটিস বারবার হতে পারে।
– চিকিৎসায় দেরি হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে মুখমণ্ডলের অন্যান্য দিক ও গলার দিকও আক্রান্ত হতে পারে, যা সেলুলাইটিস নামে পরিচিত।
– অসটিওমাইলাইটিস হতে পারে।
– আক্কেল দাঁতের সামনের দাঁতটি ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো আংশিক দেখা দিলেই আপনার উচিত হবে অভিজ্ঞ মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া। তবে এর আগে ঘরে বসেই আপনি পরিচর্যার ভার কিছুটা নিতে পারেন। যেমন-
– এ অবস্থায় প্রতিবার খাবার পর হালকা লবণ-গরম পানি দেয় কুলি করতে পারেন।
– কিছুটা ব্যথা থাকলেও একটু কষ্ট করে দাঁত ব্রাশ করে মুখ জীবাণুমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে পারেন।
– এ ছাড়াও ভালো কোনো মাউথওয়াশ দিয়ে কুলি করতে পারেন।
এ রোগের কারণ :
– আক্কেল দাঁত ওঠার সময় দাঁতের উপরস্থ টিস্যুগুলো স্বাভাবিক নিয়মে ক্ষয়প্রাপ্ত না হলে বিপরীতে অবস্থিত দাঁতের চাপে উত্তোলিত ওই দাঁতের উপরস্থ টিস্যুগুলোর উপর বারবার কামড় পড়লে অথবা আঘাত লাগলে।
– অনেক সময় দেখা যায়, আক্কেল দাঁতটি উঠতে পারছে না কিন্তু তার উপর যে টিস্যুদ্বারা দাঁতটি ঢেকে রয়েছে সেখানে খাবার জমে। যখন তা পরিষ্কার করা হয় না ফলে তা পচন ধরে ইনফেকশন হয়ে যায় এবং তখন প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।
পেরিকরোনাইটিস দাঁতের বৃদ্ধির সময় হলে তাই এর জটিলতা এড়াতে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া একে অবহেলা করবেন না। তবে অব্যশই অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের সহায়তায় চিকিৎসা করাই উত্তম। বছরে অন্তত দু’বার আপনার ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিন।
লেখিকা : ডাইরেক্টর ও ডেন্টাল সার্জন, নাহিদ ডেন্টাল কেয়ার,
১১৭/১, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।