ফেনী
বুধবার, ২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১২:২৯
, ৬ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

করোনায় ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি

সারা পৃথিবী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারীতে আক্রান্ত বিপর্যস্ত।এটি সার্স কোভ-২ ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত এবং মাত্মক ছোঁয়াচে রোগ।

২২ এপ্রিল এ লেখা তৈরি করা পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে বিশ্বের ২১০টি দেশ বা অঞ্চলে মোট ২৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৭ জন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭৪ জন।
মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৩৩৮২ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করেছে সরকার, আর ১১০ জন মারা গেছেন বলে জানানো হয়েছে।
যে কোনো মানুষই করোনাভাইরাসের শিকার হতে পারেন; তবে ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা লোকদের এ ঝুঁকি অনেক গুণ বেশি। হার্ট ফেইলর, কিডনি ফেইলর, হাঁপানি ইত্যাদিতে যারা ভুগছেন, তারাও অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে চলছেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, রোগ হলে তার সঙ্গে লড়াই করার সক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে একইসঙ্গে বসবাস করা অন্যান্য মানুষের তুলনায় ডায়াবেটিস থাকলে আপনি চট করেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন। যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি, তারা করোনাভাইরাসের সহজ শিকার হতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণের মাত্রা (এইচবিএওয়ানসি) সঠিকভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বোঝাতে সহায়তা করতে পারে। অর্থাৎ যার ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ যত খারাপ (এইচবিএওয়ানসি যত বেশি) তার রোগে ভোগার আশঙ্কা তত বেশি।
বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি (তাদের সবাই ভাইরাস সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকিতে)। আবার যারা অনেক বছর ধরে ডায়াবেটিস নিয়েই বেঁচে আছেন, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও পর্যুদস্ত। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছেন যেসব ডায়াবেটিস রোগীর কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, একইসঙ্গে হৃদযন্ত্রও যথেষ্ট রক্ত পরিসঞ্চালনে ব্যর্থ এবং রক্তের গ্লুকোজ বেশি।
বরাবরের মতোই সব ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে আসা অতীব জরুরি এবং যারা মুখে সেবনের ওষুধ নির্ভরতা কমিয়ে ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা নেবেন, তারা বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন।
করোনাভাইরাস মহামারীতে ডায়াবেটিস রোগীর আশু করণীয় হল- ১. করোনাভাইরাস সংক্রমণের সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলেই সরকার-নির্দেশিত কেন্দ্রগুলোতে রোগ শনাক্তকরণ এবং পরবর্তী সেবার জন্য দ্রুত চলে যাওয়া।
২. কালক্ষেপণ না করে অতি সত্বর রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে (এইচবিএওয়ানসি <৭ শতাংশ) যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া।
৩. যদি উপসর্গ থেকে থাকে (জ্বর, কাশি) তাহলে নিজেকে নিজে আলাদা করাই সবচেয়ে ভালো। শরীর বেশি খারাপ না হলে হাসপাতালে না যাওয়াই ভালো। শতাংশ মানুষ কোনো হাসপাতালে ভর্তি ছাড়াই ভালো হয়ে যাবে। ১৪ দিন নিজেকে আইসোলেট করে রাখবেন।
৪. বয়স্ক লোকজনের মধ্যে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। বয়স্ক কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত, কারণ তাদের অনেকেরই আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে।
৫. স্যানিটাইজার ভালো হলেও বাজারের অধিকাংশ স্যানিটাইজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যালকোহল নেই (পান করার অ্যালকোহল নয়)। সাবান দিয়ে হাত ধুবেন, বেশি বেশি ধুবেন। অতিরিক্ত করতে চাইলে বরং হেক্সাসল টাইপের কিছু ব্যবহার করুন। ঘরের বাইরে স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেও মুখে হাত দেবেন না, যতক্ষণ না কোথাও গিয়ে হাত ধুতে পারবেন।
৬. বিদেশ ফেরত বন্ধু বা আত্মীয়কে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করে দিন। ভালো হলে ভালো। কোনো রকম কাশি/জ্বর বা গলাব্যথা হলে গৃহে বিচ্ছিন্ন হয়ে থেকে সরকারি হটলাইনে যোগাযোগ করতে হবে। প্রয়োজন সাপেক্ষে নির্ধারিত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
৭. বড় সমাবেশ/লোক সমাগম থেকে দূরে থাকা বাধ্যতামূলক। কোনো কনফারেন্স বা পার্টিতে যাবেন না।
৮. বাসায় বা ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন।

ডা. শাহজাদা সেলিম : সহযোগী অধ্যাপক, অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
selimshahjada@gmail.com

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!