বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রশ্রয়ে ফেনীতে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে কিশোর অপরাধ। গ্রাম ও শহরের পাড়া মহল্লায় কিশোর গ্যাং এর ছড়াছড়িতে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও সচেতন মহল। সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে বিরোধে ছুরিকাঘাত হয়ে ১৫ দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় রোববার মারা যায় ফেনীর দাগনভূঞার উপজেলার এয়ার নুরুল্লাহ গ্রামের সোলায়মানের ছেলে সজিব (১৫)।
জানা গেছে, ঈদুল আজহার আগের দিন ফেনীর দাগনভুইয়া উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের ইয়ার নুরুল্লাহপুর ও সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের রতনপুরের মধ্যে একটি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়। এ খেলাকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানও হয়ে যায়। তবে ঈদের আগের দিন শনিবার (৯ জুলাই) সকালে সজিব ও তৌহিদ রতনপুরে কাজ করতে এলে স্থানীয় রতনপুর গ্রামের কিশোর গ্যাংয়ের ১০-১২ জন সদস্য সজিব ও তৌহিদকে ছুরিকাঘাত করে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মারাত্মক আহত অবস্থায় সজিবকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে অর্থাভাবে তার চিকিৎসা ব্যাহত হয়। পরে ইয়ার নুরুল্লাপুর গ্রামবাসী চাঁদা তুলে তার পাশে দাঁড়ায়।হাসপাতালে ১৫ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় সজিব রোববার মারা যায়। এ ঘটনায় দুইজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
জানা গেছে, ফেনী শহরের বিভিন্ন পাড়া কেন্দ্রিক সক্রিয় রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক গ্রুপ। এরা শহরের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ পডুয়া শিক্ষার্থী। এদের রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। স্কুল ব্যাগে থাকে চাপাতি, পকেটে থাকে ক্ষুর। আধিপত্য বিস্তার, ছোট ভাই, বড় ভাই এবং প্রেম সংক্রান্ত বিষয়সহ ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি হলেই এরা মারামারিতে লিপ্ত হয়। এক গ্রুপের লোককে মারধর করার অপরাধে অপর গ্রুপের লোকজন প্রতিশোধ নিতে কালক্ষেপন করে না। আর এসব ঘটনায় কয়েকটি মামলা হলেও রাজনৈতিক পরিচয়ের কারনে মুল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। অনেক সময় বড় ভাইদের তদবিরের কারনে এসব মামলার তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, শহরের শান্তি কোম্পানি রোড,নাজির রোড, মিজান রোড,একাডেমী,সালাহ উদ্দিন মোড়, পাঠানবাড়ি , শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক,পুলিশ কোয়ার্টার,রামপুর,পশ্চিম উকিল পাড়া, সেন্ট্রাল স্কুল, ডাক্তারপাড়া,পৌরসভা সংলগ্ন ও মাস্টারপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০টি কিশোর গ্যাং গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিশোররা এসব এলাকাভিত্তিক গ্যাং বানিয়ে আধিপত্য বিস্তার করে। এইসব গ্রুপের লিড দেয় এলাকার বড় ভাইয়েরা। বড় ভাইয়েরা তাদেরকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে বিদায় মামলা হামলার পর শেল্টার দিয়ে থাকে। ফলে এসব অপরাধ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গত ৫ বছরে ফেনী শহরে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টি মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অনেকই ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। ছোটখাট বিষয় নিয়ে দ্বন্দের পর প্রকাশ্যে ও ফেসবুকসহ নানাভাবে হুমকি দেয়ার পরও প্রশাসনিক কোন এ্যাকশন না থাকায় বিষয়গুলো সংঘর্ষে রুপ নেয়। এর আগে কিশোর গ্যাংয়ের কারণে নাসির মেমোরিয়াল কলেজের ছাত্র রিপন প্রান হারায়।
ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মাশকুর রহমান পিপিএম জানান, কিশোর অপরাধ দমনে ছাত্র ও অভিভাবকদের সচেতন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।