ফেনী
বুধবার, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৮:১৫
, ১৪ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ফের মাঠে গড়াবে যুগপৎ কর্মসূচি

এক দফার প্রস্তুতি বিরোধীদের

ঈদের বিরতি শেষে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপি ও এর সাথে যুক্ত বিভিন্ন দল ও জোট। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধী দলগুলো নিজ নিজ প্লাটফর্ম থেকে এক দফার আন্দোলন ঘোষণা দেয়ার পরিকল্পনা করছে। একইসাথে তারা রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখাও ঘোষণা করবে। এরপরপরই এক দফা দাবিতে ফের মাঠে গড়াতে পারে যুগপৎ কর্মসূচি।

জানা গেছে, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার দাবিই এক দফার মূল বিষয়। তবে এর সাথে আরো কয়েকটি দাবিও যুক্ত থাকবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতারভাবে এই আন্দোলন চলবে। শোকের মাস আগস্টেও এবার কর্মসূচি থাকবে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ঈদুল আজহাই ছিল সর্বশেষ ঈদ। তাই কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপি নেতারা এবার চূড়ান্ত আন্দোলনের বার্তা নিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকায় নেতাকর্মীদের সাথে ঈদ উদযাপন করেছেন। তারা নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করেছেন। এসব অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষও অংশগ্রহণ করেন। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের নির্দেশনা ও প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। বিএনপির দাবি, ঈদুল আজহাকে ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পেয়ে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত, যা ভবিষ্যৎ আন্দোলন সফলে সহায়ক হবে।

গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১০ দফার ভিত্তিতে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। ১৪ দফা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চও ওই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়। একপর্যায়ে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে একটি ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে কয়েক মাস ধরে চেষ্টার পরও কিছু বিষয় নিয়ে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা যায়নি। তবে এক দফা ঘোষণার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছান তারা। এমন প্রেক্ষাপটে ঈদুল আজহার আগে গত ২৬ জুন ধানমন্ডিতে এক নেতার বাসায় বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে এক দফা ঘোষণা এবং আন্দোলনের কর্মসূচির ধরন ও সময় নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া ওই বৈঠকে রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ রূপরেখা ঘোষণার ব্যাপারেও একমত হন নেতারা। আগামী ৫ জুলাই বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে।

এক দফা যৌথ ঘোষণায় থাকছে- বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও বর্তমান সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।

এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এক দফার ভিত্তিতে জুলাই মাসের শেষ দিকে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি শুরু হতে পারে। এর আগে মধ্য জুলাইয়ে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে। এক দফা মূলত কমন। এ ছাড়া রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা যৌথ ঘোষণাপত্রও থাকবে। দু’টি ঘোষণাই একত্রে দেয়া হতে পারে। একই দিনে যার যার মতো করে এই ঘোষণা দিতে পারে। তিনি বলেন, বিএনপির চার সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে আগস্ট মাসে পদযাত্রার কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। তাই আগস্ট মাসে যুগপতেরও কিছু কর্মসূচি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জাতীয় শোক দিবসের মর্যাদা অক্ষুণœ রেখেই সেই কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে।

গণতন্ত্র মঞ্চ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখার মতো গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকেও ‘সরকার ও শাসনব্যবস্থা বদলের’ ৩১ দফা রূপরেখা দেয়া হবে। বিএনপির ৩১ দফার সাথে গণতন্ত্র মঞ্চের ৩১ দফায় শব্দগত কিছু পরিবর্তন থাকলেও বেশির ভাগ দফায় মিল থাকবে। তবে উভয় পক্ষের ঘোষণাপত্রই হবে পৃথক। যেসব বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে যৌথ ঘোষণাপত্র হচ্ছে না, সেসব প্রসঙ্গ নিজ নিজ অংশে যোগ করা হবে; অর্থাৎ রাষ্ট্র মেরামতের প্রস্তাব বা প্রতিশ্রুতি তারা যার যার অবস্থান থেকে তুলে ধরবে। তবে কর্মসূচি হবে অভিন্ন এক দফার ভিত্তিতে যুগপৎ ধারায়।

ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত যুগপৎভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। ওই সময় পর্যন্ত গণমিছিল, গণ-অবস্থান, মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণসমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে ঈদুল ফিতরের পর থেকে বিএনপি এককভাবে কর্মসূচি করছে। আর বিএনপির কর্মসূচির মধ্যেই ঢাকাসহ দেশের ছয়টি বড় শহরে ১১ দফার ভিত্তিতে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করছে দলটির প্রধান তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ১৪ জুন চট্টগ্রামে কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারুণ্যের এ সমাবেশ শুরু হয়েছে। আগামী ২২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে। এ ছাড়া বিএনপির অপর চার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল ও মৎস্যজীবী দলের যৌথ উদ্যোগে ‘দেশ বাঁচাতে মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’ শীর্ষক কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ছয় বড় জেলায় এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

এ দিকে ঈদুল ফিতরের পর থেকে বিএনপির পাশাপাশি যুগপতের শরিক দল ও জোটগুলোও কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে। যুগপতের ধারায় দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি পালন করছে তারা। গত ৪ জুন থেকে ৬ জুন পর্যন্ত ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এ ছাড়া আগামী ১৯ থেকে ২১ জুলাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি রয়েছে ছয় দলীয় এই জোটের।

জানা গেছে, এক দফার ভিত্তিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপে আবার জনসম্পৃক্ত ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আসবে। কেন্দ্র ও তৃণমূলে ঘুরেফিরে এই কর্মসূচি পালিত হবে। আর আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে কর্মসূচি হবে ঢাকামুখী। মূলত জনসাধারণকে ব্যাপকহারে মাঠে নামিয়ে এসব কর্মসূচি সফল করতে চায় বিএনপি।

সরকার পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনের ধরন ভিন্ন রকম হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এক দফা দাবিতে আমরা আন্দোলন শুরু করব। গত আন্দোলনগুলোর চেয়ে এর ধরনও হবে একটু ভিন্ন এবং জনগণের সম্পৃক্ততাও বাড়বে। একটা ব্যাপারে আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, আমাদের এই আন্দোলন প্রথম থেকেই যেটা শুরু করেছি সেটা হচ্ছে যে, জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন। এই আন্দোলনে জনগণের অনেক বেশি সম্পৃক্ততা আসবে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে সরকার বাধ্য হবে নতি স্বীকার করে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo