ফেনী
বৃহস্পতিবার, ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সন্ধ্যা ৬:১৬
, ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম:

সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে গুজব

ঢাকা অফিসঃ গত কয়েকদিন ধরে চলা শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য। আর এসব গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। বিশেষ করে ফেসবুক।

গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগ করা হচ্ছে আন্দোলনের পক্ষ-বিপক্ষ সবার কাছ থেকে। পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিভিন্ন ছবি ফটোশপে ফেলে বানানো হচ্ছে অথবা পুরনো ছবি ব্যবহারের মাধ্যমে ভাইরাল করা হচ্ছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে প্লাকার্ড বা ব্যানারে প্রদর্শিত গালিসমৃদ্ধ বাক্যকে ফটোশপের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হচ্ছে। আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করতেই এমনটি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

শুক্রবার (০৩ আগস্ট) কে বা কারা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে এ ধরনের বেশকিছু গুজবকে ভাইরাল করেছে বলে কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত স্ক্রিনশটে দেখা যায়, ‘রোববার স্কুল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং যৌন নির্যাতন চালানোর পরিকল্পনা করছে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা।’ আর তাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে এ মেসেজে।

এ বিষয়ে ফেসবুকে কোনো প্রকার পোস্ট না দিয়ে সবাইকে মেসেঞ্জারে এটি ফরোয়ার্ড করার কথা বলা হয়েছে। ‘একজন সাংবাদিক এবং এক মন্ত্রীর খুব কাছের একজন’-এর বরাত দিয়ে মেসেঞ্জারে জানানো হচ্ছে, ‘আগামী রোববার মন্ত্রী এমপিরা ১০০০-১৫০০ বস্তির ছেলেকে রাস্তায় নামাবে। যাদের কাজ হবে মেয়েদের যৌন নির্যাতন করা, গাড়ি ভাঙা, গাড়িতে আগুন দেওয়া। আর এই ঘটনার প্রতিবাদে পুলিশ সাধারণ ছাত্রদের উপর আক্রমণ চালাবে। ফলাফল ছাত্রদের উপর সাধারণ মানুষ খেপবে।’

সেখানে অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, ‘অনুগ্রহপূর্বক নিউজ টি মেসেজের মাধ্যমে শেয়ার করবেন। কোনোপ্রকার পোষ্ট দিবেন না।’

অপর এক মেসেঞ্জার পোস্টে রামদা ছুরির ছবি দিয়ে বলা হয়, ‘নিজের রিস্কে আসিস, কালকে ছাত্রলীগ কোপাইব।’

অন্যদিকে, মিরপুরে এক সন্ধ্যার ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘রাস্তার ছেলেদের টাকা ও স্কুল কলেজের জামা দেয়া হচ্ছে। কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না, তাই না?’

‘এছাড়াও বস্তির ছেলেদের কাছ থেকে শুনলাম …., আমার বাসার পাশের বস্তিতে শুনলাম… বাসার পাশের বস্তিতে দেখলাম …..’ এমন আরো ১০টির বেশি গুজব মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়ছে।’

এ প্রসঙ্গে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ রকম কোনো হামলার পরিকল্পনার কথা নিতান্তই গুজব। তবে সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠী এই আন্দোলনকে ব্যবহার করে হামলা ও ভাঙচুরের মাধ্যমে নিজ স্বার্থ হাসিলের একটি অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’

এদিকে, পুলিশের মিডিয়া বিভাগ থেকে বলা হয়, মেসেজগুলো দেখলেই বোঝা যায় এটি গুজব। এখানে তথ্য সূত্র ‘একজন সাংবাদিক ও মন্ত্রীর কাছের লোক’ অথবা ‘আমার এক বোন’ বা ‘আমার কাজিন’ ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের এ ধরণের গুজব ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

এসব গুজব প্রসঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান দ্বীপ বলেন, ‘আমাদের মেসেঞ্জারে অনেক ভয়েস রেকর্ড আসছে। গ্রুপগুলোতেও অনেক ভুল তথ্য ভাইরাল করা হচ্ছে। আমরা জানি, আমাদের মধ্যে এসে এমন কিছু করার চেষ্টা করলে সবার আগে সেই ব্যক্তিরাই আমাদের কাছে ধরাশায়ী হবে। আমাদের এখানে অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই। আমাদের একটাই দাবি নিরাপদ সড়ক চাই।’

এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘আমরা ছাত্ররা নেতাহীন আন্দোলন করছি। আমাদের মাঝে মানবতাও আছে। আমরা এই রকম কোনো ঘটনা ঘটতে দিব না। নিঃসন্দেহে আমরা বাইরের ছেলেদের অপ্রীতিকর কোনো কিছুই করতে দিবো না।’

আরো কয়েকজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী বলেন, ‘গতকাল শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কে বা কারা পুলিশের ছত্রছায়ায় আমাদের ওপর যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে সেটিকে যেমন সাপোর্ট করি না। তেমনি আমাদেরকে ব্যবহার করে, গুজব ছড়িয়ে কেউ তাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করবে, সেটিও হতে দেয়া হবে না।’

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম এই গুজব প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সকল দাবি সরকার মেনে নিয়েছে। কিন্তু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণী ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের এই অপচেষ্টাকে কখনোই সফল হতে দেয়া হবে না।’

সকল গুজব ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে, অভিযোগ বা পাল্টা অভিযোগের গণ্ডি থেকে এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে সেটিই এখন প্রত্যাশা সবার।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!