ফেনী
মঙ্গলবার, ৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১:৫০
, ১২ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ফেনীতে নির্যাতিতদের সমর্থনে মতবিনিময়

অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে ছেলের গুমের সাথে জড়িতদের বিচার চেয়েছেন হতভাগা মা’

নির্যাতিতদের সমর্থনে আর্ন্তজাতিক সংহতি দিবসে ফেনীতে নির্যাতন বিরোধী মানববন্ধন ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। বৃহস্পতিবার সকালে ফেনী প্রেসক্লাবের সভাকক্ষে মতবিনিময় সভায় ছেলের গুমের শিকারে জড়িতদের বিচারের দাবিতে হতভাগা মায়ের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে সভাস্থল।

অধিকার ফেনী ইউনিটের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ সাংবাদিক ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এ কে এম আবদুর রহিম। অধিকার ফেনী’র ফোকাল পার্সন সাংবাদিক নাজমুল হক শামীমের সঞ্চালনায় মুলপ্রবন্ধ পাঠ করেন মানবাধিকার কর্মী শেখ আশিকুন্নবী সজিব।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গুমের শিকার হওয়া যুবদল নেতা মাবুবুর রহমান রিপনের মা রৌশন আরা। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাপ্তাহিক আনন্দ তারকা পত্রিকার সম্পাদক এম মামুনুর রশিদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মহিউদ্দিন খন্দকার, লায়ন্স ক্লাব অব ফেনীর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জাফর উল্লাহ ।

বক্তব্য রাখেন ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া, দৈনিক সুপ্রভাত ফেনী’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ফিরোজ আলম, সাপ্তাহিক হকার্স সম্পাদক তারিকুল ইসলাম মজুমদার, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী নসু, শিক্ষক এম ডি মোশারফ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয় মুহাইমিন তাজিম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গুলিবিদ্ধ আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থী শাহীন, গুমের শিকার মাহবুবুর রহমান রিপনের বড় ভাই শিপু।

সভায় গুম হওয়া যুবদল নেতা মাবুবুর রহমান রিপনের মা রৌশন আরা পরিবারের কাছে তার ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘১১ বছর আগে ২০১৪ সালে আমার ছেলে যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান রিপনকে আইনশৃঙ্খরা বাহিনীর পরিচয়ে (র‍্যাব) তুলে নেওয়া হলেও মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। আজও তার হসিদ পায়নি। আমার মত অভাগা মা গুমের শিকার হওয়া ছেলের বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে ১১ বছরও মেলেনি বিচার। এই অন্তবর্তীকালীন সরকার আমার ছেলের গুমের বিচার করবে আমি সেই প্রত্যাশা করি। রিপনের মত আর কোন ব্যাক্তি যেন গুমের শিকার না হয় সেজন্য রাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা রাখার দাবিও জানান মা রৌশন আরা।

নির্যাতিতদের সমর্থনে আর্ন্তজাতিক সংহতি দিবসের মুল প্রবন্ধে জানানো হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে প্রতিটি সরকারের আমলে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তবে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে তা চরম আকার ধারন করে। গুম করে নির্যাতন, কারাগারে নির্যাতনের ঘটনার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে। এই সময় র‌্যাব, পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে নির্যাতন, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনাও ঘটে। অধিকার এর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী শেখ হাসিনা সরকারে আমলে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট পর্যন্ত ১৮২ ব্যক্তি নির্যাতনের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ২০২৪ এর ৯ অগাস্ট থেকে ২০২৫ সালের ২০ জুন পর্যন্ত ১০ ব্যক্তি নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেন।

অধিকার জানায়, ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতিসংঘ প্রণীত নির্যাতনের বিরুদ্ধে কনভেনশনের ১৪(১) অনুচ্ছেদ এর ওপর আপত্তি জানিয়ে আন্তর্জাতিক সনদ গ্রহণ করেছে এবং কনভেনশন অনুমোদনকারী প্রতিটি রাষ্ট্রপক্ষ তাদের জাতীয় আইনে নির্যাতনকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে সম্মত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ কনভেনশনের ২২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত নির্যাতনের বিরুদ্ধে গঠিত কমিটির ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষে আবেদন গ্রহণ এবং নিষ্পত্তি করার ক্ষমতাও স্বীকার করেনি। বাংলাদেশে নির্যাতন বিরোধী আইন পাশ হলেও এখনও পর্যন্ত কনভেনশনের পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করা হচ্ছে না।

নির্যাতনের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু থাকা এবং এটি বন্ধে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩- এর বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার হেফাজতে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের ঘটনাগুলো অব্যাহতভাবে ঘটছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা একে প্রকট করে তুলেছে। অধিকার নির্যাতন বন্ধে এবার ছয়টি সুপারিশ পেশ করছে।

মানববন্ধন ও মতবিনিময় সভায় মানবাধিকার সংগঠক জাফর আহমেদ ভূঁইয়া, আমিনুল ইসলাম শাহীন, গুমের শিকার রিপনের চাচা ওহিদুর রহমান, ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান মজুমদার, হোমিও চিকিৎসক আতিক উল্লাহ, বাংলাদেশ ফটোজানালিষ্ট এসোসিয়েসন ফেনী শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোস্তফা কামাল বুলবুলসহ সাংবাদিক, শিক্ষক ও মানবাধিকার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!