ফেনী
মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সন্ধ্যা ৭:০৩
, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

অনিয়ম ও দূর্নীতির আখড়া কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর

 

ঢাকা অফিস-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর অনিয়ম ও দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে।দপ্তরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ বাণিজ্য, প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, এমপিওভুক্তির দুর্নীতি ও বদলী বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস একই সাথে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় ওই অধিদপ্তরে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
জানা যায়, অশোক কুমার অধিদপ্তর পরিচালনাকালে তার বিভিন্ন হঠকারী সিদ্ধান্ত ও আধিপত্যের কারনে দেশের ৬৪টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে ব্যহত হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রম। এছাড়া অধিদপ্তরে তিনি কিছু অসাধু ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে এককভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছেন। ফলে এর প্রভাব দেশের সব কয়টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর পড়েছে।

pic 07
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন দেশের ৬৪টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৫ জন করে মোট ৩২০জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ৩০ শে জুন শেষ হওয়ায় প্রকল্পে নিয়োজিত ৩২০ জন শিক্ষকের বেতন-ভাতাদি বন্ধ হয়ে যায়। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অশোক কুমার সকল শিক্ষকদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন এবং তাদের বেতন-ভাতাদি প্রদানের ব্যবস্থা করবেন বলে শিক্ষকদের আশ্বস্ত করেন।
গত ২০ জুলাই অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে আয়োজিত একটি সভায় সদ্য সমাপ্ত স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। কিন্তু সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অশোক কুমার তা না করে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পরিচালনার জন্য নতুন করে ডেইলি বেসিসে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেন এবং এর প্রস্তাব তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করেন। এতে করে স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বকেয়া বেতন-ভাতাদি ও চাকুরির অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ফলে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এর কোন সুরাহা না করায় ভুক্তভোগি শিক্ষকরা উচ্চ আদালতে গত বছরের ১৮ অক্টোবর একটি রিট পিটিশন (নং-১৩০৫২/২০১৬) দায়ের করেন।

ওই কর্মকর্তা জানান, রিটের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত শিক্ষকদের বকেয়া বেতন-ভাতাদি প্রদানের জন্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করে চাকুরীসহ সকল সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য রুল জারি করে। উচ্চ আদালতের এ রুলের বিরুদ্ধে আপীল করে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ উচ্চ আদালতের রায় বহাল রেখে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারী প্রদত্ত আদেশে শিক্ষকদের সকল বকেয়া বেতন-ভাতাদি প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন।
কিন্তু কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অশোক কুমার সুপ্রীম কোর্টের এ আদেশ কে অমান্য করে এখন পর্যন্ত শিক্ষকদের কোন প্রকার বেতন-ভাতাদি প্রদান করেনি।
আবদুর রহমান নামের এক শিক্ষক জানান, দীর্ঘদিন ধরে কোন প্রকার বেতন ভাতা না পেয়ে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব অনটনে ঋণগ্রস্ত হয়ে অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। এছাড়া অধিদপ্তরের এ মহাপরিচালক জোরপুর্বক প্রতিষ্ঠান প্রধানদের হাত করে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের চাকরীচ্যুত করছেন।
জানা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে। প্রায় ৬৬৪টি শুন্য পদ খালি থাকা সত্ত্বেও এ সকল শিক্ষকদের স্থায়ী কোন নিয়োগের ব্যবস্থা নিচ্ছে না অধিদপ্তর। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের বাদ দিয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের পায়তারা করছে। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে পাশ করেননি কিন্তু অধিদপ্তর ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অতিথি শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে ডেইলি ক্লাস বেসিসের প্রস্তাবনা পাশ হলে ওই সকল অতিথি শিক্ষকদের সমন্বয় করে দেয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।
এ সকল অতিথি শিক্ষকদের ২-৭ হাজার টাকার মত বেতন দিয়ে রাখা হয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাশ ও এইচএসসি পাশ। আবার কেউ কেউ সদ্য ডিপ্লোমা পাশ করা শিক্ষার্থী ও অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষকদের বেতন প্রদানের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এ সকল অতিথি শিক্ষকের অধিকাংশই অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজন ও তাদের সুপারিশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করা হচ্ছে।

স্বয়ং অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাসের আত্মীয়দের রংপুর ও মানিকগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকরা বলছেন, বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ একটি সিন্ডিকেটের একক আধিপত্যের কারণে কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রম ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। শিক্ষকরা বলেন, অধিদপ্তর যদি সমাপ্ত স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের শিক্ষকদের বকেয়া বেতন-ভাতাদি প্রদান ও নিয়মিত বেতন-ভাতাদি চলমান রাখে তাহলে কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরে আসত এবং সৃষ্ট সংকট অনেকাংশে লাঘব হতো।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!