ফেনী
বুধবার, ২২শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১:৩২
, ২৯শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

‘চাঁদের দেশের গ্রাম’

কথা ডেস্কঃ মাটি থেকে ৮হাজার মিটার উচ্চতার এক গ্রাম, যেখানকার বাসিন্দাদের বাইরের পৃথিবীর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বেত আর দড়ি দিয়ে তৈরি লম্বা মই। আধুনিক সভ্যতার আলো যেখানে পৌছেনি, প্রতিদিন কঠিন বাস্তবতার মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হয় গ্রামটির বাসিন্দাদের।

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ান প্রদেশের লিয়াংশান স্বসাশিত এলাকার ঝাংজু জেলার একটি গ্রাম সেটি। নাম আতুলির। পাবর্ত্য এলাকা হিসেবে পরিচিত ঝাংজুর ওই অঞ্চলটির পাহাড়গুলো অন্য এলাকার চেয়ে তুলনামূলক বেশি উচ্চতার। গ্রামটিতে বাস করে ৭২টি পরিবার।

গ্রামটির বিভিন্ন পাশ দিয়ে ১৭টি মই ঝুলানো রয়েছে নিচে নামার জন্য। এসব মই বেয়ে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় কাজ সাড়তে নামতে হয় গ্রামের মানুষদের। গ্রামটি যে পাহাড়েরর চূড়ায় অবস্থিত আশপাশের তার চেয়ে কম উচ্চতার কয়েকটি পাহাড় হয়ে তাদের আসতে হয় সমতলে। নিকট অতীতে এসব মই বেয়ে নামতে গিয়ে অন্তত ৮জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গ্রামবাসীরা। মই থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে আরো অনেকে।

গ্রামবাসীর এই সংগ্রমময় জীবনের কথা বিশ্ববাসী তো দূরের কথা চীনের নীতি নির্ধারকরাও যেন ‘জানতেন না’। ২০১৬ সালের মে মাসে চেন জি নামের এক সাংবাদিক গ্রামটির অনেকগুলো ছবি তুলে এনে ‘চাঁদের দেশের গ্রাম’ শিরোনামে তা প্রকাশ করলে গ্রামটির দূরাস্থার কথা নজরে আসে সরকারের।গ্রামটির ১৫ শিশু প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে নিচে নামে স্কুলে যাওয়ার জন্য। নিচে কম উচ্চতার আরেকটি পাহাড়ি গ্রামে অবস্থিত তাদের প্রাইমারি স্কুল।

গ্রামটির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর চীন সরকারের টনক নড়ে। তারা গ্রামটির জীবনযাত্রা সহজ ও নিরাপদ করার জন্য কিছু উদ্যোগ নিতে শুরু করেন। তার মধ্যে সবার আগে গ্রামটির জন্য দীর্ঘ ও মজবুত একটি স্টিলের মই নির্মাণ করা হয়।

গত বছরের শুরু থেকে আরো কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করে গ্রামটিতে। ৩০০ মিলিয়ন চীনা ইউয়ান ব্যয়ে ওই এলাকায় একটি স্কুল নির্মাণ করা হচ্ছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য নেয়া হয়েছে বড় বাজেটের বেশ কিছু পরিকল্পনা। এমনকি ফোর-জি ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা হয়েছে গ্রামটিকে। বর্তমানে স্বল্প পরিসরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তা আরো বাড়বে।

দারিদ্র পীড়িত লিয়াংশান এলাকাটির একটি বড় উদাহরণ আতুলির নামের গ্রামটি। চীন সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে এলাকাটিতে পর্যটন শিল্প বিকশিত হলে গ্রামবাসীকে অন্যত্র সড়িয়ে নেয়া হবে। অথবা পর্যটন শিল্পের জনশক্তি হিসেবে তারা সেখানে কাজ করবেন। বর্তমানে গ্রামটিতে পর্যটকদের যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটির দিনে গ্রামটির সংগ্রামী জীবন দেখতে সেখানে যাওয়ার সুযোগ পায় পর্যটকরা।

চায়না ডেইলি জানিয়েছে, ওই পার্বত্য অঞ্চলটিতে এরকম কমপক্ষে আরো ১৯টি গ্রাম রয়েছে পাহাড়ের উপরে। বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি হওয়ার পর সরকার গ্রামগুলো পর্যবেক্ষণ করে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সব মিলে এই গ্রামগুলোর প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের স্কুল বোর্ডিয়ে থেকে লেখাপড়া করার সুযোগ দেয়া উচিত।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!