ফেনী
শনিবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সন্ধ্যা ৭:৫৮
, ১৪ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রাহুমুক্ত সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসা

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা গংদের দীর্ঘ শোষন নিপীড়নের পর শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় তাদের পতন হওয়ায় মাদ্রাসাটি রাহুমুক্ত হয়েছে। এছাড়া তাদের পতনে মাদ্রাসাটিতে স্বস্থির নি:শ্বাস ফিরে এসেছে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯১৭ সালে সোনাগাজী পৌরসভার কেন্দ্রস্থলে ৫ একর জায়গায় মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয়। মাদ্রাসাটিতে দুটি টিনসেড, ৩টি পাকা ভবন ও দোতলা বিশিষ্ট একটি সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে। বর্তমানে ২৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী ও ১৫ শ শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। দুরবর্তী ছাত্রদের জন্যও আবাসিকের সু-ব্যবস্থা রয়েছে। ২০০১ সালে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার জোর সুপারিশে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। একপর্যায়ে বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম তাকে বহিষ্কার করে। দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে কোনঠাসা হয়ে চৌকস সিরাজ উদদৌলা ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এছাড়া মাদ্রাসার আবাসিক সুবিধা, বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ প্রদান করে মাদ্রাসার কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে সিরাজ উদদৌলা একটি ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন। তারা সিরাজ উদদৌলার নানা অপকর্মগুলোতে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখতো।
এদিকে ২০১৮ সালে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন ও বিদ্যুৎসাহী পদে পৌর আওয়ামীলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর মকসুদুল আলমকে নির্বাচিত করে সিরাজ উদদৌলা একটি পকেট কমিটি গঠন করেন।
এরাও সিরাজ উদদৌলার নানা অপকর্মে আশ্রয় প্রশ্রয় দাতার ভূমিকা পালনসহ মাদ্রাসাটি এককভাবে নিয়ন্ত্রন করে আসছিলেন।
গত ২৭ মার্চ মাদরাসার আলিম পরিক্ষার্থী রাফীকে নিজ কক্ষে ঢেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করে।এ ঘটনায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করে শিক্ষার্থীর পরিবার। ৩০ মার্চ সকালে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার মুক্তির দাবিতে তার আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা ও ক্যাডার বাহিনীর সহযোগিতায় সোনাগাজী জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া রাফীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি প্রদান করেছিলেন সিরাজের অনুসারীরা।
যৌন নির্যাতনের মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা কারাগারে থাকা অবস্থায় ৬ এপ্রিল ওই শিক্ষার্থীকে মাদরাসার ছাদে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে চার মুখোশধারী। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, ক্যাডার বাহিনীর নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মকসুদুল আলম, জোবায়ের আহাম্মেদ, জাবেদ হোসেন, হাফেজ আবদুল কাদের ও আবসার উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে নুসরাতের ভাই নোমান থানায় মামলা দায়ের করে। মামলায় এজাহারভূক্ত ৮ আসামীসহ মোট আওয়ামীলীগ নেতা রুহুল আমিন ও মকসুদুল আলমসহ ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, আবদুর রহিম শরিফ, হাফেজ আবদুল কাদের, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন্নাহার মনি, জাবেদ হোসেন ও জোবায়ের আহাম্মদ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। তাঁরা ৮ জনই রাফি হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে চঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছে।
অপর দিকে রাফীর ঘটনায় ৭ এপ্রিল অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে বরখাস্ত করেছে গভর্নিংবডি। এছাড়া ১৪ এপ্রিল গভর্নিং বডি বাতিল করেছে ইসলামি আরবী বিশ্ব বিদ্যালয়। ২৪ এপ্রিল মাদ্রাসার নতুন এডহক কমিটি গঠন করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান জানান, রাফীর ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ তার গংদের পতন হওয়ায় মাদ্রাসাটির বর্তমান পরিবেশ অনেক ভালো। যা আগে কখনো ছিলো না। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ফারহানা মজুমদার জানিয়েছেন, যৌন হয়রানিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিলো সিরাজ উদদৌলা। তার ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে এসব অপকর্মের কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় নি। বর্তমানে তার গংদের অনুপস্থিতিতে মাদ্রাসায় শান্তিপূর্ন পরিবেশ বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন জানিয়েছেন, বর্তমানে মাদ্রাসায় শান্তির পরিবেশ বিরাজ করছে। আগামীতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মান বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে মাদ্রাসা পরিচালনা করে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করনে ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি জানান।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!