ফেনী
মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৯:০০
, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কে এডভোকেট শাহজাহান সাজু

আসামিরা সু-কৌশলে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। সোমবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে বক্তব্য তুলে ধরেন বাদি পক্ষের আইনজীবী এম.শাহজাহান সাজু।
তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, রাফী হত্যাকান্ডের ব্যাপারে দেশের ১৭ কোটি মানুষ অবগত রয়েছে এবং রায় ঘোষনা নিয়েও সবার নজর আদালতের দিকে। এ হত্যাকান্ডকে পূর্ব পরিকল্পিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৬ এপ্রিল রাফীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ১৪ এপ্রিল আসামী শাহাদাত হোসেন শামীম ও নুর উদ্দিনকে ময়মনসিংহ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। তাদেরকে রিমান্ডে নেয়ার আগেই তারা স্বেচ্ছায় অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া আসামী হাফেজ আবদুল কাদের, আবদুর রহিম শরীফ, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা ও উম্মে সুলতানা পপিকেও পিবিআই রিমান্ডে নেয়ার আগেই তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। অথচ পিবিআই রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করতে বাধ্য করেছেন বলে আসামীদের ১৪২ ধারায় পরীক্ষাকালে তারা আদালতকে জানিয়েছেন। যা সঠিক নয়।
এডভোকেট শাহজাহান সাজু আরও বলেন, ২৭ মার্চ রাফীকে যৌন নিপীড়নের চেষ্টার ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা কারাগারে গেলে তার অনুসারীরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয় রাফীর পরিবারকে। ২৮ এপ্রিল সিরাজের মুক্তি দাবিতে শিক্ষার্থীদের একাংশ মানববন্ধন করে রাফীকে উদ্দেশ্যে করে তিরষ্কারমূলক বক্তব্য দেয়ায় ২৯ এপ্রিল বাড়িতে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলো রাফী এবং আসামী (মাদ্রাসার প্রভাষক) আফসার উদ্দিনকে এসএমএস (ক্ষুদে বার্তা) পাঠিয়ে রাফী জানায় সে আত্মহত্যা করবে। এ খবরটি আসামী আফসার উদ্দিন অপর আসামী নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীমকে জানালে তারা আত্মহত্যার কথাটিকে পুঁজি করে একে অপরের সাথে যোগসাজশকরে পরিকল্পিতভাবে রাফীকে হত্যা করে এটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। এ সময় হত্যার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও যুক্তি এবং কাজী এবায়দুল হক, এটি এম আফজাল, ঈমান আলীসহ ১০ জন বিচারপতির জাজমেন্টের রেফারেন্সসহ নারী ও শিশু আইনের বিভিন্ন দিক আদালতে তুলে ধরেন তিনি । ওই সময় আদালতে ফেনী জজ আদালতের পিপি এডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ, এডভোকেট সাব্বির উদ্দিন, শরফুদ্দিন আহম্মদ ডালিম, সালেহ উদ্দিন শিমুল উপস্থিত ছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়।
গত ২৮ মে ফেনীর সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো: জাকির হোসাইনের আদালতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০) কে আসামী করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা। ৩০ মে বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইন অভিযোগপত্রসহ মামলার নথি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। গত ১০ জুন মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ হয়। ২০ জুন একই আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে। ২৭ জুন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!