যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে ফেনী মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় শহরের জেল রোডস্থ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ফেনী পৌরসভা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এরপর সকাল ১০টায় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ সংলগ্ন স্থানে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি,পদন্নোতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজজামান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্রামুজ্জামান, ফেনী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবদুর রহমান, সাবেক কমান্ডার আবদুল মোতালেব, দাগনভূঞা উপজেলা সাবেক কমান্ডার শরীয়ত উল্যাহ বাঙ্গালি ও মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল্লাহ বাহার ভূঞা।
বক্তারা বলেন, বিজয় দিবসের ১০ দিন আগেই হানাদার মুক্ত হয় ফেনী। মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে ৬ ডিসেম্বর ভোরেই মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে ফেনী প্রবেশ করে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে পুরো শহর প্রকম্পিত করে তোলে।
বক্তারা আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে অবস্থান নিয়ে শত্রুর মোকাবিলায় আস্তে আস্তে অগ্রসর হতে থাকেন। পরশুরামের বিলোনীয়ায় পাকসেনাদের সাথে কয়েক দফা সম্মুখ লড়াই হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। সর্বশেষ ৪ নভেম্বর রাতে মুহুরী নদীর পাড় ঘেঁষে পরশুরামে প্রবেশ করেন ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইপিআর সদস্য ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা পাকসেনাদের দখলে থাকা চিথলিয়া ও পরশুরামের মজুমদার হাট ক্যাম্পের মাঝ বরাবর ঢুকে পড়ে শত্রুর অবস্থানে অতর্কিতে হামলা করে তাদের নাস্তানাবুদ করে তোলেন। দুপক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই শেষে ৭ নভেম্বর পরশুরামকে শত্রু মুক্ত করা হয়। শত্রু-অবস্থানের মাঝ বরাবর ঢুকে পড়ে যুদ্ধ করার এমন ঘটনা শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, বিশ্বের যুদ্ধের ইতিহাসেও বিরল। যে কারণে বিভিন্ন দেশের সামরিক শিক্ষার বইয়ে বিলোনিয়ার যুদ্ধ বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
সভা শেষে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি জেল রোড থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে দোয়েল চত্বরে এসে শেষ হয়।
এছাড়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তরুণ সংঘের উদ্যোগে ৬ ডিসেম্বর ভোর ৬টায় ছাগলনাইয়া থেকে নোয়াখালী সীমান্তের সেবারহাট ব্রীজ পর্যন্ত ৪১ কিলোমিটারের তারুণ্যের পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৭১জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন। এর আগে তারা নিজাম হাজারী এমপি ও জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামানের হাতে জাতীয় পতাকা হস্তান্তর করেন।