বিনোদন প্রতিবেদক: দেখতে হলে গ্রাম, গ্রামীণজীবন দেখা চাই। আম্রকানন, সবুজ মাঠ থেকে শুরু করে সুপারিগাছের খোলে শৈশবের দুরন্তপনা সবই আছে ‘মাটির প্রজার দেশে’। এককথায় অসাধারণ একটি ছবি। মনে দাগ কাটার মতো ছবি।
থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে মঙ্গলবার ৮৮ মিনিটের ছবিটি দেখে এমন প্রতিক্রিয়া জানালেন বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নারায়ণ বৈদ্য।
সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র আদনান শাকিব বললেন, বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে ভালো সিনেমা হল নেই। তা-ই দেশ-বিদেশের ভালো ছবি বড় পর্দায় দেখার সুযোগ নেই বললেই চলে। টিআইসিতে মাত্র ১২০ টাকা (সাধারণের জন্য ১৫০ টাকা) টিকেটে দারুণ একটি ছবি উপভোগ করলাম।
১ এপ্রিল থেকে দুপুর ১২টা, বিকেল ৩টা, সন্ধ্যা ৬টা আর রাত ৮টায় চারটি করে শো চলছে বিজন পরিচালিত ‘মাটির প্রজার দেশে’র। এর মধ্যে বিকেল ও সন্ধ্যার শো’গুলো ছিল হাউসফুল। বুধবার আটটায় হবে শেষ শো।
১০ বছরের দুরন্ত শিশু জামালকে নিয়ে এ ছবির গল্প। জামাল মায়ের সঙ্গে গ্রামে বসবাস করেন। একদিন বাল্যবিয়ের কারণে সে তার বাল্যবন্ধু ও খেলার সঙ্গী লক্ষ্মীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। এই কঠিন বাস্তবতা ও তার মায়ের অতীত ইতিহাসের কারণে জামাল সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যার ফলে সে নতুন করে আর বন্ধু বানাতে পারে না। তার স্কুলেও যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। নতুন স্কুলে ভর্তি হতে পারে না পিতৃপরিচয় না থাকায়। বিপদে পড়েন তার মা। যিনি চেয়েছিলেন অতীত ভুলে নতুন জীবন পেতে। গ্রাম্য সালিসের হিংস্র থাবা থেকে মাকে বাঁচায় জামাল। মা-ছেলে পালিয়ে যাওয়ার পথে সঙ্গী হয় মসজিদের ইমামও। যিনি জামালকে উপহার দিয়েছিলেন চাঁদে যাওয়ার রকেটের ছবি। মাওলানা নিজের ছেলে পরিচয়ে স্কুলে ভর্তি করে দেন জামালকে।
বাঘা প্রডাকশনস লিমিটেডের ব্যানারে নির্মিত ছবিটিতে অভিনয় করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রোকেয়া প্রাচী, কচি খন্দকার, শিউলি আক্তার, চিন্ময়ী গুপ্তা, রমিজ রাজু, আবদুল্লাহ রানা, মনির আহমেদ শাকিল, রিকিতা নন্দিনী শিমু প্রমুখ। প্রধান শিশুশিল্পী জামাল চরিত্রে অভিনয় করেছে মাহমুদুর অনিন্দ্য।
ছবির প্রযোজক আরিফুর রহমান জানান, ‘মাটির প্রজার দেশে’ চলচ্চিত্র নির্মাণে ১ কোটি টাকার খরচ হয়েছে। ছবিটি তৈরি করতে পাঁচ বছর সময় নিয়েছি। ৩০ দিন শ্যুটিং হয়েছে। প্রতিদিন ক্যামেরা ভাড়া দিতে হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। আমরা নিয়েছিলাম একটি দুঃসাহসী পরিকল্পনা। ধানের মাঠ, পাকা গম, ঝরাপাতা, আম্রকানন, পাখির ছানা থেকে শুরু করে প্রতিটি দৃশ্যের সঙ্গে শব্দও ধারণ করব ন্যাচারাল। এমনকি নিঃশব্দের শব্দও উঠে আসবে আমাদের ছবিতে। কারণ শব্দ ও ছবি প্রেমিক-প্রেমিকার মতো। আমরা লোকেশন সাউন্ড রেকর্ড করেছি। স্টুডিওতে শব্দ সংযোজন করিনি। এ ছবি দেখে দর্শক চোখের আরাম পাবে। তাদের মন ভিজে যাবে। তারা নতুন ম্যাসেজ নিয়ে যাবে।
ভিশন নিয়ে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এ ছবির বিনিয়োগ হয়তো তুলতে পারব না। তবে আমরা চাই দেশের সব জেলায় নিজস্ব উদ্যোগে টিকেটের বিনিময়ে প্রদর্শনী করতে। আমরা কৃষকের উঠোনে প্রদর্শনী করব। হয়তো পাঁচ টাকায় টিকেট বিক্রি করবো।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বাল্যবিয়ের কুফল, সামাজিক সংকট, বাস্তবতা ইত্যাদি ছাপিয়ে আমরাই চলচ্চিত্রে প্রথম একজন বিজ্ঞানমনস্ক মসজিদের ইমামকে উপস্থাপন করেছি।