আবু হুরাইরা: শিক্ষা মানুষকে শিক্ষিত করে; কিন্তু সর্বদা সুশিক্ষিত করতে পারে না। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য নৈতিকতা থাকাটা জরুরি।সমাজে নীতিবান ও সুশিক্ষিত মানুষের বড়ই প্রয়োজন। চোখ খুললেই চারপাশে ডিগ্রিধারীদের দেখা মেলে। আমি শিক্ষার বিরোধিতা করছি না; কিন্তু সুশিক্ষার অভাবের কথা বলছি।
সুশিক্ষা ও নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ তৈরিতে পরিবারের বড় একটি ভূমিকা থাকে। এর পাশাপাশি সরকারেরও ভূমিকা রয়েছে। কারণ নৈতিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিতে পরিণত হতে যে বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা প্রয়োজন, তা আজও সমাজে প্রচলিত।
যেমন- মাদকদ্রব্য, পর্নোগ্রাফি, ধূমপান ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব দেয়া দরকার। তা না হলে অল্পবয়সী তরুণ-তরুণীরা সামাজিক পারিপার্শ্বিকতা বুঝে ওঠার আগেই ঝরে পড়বে।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘যে ব্যবস্থার দ্বারা ইচ্ছাশক্তির বেগ নিজের আয়ত্তাধীন ও সফলকাম হয়, তাহাই শিক্ষা।’ ব্যক্তিজীবনে শিক্ষা গ্রহণের ভিন্নতা রয়েছে। মানুষ পারিবারিক, সামাজিক, প্রকৃতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষালাভ করে থাকে। সাধারণভাবে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানার্জনের জন্য একটি নির্র্র্দিষ্ট মেয়াদের কার্যক্রমকে বোঝায়। বর্তমানে শিক্ষার মূল হাতিয়ার হচ্ছে সনদপত্র অর্জন করা। এই সনদপত্রের মাধ্যমেই একেকজন একেক পেশা গ্রহণ করে। কিন্তু সনদনির্ভর শিক্ষাকে তখনই সুশিক্ষা বলা যাবে যখন এর সঙ্গে যুক্ত হবে মেধা, মনন, মূল্যবোধ, ন্যায়পরায়ণতা, সততা, চারিত্রিক দৃঢ়তা ইত্যাদির সমন্বিত রূপ। আর এগুলো অর্জন করার জন্য প্রয়োজন উন্নত পারিবারিক পরিবেশ।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসি নামটির সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। তাদের কাজ হল দেশের বিভিন্ন দুর্যোগে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করা। এ জন্য সেনাবাহিনী কর্তৃক তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেই প্রশিক্ষণের সুযোগ হয়েছিল আমার। এ প্রশিক্ষণে জীবনে চলার অনেক পাথেয় পেয়েছি।
এর একটি হল ‘আরলি ইজ দ্য বেড অ্যান্ড আরলি ইজ দ্য রাইজ’। নির্দেশনা অনুযায়ী সাড়ে ১১টার মধ্যে রুমে লাইট বন্ধ করে ঘুমানো বাধ্যতামূলক।
পাশাপাশি ধর্মীয় আচার, রীতিনীতি মানতে অনুপ্রেরণা দেয়া হয়। খুলনা রেজিমেন্ট ক্যাম্প লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান আজাদ একটি কথা বলেছিলেন যা খুব মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন, কিছু পেতে হলে সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছু চাইতে হয়। আমি সেনাসদস্য বা বিএনসিসির গুণকীর্তন করছি না, বরং সেখান থেকে আমাদের কী শিক্ষণীয় তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
আজ তরুণ সমাজের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘটনা মনে পড়ছে। এ বছরের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ সমাবর্তন হয়ে গেল। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী জরুরি ক্রিয়া সারতে অডিটোরিয়ামে আসেন। আর সেখানে তার কিছু টাকাসহ মূল্যবান মানিব্যাগ মনের ভুলে রেখে যান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ওই ভাইটিকে খুঁজে তার মানিব্যাগটি দিয়ে দেয়। আমি এই গল্পটির মাধ্যমে নৈতিকতা কেমন হওয়া উচিত সেটি বোঝানোর চেষ্টা করছি মাত্র। সুশিক্ষা ও নৈতিকতা যেমন একে অপরের পরিপূরক, তেমনি ব্যক্তিজীবনেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আবু হুরাইরা : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
huriraiu@gmail.com