সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফী হত্যা মামলার আসামী ও রাফীর সহপাঠি কামরুন নাহার মনি কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় মনির প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে ফেনী কারাগার থেকে আধুনিক জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। বর্তমানে মা ও মেয়ে দুইজনই সুস্থ আছেন বলে জানায় জেলার দিদারুল আলম। রাফী হত্যা মামলায় মনি যখন গ্রেফতার হন তখন সে পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। সে গত ছয় মাস ধরে কারাগারে বন্দি আছে। মামলার বিচার কাজ শুরু হলে মনিকে প্রতি কার্য দিবসে আদালতে হাজির করা হয়। তার আইনজীবী কয়েকবার জামিন চাইলেও আদালত না মঞ্জুর করেন। অন্ত:সত্ত¡া থাকার কারনে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যহতি দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে বিচারকাজে অংশ নেওয়ার আবেদন জানালে আদালত সেটাও না মঞ্জুর করেন।
আদালতে মনির আনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আবু তাহেরের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠিত হয়। উক্ত বোর্ড ২৪ সেপ্টেম্বর সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ দিয়ে তাকে পূর্নাঙ্গ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন। পরে আদালত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনের আলোকে তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ৩৪২ ধারায় আদালতে আসামীদের পরীক্ষাকালে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার সময় কামরুন নাহার মনি নিজেকে নির্দোষ দাবী করে পিবিআই হেফাজতে তাকে চরম নির্যাতন ও পেটে লাথি মেরে বাচ্চা নষ্ট করার হুমকি দিয়ে জবানবন্দি আদায়ের অভিযোগ করেন। সে জানায়, যে মনি অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার মুক্তির জন্য মানববন্ধন করেছে তাকে গ্রেফতার করেও ছেড়ে দেয় পিবিআই।
গত ২৮ মে ফেনীর সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো: জাকির হোসাইনের আদালতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০) কে আসামী করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা। ৩০ মে বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইন অভিযোগপত্রসহ মামলার নথি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। গত ১০ জুন মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ হয়। ২০ জুন একই আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে। ২৭ জুন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়।