ফেনী
মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৪:২৮
, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ছনুয়ায় ডাকাতের হামলায় বৃদ্ধা নিহতের ঘটনায় নানা রহস্য

  • ঘটনার আলামত-চিহ্ন পাওয়া যায়নি
  • পরিবারের সদস্যদের পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য
  • প্রতিবেশীদের ভিন্ন বক্তব্য
  • ৭ দিনেও রহস্য উদঘাটন হয়নি
  • সুষ্ঠু তদন্তে মূল রহস্য বেরিয়ে আসার প্রত্যাশা

ফেনী সদর উপজেলার পশ্চিম ছনুয়ায় ডাকাতের হামলায় সকিনা বেগম (৮৫) নামে এক বৃদ্ধা নিহত ও মালামাল লুটের ঘটনায় নানা রহস্য দেখা দিয়েছে। এখনো পর্যন্ত ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতের গ্রেফতার করতে নানা তৎপরতা চালালেও সফল হয়নি পুলিশ। তবে ঘটনার পিছনে অন্য ঘটনা থাকতে পারে বলে মনে করছেন প্রতিবেশীরা। সুষ্ঠু তদন্তে মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে তারা আশাবাদি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) মধ্যরাতে পশ্চিম ছনুয়া রেহান উদ্দিন ভুঞা বাড়ীতে ডাকাতের হামলায় বৃদ্ধা নিহত, মালামাল লুট ও দুই নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। ঘটনাটি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত হয়। খবর পেয়ে ওইদিন সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আতোয়ার রহমান, ফেনী মডেল থানার ওসি মো: আলমগীর হোসেনসহ পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় বাদি হয়ে নিহতের পুত্র আশ্রাফুল ইসলাম ভূঞা অজ্ঞাতনামা আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওমর হায়দার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এর রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের সনাক্ত করনে বার বার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন।

গতকাল এ প্রতিবেদককে স্থানীয় বাসিন্দা ও নিহত বৃদ্ধার প্রতিবেশী দিলদাল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ওইদিন ফজরের নামাজ আদায় করার পর আনুমানিক ৫টা ২০ মিনিটের দিকে বাঁচাও বাচাঁও চিৎকার শুনে তিনি ওই ঘরের দিকে এগিয়ে যান। তখন ঘরের দক্ষিণ পাশের একটি স্ট্রীলের দরজা খোলা দেখলেও তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করার কোন চিহ্ন দেখেনি। এমতাবস্থায় তিনি ঘরে প্রবেশ না করে অন্যান্য প্রতিবেশিদের ডাকলে তারা এগিয়ে আসে। এর চেয়ে বেশি কিছু মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

নিহত বৃদ্ধার ছেলে আশরাফুল ইসলাম ভূঞা জানান, তিনি একজন চাকুরীজীবী। বেশিরভাগ সময় চাকুরীর সুবাদে রাজধানীতে থাকলেও মাসে দু একবার বাড়িতে আসার চেষ্টা করেন। তার বড় ভাই নুরুল আবছার প্রবাসী। বাড়িতে তার স্ত্রী ও ৭ বছর বয়সী এক কন্যা রয়েছে এবং আশরাফের স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ মাতা সকিনা বেগম বসবাস করে আসছেন। ঘটনার দিন সকালে খবর পেয়ে বাড়িতে আসেন তিনি এবং এখনো বাড়িতেই তিনি অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন।

বৃদ্ধার পুত্রবধু ও আশ্রাফের স্ত্রী ইসরাত জাহান ফারজানা জানান, ওইদিন রাত আনুমানিক ১২ থেকে সাড়ে ১২টার দিকে স্বামীর সাথে কথা বলে কক্ষের দরজা বন্ধ করে বাচ্চাদের সাথে ঘুমাতে শুয়ে পড়ি। রাত ২টার দিকে একটি শব্দ শুনে তার ঘুম ভাঙলে কক্ষের দরজা খোলা অবস্থায় দেখেন তিনি। এরপর দরজার সামনে ২জন লোক দাড়িয়ে থাকার ছায়া অনুভব করলে তিনি ভয় পেয়ে লাইট জ্বালাতে গেলে ওই দুই ব্যক্তি পিছন থেকে তাকে ঝাঁপিয়ে ধরে। এ সময় তিনি চিৎকার দিতে চেষ্টা করলে একজন মুখ চেপে ধরলে তার হাতে কামড় দেয় বলে জানান। ওই সময় আরও একজন এগিয়ে এসে চুরি দেখিয়ে ফারজানার মেয়েকে হত্যা করার ভয় দেখিয়ে তার সামনের দিক দিয়ে দুই হাত, মুখ ও চোখ বেধে তার বাসুরের স্ত্রীর কক্ষের সামনে নিয়ে তাকে দিয়ে ওই কক্ষটি খুলিয়ে ডাকাতদল ভিতরে প্রবেশ করে। বাসুরের স্ত্রীকেও হাত, মুখ ও চোখ বেধে স্বর্ণালঙ্কারসহ মালামাল লুট করার চেষ্টা করে ডাকাতদল। এ সময় তারা চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করলে ডাকাত দলের একজন আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে বলে যে, আমরা মোট ১১জন, বাকিরা ঘরের বাহিরে অবস্থান করছে। বেশি বাড়া-বাড়ি করলে খুন করা হবে। এভাবে ১ ঘন্টা যাবত ডাকাতদলের সাথে তাদের দস্তা দস্তি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এ সময় এ প্রতিবেদকের নানা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কৌশলে এডিয়ে যান তিনি।

আরেক পুত্রবধু ও প্রবাসী আবছারের স্ত্রী নুর নাহার এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি ঘটনার সময় তার শ্বাশুড়ির (নিহত বৃদ্ধা) ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাওয়ার মতো আওয়াজ শুনে তার কক্ষের দরজা খুলেন। এরপর তিনি দুই একজনের ডাকাত দল দেখেছেন ও তারা মালামাল লুট করে নিয়েছেন বলে দাবি করেন।
পরে লোকজনের উপস্থিতিতে তার শ্বাশুড়ির মৃত্যুর ব্যাপারটি নিশ্চিত হন তারা। কিভাবে তার শ্বাশুড়ি মারাযান এ বিষয়ে কোন সদুত্তোর দিতে পারেনি তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশি জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংঘঠিত ঘটনার কোন আলামত চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এরপরেও ডাকাতির ঘটনা কিভাবে ঘটেছে? এ নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন রয়েছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ঘরের ভিতর থেকে যে কেউ দরজা খুলে দিয়ে কাউকে ভিতরে প্রবেশ করিয়েছে। হয়তো এর পিছনে পরকিয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে এবং তা আড়াল করতে ডাকাতির বিষয়টি সাজানো হয়েছে বলে কয়েকজন দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে দুই পুত্রবধুকে পুলিশ ভালো ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার রহস্য উদঘাটন হতে পারে বলে তারা মন্তব্য করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক ওমর হায়দার জানিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্বের সহিত তদন্ত করে যাচ্ছি। আশা করা যাচ্ছে খুব শিঘ্রই রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের সনাক্ত করতে পারবো এবং বৃদ্ধার মৃত্যুর বিষয়টি সুরতহাল রিপোর্ট পাওয়ার পর সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!