কথা ডেস্ক-আপনার সারাদিনের সঙ্গী মোবাইল? অফিসে, বাড়িতে সারাক্ষণ মোবাইলে মগ্ন? মাথার পাশে মোবাইল রেখেই ঘুম? তাহলে বিপদ। মোবাইলের রেডিয়েশনে ব্রেন টিউমার তো বটেই, হতে পারে ব্রেন ক্যানসার।
ফেসবুকে মগ্ন রাত। হোয়াটসঅ্যাপে বিভোর রাত। ঘুমের ভিতর খেলা করে মোবাইলের নীল আলো। রাত বাড়ে। ঘুম নামে চোখে। হাত থেকে ছিটকে পড়ে বালিশের পাশেই ঘুমিয়ে পড়ে মোবাইলও। নাহ্, ঘুমিয়ে পড়ে না, বরং বড্ড বেশি জেগে থাকে মুঠোফোন। আর একটু একটু করে গ্রাস করে মস্তিষ্কের কোষ।
সতর্কবার্তা শুনিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মোবাইল থেকে বেরোয় ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন। এই রেডিয়েশন অতিমাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে মাথায় টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা বেশি। কারণ, তাদের খুলির বাইরের অংশ বড়দের তুলনায় পাতলা হয়। ফলে রেডিয়েশনের প্রভাব তাদের মাথায় বেশি পড়ে। এ ছাড়াও ঘুমকে গভীর করার জন্য শরীর থেকে মেলাটোনিন নামে একপ্রকার হরমোন বেরোয়। কিন্তু মোবাইল, ট্যাবলেট, টিভি বা এলইডি স্ক্রিন লাগানো কোনও যন্ত্র থেকে যে রেডিয়েশন বেরোয়, তা ওই মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণে বাধা দেয়। ফলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার ইতিমধ্যেই মুঠোফোনকে ক্যানসারের সম্ভাব্য কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছে। ২০ বছরের কমবয়সিদের মধ্যে যারা অতিমাত্রায় মোবাইল ব্যবহার করে, তাদের ব্রেন ক্যানসারের সম্ভাবনা প্রায় ৫ শতাংশ বেড়ে যায়। সুইডেনের ওরেবরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা আরও মারাত্মক বিপদের সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
তাঁদের দাবি, থার্ড জেনারেশন অর্থাত্ থ্রিজি ফোনে আরও উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড ব্যবহার করা হয়। যা শরীরের পক্ষে টুজি ফোনের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর। ব্রেন ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই, বিছানায় মোবাইল তো নয়ই, বেডরুমেও মোবাইল রেখে ঘুমনো ছাড়ুন। যদি বাঁচতে চান।
ক্যান্সারের কোষ কী কারণে এতো শক্তিধর তা এখনো রহস্যই রয়ে গেছে। হাজার হাজার বছর ধরে বিকাশমান চিকিৎসা সাহিত্যে এসম্পর্কে কোনো উল্লেখই ছিল না। কারণ আমরা তা দেখতে পেতাম না, শনাক্ত করতেও পারতাম না। অথচ এগুলো আমাদের শরীরের সুস্থ কোষের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করে বসে। এমনকি চিকিৎসকরা কিছু ক্যান্সারের প্রকৃতি জানতে পারলেও (এতে মৃত্যুহারও কমে যায়) এর আবশ্যকীয় রহস্যের সমাধান এখনো হয়নি।
ব্রেন টিউমারের কারণ কী তা এখনো জানা যায়নি। ফুসফুসসহ অন্য সব ধরনের ক্যান্সার জীবনযাপন ও পরিবেশগত নানা বিচ্যুতির কারণে হয় বলে জানা গেছে। তবে ব্রেন ক্যান্সারের কোনো ব্যাখ্যা এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কেন একজন ব্যক্তিকে ব্রেন টিউমার আঘাত হানে, আর আরেকজন বেঁচে যায় তার কোনো ব্যাখ্যাই নেই। আপনি অভাগা হলে এই ‘রোগ সম্রাট’ আপনাকে কোনো কারণ ছাড়াই আঘাত করবে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক ও চিকিৎসক সিদ্ধার্থ মুখার্জী ক্যান্সারকে ‘রোগ সম্রাট’ নামেই অভিহিত করেছেন।
চলমান উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা থেকে জানা যায়, কেন মোবাইল ফোনের বিকিরিত রশ্মি ও ব্রেন টিউমারের মধ্যকার সম্পর্ক মুষ্টিমেয় বিজ্ঞানী, মানবাধিকার কর্মী ও আক্রান্ত ব্যক্তি– সবার কাছে আলোচনার বিষয়। বেশিরভাগ ক্যান্সারবিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসা-সংগঠন এটাকে একইসঙ্গে ‘খোলা ও বদ্ধ আলোচনার বিষয়’ বলে বিবেচনা করে। যদিও তাদের বিবেচনায় মোবাইল ফোন বাদ রাখা হয়েছে।
বিকিরণকে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার (কার্সিনোজেনিক) কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যদি তা পরমাণু ও অণুকে আয়নিত করার মতো শক্তিধর হয়। পরমাণু ক্ষয় ও রঞ্জন রশ্মির বিকিরণ অত্যন্ত বেশি মাত্রায় অণু-পরমাণুকে আয়নিত করতে পারে। এগুলো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী প্রভাবক বা কার্সিনোজেন হিসেবেও পরিচিত। এগুলো একটি অণুকে বিভিন্ন অংশে ভেঙে ফেলে। এতে কোষের জিনগত ক্ষতিসাধন করে, ফলে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। মোবাইল ফোন আয়নায়ন ঘটাতে পারে না, ফলে এতে ক্ষতির সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।