ড. গাজী মো: আহসানুল কবীর- দুইশ’ বছর আগে এ দেশে শিক্ষা বলতে ছিল কিছু মাদরাসা ও পাঠশালা। ছিল অতি স্বল্প সংখ্যক হাই ইংলিশ (HE) স্কুল তথা হাই স্কুলও। আস্তে আস্তে ইংরেজদের আদলে গড়ে উঠতে লাগল কিছু উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ও। বিভিন্ন জমিদার, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, শিক্ষানুরাগীদের উদ্যোগ ও আর্থিক সহায়তায়ই মূলত এ প্রতিষ্ঠানগুলো চলত। যেমন- চট্টগ্রামের কাজেম আলী হাই স্কুল, ডা: খাস্তগীর গার্লস স্কুল, ঢাকার জগন্নাথ স্কুল ও পরে কলেজ, সিলেট এমসি (মুরারি চাঁদ) কলেজ, বরিশালে বিএম (ব্রজমোহন) কলেজ, খুলনার বিএল (ব্রজলাল) কলেজ, রংপুরে কারমাইকেল কলেজসহ গ্রামগঞ্জে আরো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে বরাবরের মতো শিক্ষাব্যবস্থার প্রাণবায়ু ছিল পাঠশালাকেন্দ্রিক প্রাথমিক ও হাইস্কুলভিত্তিক মাধ্যমিক শিক্ষা। এসব বিদ্যালয় শিক্ষায় শুরুর দিকে কিছু ধর্মীয় নৈতিকতা শিক্ষার সাথে ভাষা, গণিত, ভূগোল ও জ্যোতির্বিদ্যা থাকলেও পরে মুসলিম শাসনামলে পারস্য ও মধ্যএশীয় শিক্ষাক্রমের প্রভাব পড়ে। ফলে ইতিহাস, স্বাস্থ্য, যুক্তিবিদ্যা ও বিজ্ঞানও যুক্ত হয়। সিপাহী বিপ্লবের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে ব্রিটিশ সরকারের হাতে শাসনব্যবস্থা গেলে অন্যান্য সেক্টরের মতো শিক্ষাব্যবস্থাও ইংরেজ আদলে গড়ে উঠতে শুরু করে।
শিক্ষাক্রম ইংরেজ আদলে হলেও বঙ্গীয় অঞ্চলে, আমাদের এ দেশে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা ছিল শিক্ষকদের। বিভিন্ন স্থানীয় ইতিহাস খুঁজে দেখা যায়, অজপাড়াগাঁয়েও কোনো কোনো স্থানে অসাধারণ সব শিক্ষক; বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। কী নিবেদিত প্রাণ ও পণ্ডিত তারা ছিলেন যা আজ কল্পনাও করা যায় না। যেমন- গত শতাব্দীতে একটি জিলাস্কুলের হেডমাস্টার কবি গোলাম মোস্তফা, চাঁদপুরের মতলব হাইস্কুলের হেডমাস্টার ওয়ালিউল্লাহ পাটোয়ারী, কুমিল্লার ময়নামতি হাইস্কুলের হেডমাস্টার নলিনী লোধ- এমন আরো অসংখ্য নাম নেয়া যায়, যারা একেকজন কিংবদন্তীতুল্য মহাপ্রাণ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের একসময়ের অধ্যক্ষ আখতার হামিদ খানের মতো দূরদর্শী শিক্ষকই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গ্রামীণ উন্নয়নের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান যা আজ দেশখ্যাত কুমিল্লা BARD. এসব শিক্ষক নিজস্ব ঢংয়ে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কিভাবে ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকে শুরু করে জ্ঞান দান পর্যন্ত সর্বাত্মক শিক্ষাই দিতেন, তা স্পষ্ট বোঝা যায় তাদের ছাত্রছাত্রীদের দেশে ও বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা লাভ দেখে। তাই তো মতলবের ওয়ালিউল্লাহ পাটোয়ারীর ছাত্র আবদুুল মতিন পাটোয়ারী হয়েছিলেন বুয়েটের ভিসি, আর কুমিল্লার দেবিদ্বার হাইস্কুলের বসন্ত বাবুর ছাত্র ইসমাইল হয়েছেন বিশ্বখ্যাত নাসার বিজ্ঞানী।
শিক্ষকরা চরিত্র গঠনসহ অনেক কিছুই শেখাতেন। আবার শিক্ষকদের দেখেও শিক্ষার্থীরা অনেক কিছুই শিখত। আমাদের শিক্ষাজীবনে কোনোদিন শিক্ষকদের ক্লাসে অনুপস্থিত থাকতে দেখিনি। স্কুলজীবনে ছাত্রদের হাতে ঘড়ি পরা বা ঘড়ি প্রদর্শন করা রীতিমতো আদবের বরখেলাপ ছিল। একজন শিক্ষককে রাস্তায় হাঁটতে দেখলে আমরা কাঁচুমাচু হয়ে রাস্তার এক পাশে বা কখনো রাস্তা থেকে নিচে নেমে হাঁটতাম। ক্যাব, স্কাউট ও ক্যাডেট এ তিনটির যেকোনো একটি করা আমাদের ব্যধ্যতামূলক ছিল। মাথায় সবসময় টুপি পরে থাকা এবং জোহরের নামাজ জামাতে আদায় করা থেকে কোনো মুসলিম ছাত্রের জন্য ছাড় ছিল না। ‘কোচিং’ নামের কোনো বিষয় আমাদের সময় জানাই ছিল না। আর শিক্ষকদের ব্যক্তিগত চরিত্র ছিল স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার মানদণ্ডে সর্বোচ্চ আদর্শ।
এখনো মনে আছে, আমাদের এক শিক্ষক একদিন স্কুলের এক ছাত্রের অভিভাবককে (যিনি একটি বিশেষ শাখায় চাকরি করতেন) ডেকে বললেন, তুমি যে গতকাল দিনদুপুরে রাস্তায় রিকশাওয়ালার কাছ থেকে টাকা নিলে, এটি যদি তোমার ছেলের নজরে পড়ত, তাহলে কী হতো? কী সাহসী ও দৃঢ়চেতা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। অর্থাৎ শুধু শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাদানই নয়, সামগ্রিকভাবে সমাজ গঠনে শিক্ষকরাই ছিলেন আলোকবর্তিকা। তাই শিক্ষাদান পদ্ধতি স্বাভাবিক গতিতে সাবলীলভাবেই চলত।
শিক্ষাদান পদ্ধতি এমন সুন্দর স্বনিয়ন্ত্রিত থাকলেও শিক্ষাব্যবস্থা গঠনের শুরুতে এ দেশের বেশ কয়েকজন জ্ঞানতাপসের উদ্যোগ ও ভূমিকা ছিল যুগান্তকারী। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যেমনি শিক্ষা সমিতি গঠন করে শিক্ষাক্রম তৈরি ও পাঠ্যপুস্তক রচনার দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, তেমনি তিনি একটি বিদ্যালয় পরিদর্শন কাঠামো তৈরি করে নিজে বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে যেতেন লেখাপড়া কেমন হয়, কিভাবে হয় তা দেখার জন্য। আর্থিক প্রাপ্তি ছাড়া নিজের সময় ও শ্রম দিয়ে সমাজে শিক্ষাবিস্তারে এমন বিরল মহতী উদ্যোগ আজকের প্রেক্ষাপটে কি ভাবা যায়?
সম্ভবত এসব উদ্যোগের আলোকেই ব্রিটিশ সরকার এ দেশের শিক্ষাপ্রশাসনের সরকারি দাফতরিক কাঠামো গড়ে তোলে। তৃণমূল পর্যায় থেকে থানায় সাব-ইন্সপেক্টর অব স্কুলস, মহকুমা স্কুল ইন্সপেক্টর (SDI), জেলা স্কুল ইন্সপেক্টর (DI), বিভাগীয় স্কুল ইন্সপেক্টর (IS) এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে জনশিক্ষা পরিচালক (DPI) পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। দেশ বিভাগের পর প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ কুদরত-এ-খুদা পূর্বপাকিস্তানের প্রথম DPI হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এদিকে কলকাতাভিত্তিক বুক সোসাইটির ফ্রেমওয়ার্কেই দেশ বিভাগের পর আমাদের দেশে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিতরণের জন্য স্কুল টেক্সটবুক বোর্ড গঠিত হয়, যা কালক্রমে আজকের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (NCTB) রূপ লাভ করেছে। এ ক্ষেত্রেও ড. কুদরত-এ-খুদা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। পাশাপাশি শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এবং পিটিআই প্রতিষ্ঠা করা হয়। শিক্ষক প্রশিক্ষণকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের তদানীন্তন প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ওসমান গনির ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শিক্ষা ব্যবস্থাপনার আজকের যে ডালপালা ছড়ানো বিশাল মহীরুহ দেখা যায়, তা দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত দিনে দিনে গড়ে উঠেছে। শুরুতেই জনশিক্ষা পরিচালকের অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে তৃণমূল পর্যায়ে মাদরাসা ও প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয়) স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রশাসন চলত। প্রশাসন ছিল তৃণমূলে বিকেন্দ্রিকৃত। থানায় কর্মরত একজন সাব-ইন্সপেক্টর অব ¯ু‹লস থানার সব প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকের নিয়োগ, বদলি ও বেতন-ভাতা দেয়াসহ সব প্রশাসনিক কাজই করতেন একক হাতে, অত্যন্ত স্বাধীনভাবে কোনোরকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই। এসব কাজে তার কোনো সহায়ক স্টাফও ছিল না। তবে তাদের মূল কাজ ছিল, শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখায় ভূমিকা পালন করা। এ জন্য তারা মাসের বেশির ভাগ সময়ই বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে যেতেন যা কখনো পূর্বঘোষিত থাকত; আবার অনেক সময় অকস্মাৎ গিয়ে হাজির হতেন (Surprise Visit)।
এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে যে মিথষ্ক্রিয়া (Interaction) হতো, তা শিক্ষার গুণগত মান সংরক্ষণে বিরাট ভূমিকা রাখত। আমার বয়সী সবারই নিশ্চয় মনে থাকার কথা, গ্রামগঞ্জে যেদিন কোনো স্কুলে ইন্সপেক্টর পরিদর্শনে যেতেন, সেদিন সে এলাকায় রীতিমতো সাজ সাজ রব পড়ে যেত, উৎসবের আমেজ বিরাজ করত। এভাবে মহকুমা, জেলা ও বিভাগীয় স্কুল ইন্সপেক্টরদের পরিদর্শন ও তদারকি চলত বিভিন্ন প্রাইমারি ও হাইস্কুলে। সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ বিভাগীয় দফতরের মাধ্যমে জনশিক্ষা পরিচালকের অধিদফতর থেকে করা হতো।
ড. কুদরত-এ-খুদা, প্রফেসর শামস-উল হক (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপাচার্য), ড. মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী (ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য) বা আবু রুশদ মতিন উদ্দিনের মতো দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদেরা জনশিক্ষা পরিচালকের দায়িত্বে থেকে এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভিত গড়ে দিয়ে গেছেন। শিক্ষায় কী চমৎকার মনিটরিং ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু একজন শিক্ষক ও একসময় শিক্ষাপ্রশাসনের সাথে জড়িত ব্যক্তি হিসেবে বেশ বেদনার সাথেই আমাকে বলতে হচ্ছে- সেই আদর্শ-অবস্থা আজ অনেকটাই অনুপস্থিত। আজ প্রশাসনে লোকজনের ছড়াছড়ি এবং ব্যবস্থাপনার বিশাল বিস্তৃতির পরও এ অবস্থা দুঃখজনক। একজন স্কুল ইন্সপেক্টরের স্থলে আজ শিক্ষা অফিসার, সহকারী শিক্ষা অফিসারসহ রেভিনিউ খাতে যেমন অনেক পদধারী, তেমনি বিভিন্ন প্রজেক্টের আওতায় শিক্ষা অফিসারের অতিরিক্ত পদও সৃজন হয়েছে। একজন অফিসারের পরিবর্তে উপজেলায়-জেলায় অনেক অফিসার থাকায় দায়িত্ব-কর্তৃত্ব নিয়ে যেমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি মনিটরিং ব্যবস্থায় শৈথিল্য দেখা দিয়েছে। অন্য দিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশ্নপত্র ফাঁস, নানা অব্যবস্থাপনা ও অনৈতিকতার খবর প্রায়ই পত্রিকার পাতায় দেখে লজ্জা পাই, দুঃখ লাগে। আবার এদের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য যে ডাইরেক্টরেট অব অডিট অ্যান্ড ইন্সপেকশন (ডিআইএ) রয়েছে, সেটি সম্পর্কে নানা নেতিবাচক খবর অহরহ বেরুচ্ছে গণমাধ্যমে। আসলে প্রশাসন যত মাথাভারী হয়, সমস্যার তত বিস্তৃতি ঘটে। এ জন্য মনে হয়, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব প্রাইমারি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর দু’টির উপরই ন্যস্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু আজকাল পদায়ন, পদোন্নতি ও বদলিসহ বিভিন্ন কাজ মন্ত্রণালয় থেকেই করা হয়। সব কাজের জন্যই মন্ত্রণালয়ে যেতে হয়। অধিদফতর অনেকটাই শুধু মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অনেকেই একে ঠাট্টা করে ‘পোস্টবক্স’ বলে থাকেন। আবেদনকারীরা যে আবেদনপত্র পাঠান, তা এ অধিদফতর হয়ে মন্ত্রণালয়ে যায়। আবার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আবেদনকারীদের কাছে পৌঁছায় অধিদফতরের মাধ্যমেই। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া দরকার। যদি মন্ত্রণালয়ই সব কাজ করে, তবে আর অধিদফতর কেন? বাকি অন্য সব কাজ বিভাগীয় ও জেলা দফতরেই সম্পাদন করা যেতে পারে। সুতরাং সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন শিক্ষা ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সামগ্রিক কাজকর্ম অধিদফতরে হলেই ভালো হয়। তা হলে দায় ও দায়িত্ব দুটোরই স্বচ্ছতা থাকবে। আর অধিদফতরের মহাপরিচালক হিসেবে আগের মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ শিক্ষকদেরই নিয়োগ দেয়া উচিত। কিন্তু আজকাল অনেক সময়ই তা হয় না, যে কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয় বিভিন্ন উপলক্ষে। ছোট্ট এ দেশটিতে প্রায় এক লাখ প্রাইমারি স্কুল ও ২৫ হাজার হাইস্কুল থাকার পরও ব্যাপক অব্যবস্থাপনা, আন্তরিক উদ্যোগের অভাব, নৈতিক স্খলনজনিত কাজকর্ম এবং দুর্নীতির কারণে দেশের শিক্ষার গুণগত মান দিন দিন পড়ে যাচ্ছে। আসলে একজন নীতিবান ও দৃঢ়চেতা মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী অধিদফতর শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে কাজ বিকেন্দ্রীকরণও জরুরি। সব কাজ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরেই হতে হবে- এমনটা বোধ হয় জরুরি নয়। যেহেতু এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের অনুদানেই বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলো চলে, তাই কাজের গতি বাড়াতে বোধ হয়, জেলার ভেতর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শিক্ষক-কর্মচারী বদলি করা যায়। সেটি করতে পারে জেলা শিক্ষা অফিসার বা বিভাগীয় দফতর। আবার সরকারি স্কুল-কলেজের বদলি-পদায়ন-পদোন্নতি অধিদফতর থেকে হতে পারে। পাশাপাশি, স্কুল-কলেজে পরিদর্শন প্রক্রিয়াটি নিয়মিত এবং জোরালো করাও প্রয়োজন। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও নিয়মিত প্রক্রিয়ায় সম্পাদন করা খুবই জরুরি। সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ এবং নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন তো মন্ত্রণালয়ের হাতেই থাকবে। অনেকেই বলে থাকেন, এত বিকেন্দ্রীকরণে দুর্নীতিও বিকেন্দ্রীকৃত হয়। সেটি সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। তা না হলে জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান কোথায় হবে? এর জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি নৈতিকতার উন্নয়নের তো কোনো বিকল্প নেই। আমরা দেখি, ইউরোপের অনেকগুলো দেশে এখন দুর্নীতি শূন্য মাত্রায়। তারা কিভাবে করল? তা হলে আমরা পারব না কেন? একসময়ের দুর্নীতির শিখরে থাকা ইন্দোনেশিয়ায় এখন দুর্নীতি বেশ নিয়ন্ত্রণে। আসলে ইচ্ছাশক্তি আর উদ্যোগ সবকিছুই সম্ভব করে তুলতে পারে।
লেখক : প্রফেসর, রসায়ন ও সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড