ঢাকা অফিস- নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ‘সমঝোতা অথবা রাজপথের আন্দোলন’ এমন কৌশল মাথায় রেখে সামনে এগোচ্ছে বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, সরকার অনড় হলেও সমঝোতার পথ এখনো ফুরিয়ে যায়নি। বিএনপি সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে সমঝোতা কিংবা আলোচনার টেবিলে ক্ষমতাসীন দলকে বসার আহ্বান জানিয়ে যাবে। সরকার সে আহ্বানে সাড়া না দিলে আন্দোলনের পথই বেছে নেয়া হবে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন। বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করায় আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা ইতোমধ্যেই ডালপালা মেলেছে। ‘কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে হবে আগামী নির্বাচন’-এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের বাইরেও ঘুরপাক খাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি বারবার নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানিয়ে যাচ্ছে।
অন্য দিকে সরকারের তরফ থেকে বিএনপির আলোচনায় বসার আহ্বান নাকচ করে দেয়া হচ্ছে। সরকারের চতুর্থ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। অর্থাৎ বর্তমান সরকারই হবে নির্বাচনকালীন সরকার। আর ওই সরকারের প্রধান থাকবেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর বিএনপি আগামী দিনে কী করবে, তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে।
বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বেশ সতর্ক। নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে অতি উৎসাহ দেখানোর পক্ষপাতী নয় তারা। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করেই ধাপে ধাপে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে চায় তারা। নির্বাচনের এখনো ১০ মাস বাকি থাকায় দলটি দাবি-দাওয়ার মধ্যেই আরো কয়েকটি মাস পার করতে চায়। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো ধরনের সমঝোতা না হলে নির্বাচনের ছয় মাস আগে ‘অল আউট’ আন্দোলনের পথ বেছে নেয়া হতে পারে।
বিএনপির হাতে খুব একটা সময়ও যে আছে তা-ও নয়। এ বছরের মাঝামাঝিতে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এসব নির্বাচন হলে বিএনপিকে ব্যস্ত থাকতে হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে রয়েছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। এর বাইরে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত একটি মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে দলের ভেতরে এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এখন চলমান রয়েছে ৩৭টি মামলা। এর মধ্যে চারটি মামলা করা হয় বিগত সেনাসমর্থিত এক-এগারোর সরকারের সময়ে। বাকি ৩৩টি মামলা করা হয় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। হত্যা, সহিংসতা, রাষ্ট্রদ্রোহ, দুর্নীতি, আদালত অবমাননাসহ নানা অভিযোগে এসব মামলা করা হয়। ১৭টি মামলায় ইতোমধ্যে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দুটো দ্রুত সমাপ্তির পথে।
দলটির কোনো কোনো নেতা বলছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া বেকসুর খালাস পাবেন এমনটাই আশা করছেন তারা। তবে সরকার যদি এ মামলাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাজা দিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে, তাহলে দলীয় কৌশল পাল্টে যেতে পারে।
জানা গেছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া খালাস পাওয়ার পরিবর্তে অন্যকিছু হলে রাজপথেই তা মোকাবেলা করবে বিএনপি। দলটির ৭৭টি সাংগঠনিক টিম সম্প্রতি ঢাকার বাইরে সফর করে এমন নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
আন্দোলন ও নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বরাবরই বলে আসছি কেয়ারটেকার সরকার অথবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। এ দাবির পক্ষে জনসমর্থন ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সরকার সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করলেও শেষ পর্যন্ত তারা সব দলকে নিয়ে সংলাপে বসতে বাধ্য হবে। কারণ এবার আর ২০১৪ সালের পরিস্থিতি এক নয়। বিষয়টি ক্ষমতাসীনেরাও উপলব্ধি করছেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, সরকার বিএনপি ও আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে আবারো একটি একতরফা নির্বাচন করতে চাইছে। মিথ্যা মামলায় চেয়ারপারসনকে সাজা দিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। এ জন্য সংলাপ বা সমঝোতার আহ্বান তারা প্রত্যাখ্যান করছে। বিএনপিকে সহিংসতার পথে ঠেলে দেয়ার ফন্দি আঁটছে। কিন্তু এবার আমরা তাদের পাতা ফাঁদে পা দেবো না। তিনি বলেন, বিএনপি বা খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে দেশে আর কোনো নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ বার্তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব জায়গায় চলে গেছে। তাই সরকার যতই একতরফা নির্বাচনের চিন্তাভাবনা করুক তা সফল হবে না।
বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ বলেছেন, সরকার যতই কঠোর হোক শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে একটি সমঝোতা হবে। সব সমঝোতার পরিবেশ ও প্রস্তাব প্রকাশ্যে আসে না। সঙ্কটের সমাধান করেই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি।
তবে আগামী নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান দলটির তৃণমূলে এখনো স্পষ্ট নয়। স্থির কোনো নির্দেশনা এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি তাদের।