ফেনী
বৃহস্পতিবার, ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১:৩৩
, ১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ডেঙ্গু রোগ প্রবল হচ্ছে

  • জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে
  • ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়
  • ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ১৪ জন
  • এ বছর জুন থেকে আগস্টের মধ্যে ১১ জন মারা গেছে
  • ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো শেষ হয়নি
  • ডেঙ্গুর মৌসুম মূলত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত
  • এবার রোগটিকে মারাত্মক মনে করছেন চিকিৎসকেরা

ঢাকা অফিস: ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, অন্য বছরগুলোর তুলনায় রোগটিকে বেশি প্রবল মনে হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা। তাঁদের আশঙ্কা, মৃত্যু বাড়তে পারে। যারা দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সে সময় মারা গিয়েছিল ১৪ জন। আর এ বছর জুন থেকে আগস্টের মধ্যেই ১১ জন মারা গেছে। অথচ ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। ডেঙ্গুর মৌসুম মূলত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা বলেছেন, অন্য বছরগুলোর তুলনায় রোগটিকে মারাত্মক মনে হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে, অচেতন হয়ে পড়ছে। অনেকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এই শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ২০০০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে ডেঙ্গুর চিকিৎসা করছেন। রোগের ধরনে কোনো পরিবর্তন হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি প্রথম আলোর কাছে মন্তব্য করেছেন।

সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ১১ জনের মধ্যে আটজন মারা গেছে ‘হেমোরেজিক শক’-এর কারণে। ডেঙ্গু রোগের এই পরিস্থিতিতে রক্তক্ষরণ হয়। অনেকের মলের সঙ্গে রক্ত যায়। আট বছরের একটি শিশু জ্বরে ভোগার পরপরই মারা যায়। দুজন মারা গেছে ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে’। এই পরিস্থিতিতে রোগী প্রবল জ্বরে অচেতন হয়ে পড়ে। মৃতদের মধ্যে চারজনের বয়স ছিল ১০ বছরের নিচে। একটি শিশুর বয়স ছিল এক বছর সাত মাস। একজন ছিলেন ২৭ বছর বয়সী চিকিৎসক।

একজন রোগীর আত্মীয় গত রাতে বলেছেন, তাঁর ভাইয়ের জ্বর দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঢাকার একটি বড় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডেঙ্গুও শনাক্ত হয়েছিল হাসপাতালে ভর্তির পরপরই। ভর্তির তৃতীয় দিনে ২৮ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়।

রোগের ধরন, প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাবের ওপর নজরদারি করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা গতকাল সোমবার  বলেন, ‘রোগের ধরনে পরিবর্তনের বিষয়ে মন্তব্য করার মতো যথেষ্ট তথ্য আমাদের হাতে নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। আমরা বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছি। শিগগিরই আমরা ফলাফল জানাতে পারব।’

তবে অল্প কয়েক দিনে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় আইইডিসিআরের পরিচালক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ২০১৬ সালে-১৪ জন। এ বছর জুন থেকে আগস্টের মধ্যেই ১১ জন মারা গেছে। অথচ ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো শেষ হয়নি।

আইইডিসিআরের মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি (ডেথ রিভিউ কমিটি) ১১টি মৃত্যুর ঘটনার ইতিহাস তদন্ত ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। মৃতের শরীরের বিভিন্ন অংশের নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে রোগীর ইতিহাসও সংগ্রহ করেছেন গবেষকেরা। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল-এমন রোগীই বেশি ছিল। অন্যদিকে এসব রোগীর প্রায় সবাই অনেক দেরি করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগ এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ইমার্জিং ডিজিজ কর্মসূচির পরামর্শক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের (স্ট্রেইন বা সেরো টাইপ)। এগুলো হলো ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। একজন মানুষ একধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ওই ভাইরাসে সে আর আক্রান্ত হয় না। তবে বাকি তিনটিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি বলেন, কোন ধরনের ভাইরাসে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণে থাকা দরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত দেশে ২ হাজার ৯৬৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা গেছে ১১ জন। গতকাল বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১৯৭ জন।

সরকারি এই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চিকিৎসক আয়শা আক্তার বলেন, সরকারি-বেসরকারি ২২টি হাসপাতালের তথ্য তাঁরা নিয়মিত সংগ্রহ করেন। সেই সংখ্যাই সরকারিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রকৃত সংখ্যা হয়তো কিছু বেশি হবে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সরকারি সংখ্যার চেয়ে বেশি। প্রকৃত সংখ্যা জানার কোনো উপায় নেই। ওই ২২টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নাম নেই। তবে গতকালও ওই প্রতিষ্ঠানের কেবিন ব্লকে দুজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিলেন।

বিএসএমএমইউর মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ডেঙ্গুর চিকিৎসা চলছে। দুজন রোগীর চিকিৎসা চলছে কেবিন ব্লকে। কেউ কেউ বহির্বিভাগেও চিকিৎসা নিয়েছে।

এ বি এম আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, প্রতিদিনই ব্যক্তিগত চেম্বারে চার-পাঁচজন ডেঙ্গুর রোগী আসছে। এরা বাড়িতে থাকছে। একই অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ আবিদ হোসেন মোল্লা। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারের এবং অনেক বেসরকারি ক্লিনিকের রোগীর হিসাব সরকারের খাতায় নেই। থাকলে সংখ্যাটি আরও অনেক বড় হতো। এটাই দুশ্চিন্তার কারণ।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!