ঢাকা অফিস-দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা হলে কেউ পার পাবে না বলে দলের নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি জানিয়েছেন, দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতে চায়, এমন ‘বেঈমানদের’ ওপর নজর রাখছেন তিনি।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে সামনে রেখে শনিবার দলের নির্বাহী কমিটির সভায় এই হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেত্রী।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘যারা এক নৌকায় এক পা আর আরেক নৌকায় এক পা রাখে তাদের ওপর লক্ষ্য রাখা হবে।’
‘দুঃখ আসলে একসঙ্গে থাকব। সুসময় আসলে একসঙ্গে থেকে দেশ গঠন করব।’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি ভাঙার চেষ্টার কথাও তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। জানান, সে সময় চক্রান্তকারীদের ক্ষমা করেছিলেন তিনি। কিন্তু এবার আর ক্ষমতা নয়।
দুর্নীতি মামলার রায়কে সামনে রেখে বিএনপিতে ভাঙন আতঙ্কও তৈরি হয়েছে। আর এ কারণে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন দরে দণ্ডিতদের দলের সদস্য না হওয়ার বিধান বাতিল করেছে বিএনপি।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘নেতাকর্মীদের বলব ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। বহু ষড়যন্ত্র হবে, অনেক সন্ত্রাস হবে। কিন্তু আমরা ভীত নই। যারা বেইমানি করেনি, আমরা যদি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসি, তাদের কথা বিবেচনা করা হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপিতে সংস্কারের কথা বলে খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে চলার বিষয়ে নেতাদের একটি অংশের চেষ্টা নিয়েও কথা বলেন তিনি। বলেন, ‘এক এগারোর সময় বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র হলেও ভাঙতে পারেনি। জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমান তৃণমূলে যে ভীত তৈরি করেছে যে কারণে অনেক ষড়যন্ত্র করেও ভাঙতে পারেনি। দুই চারজন গেলেও নেতাকর্মীদের নিতে পারেনি।’
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কারপন্থী অংশের শীর্ষ নেতাদের অনেককেই মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। তবে পরে বেশ কয়েকজনকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
তবে আবার দল ভাঙার চেষ্টা হলে পরিণতি ভালো হবে না বলেও জানিয়ে দেন খালেদা জিয়া। বলেন, ‘ক্ষমা একবার হয়। বারবার হয় না।’
বিএনপিতে ঐক্যের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যও চাইছেন খালেদা জিয়া। বলেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমি দেশের মানুষের সঙ্গে আছি। আসুন জাতীয় ঐক্য প্রকাশ করি।’
‘দেশের বর্তমান অবস্থায় জাতীয় ঐক্য বড় প্রয়োজন। কে কি পেয়েছি সেটা বড় কথা নয়।’
সঠিক রায়ের সুযোগ নেই
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ‘সঠিক’ রায় পাবেন না বলেও মনে করেন খালেদা জিয়া। বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত বলছে নিম্ন আদালত সরকারের কব্জায়। পত্রিকায় যা দেখছি তাতে বোঝা যাচ্ছে সঠিক রায় দেয়ার সুযোগ নেই। সঠিক রায় দিলে কী পরিণতি হয় তা তো দেখেছেন। তারেক রহমানের রায় দেয়ার পর বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়েছে।’
দলের নেতাদেরকে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না কেন আপনাদের সঙ্গে থাকব।’
বক্তব্য চলার সময় নির্বাহী কমিটির নেতারা স্লোগান ধরেন, ‘আমার নেত্রী আমার মা বন্দী হতে দেবো না।’
ভোট হতে হবে নির্দলীয় সররকারের অধীনে
মানুষ ‘দুঃশাসন’ থেকে মুক্তি চায় মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চায়, আর এই পরিবর্তন আসতে হবে জনগণের ভোটের মাধ্যমে। সেই জন্য আমরা বলছি ভোট হতে হবে। বিএনপি নেতা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
‘জাতীয় নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। জনগণ যেন ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে সে রকম পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
‘নির্বাচনে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে অবশ্যই থাকবে সেনাবাহিনী। তাহলে জনগণ স্বান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে যেতে পারবে।’
‘আমরা নির্বাহী কমিটির সভা থেকে বলতে চাই ইভিএম, ফিভিএম চলবে না। নির্বাচনের আগে সংসদ ভাঙতে হবে।’
আ.লীগের নির্বাচনী প্রচারের সমালোচনা
গত ৩০ জানুয়ারি সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করার সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া। প্রশ্ন তোলেন এত আগে থেকে কেন এই প্রচারে নামল সরকারি দল।
সিলেটের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতা-কর্মীদেরকে ভোট দিতে ওয়াদা করান। এর প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘নৌকা আজ এত ডুবে গেছে যে ওয়াদা করাতে হচ্ছে।’
ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়
আওয়ামী লীগকে সতর্ক করে দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, চিরদিন তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘বহু ক্ষমতাবান, শক্তিধর ছিলেন, সেসব নেতারা আর নেই। বুঝতে হবে ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। উপরে একজন আছেন। তিনি হয়ত দেখছেন কতদূর যেতে পারে। কিন্তু একদিন রশিটা এমন টান দেবে, কে কখন কোথায় থাকবে নিজেরা হয়ত যাওয়ার সুযোগটুকুও পাবে না। সময় থাকতে তার সদ্ব্যবহার করুন।’
দাবি আদায়ে বিএনপির কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক বরে বলেও জানান খালেদা জিয়া।
সংসদে বিরোধী দলের সমালোচনা
সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিরও কড়া সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া। বলেন, ‘সংসদের আসলে কোন বিরোধী দল নেই। বিরোধীদল থাকলে দেশে যে অরাজকতা হচ্ছে এ নিয়ে তারা প্রতিবাদ করছে না কেন? দ্রব্যমূল্যে কয়েকগুণ বাড়ছে, চালের দাম ৭০ টাকা, পিয়াঁজের দাম ১২০টাকা, এ নিয়ে তারা কথা বলছে না।’