ফেনী
মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৪:২৩
, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বৃদ্ধের দাফন আটকে সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারায় বসে স্ত্রী-সন্তানরা

অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকার পর গত রোববার মৃত্যুবরণ করেন বৃদ্ধ মাজেদ বিশ্বাস। তার মৃত্যুর পর সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে স্ত্রী-সন্তানদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় আটকে থাকে বৃদ্ধের দাফন। শেষে গ্রাম্য সালিসে দ্বন্দ্ব সুরাহা হওয়ার পর মৃত্যুর একদিন পর দাফন সম্পন্ন হয় তার। ঘটনাটি ঘটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের বড় মরাপাগলা গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাজেদ বিশ্বাসের দুই ছেলে পুলিশ সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সৎমা ও বোনদের বঞ্চিত করে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করিয়ে নেওয়ার। এর প্রতিবাদে এ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। পরে গ্রাম্য সালিসে সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে বাড়িতে লাশ আনার ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে দাফন করা হয়।

আরও জানা যায়, মাজেদ বিশ্বাসের প্রথম স্ত্রীর ১০ জন সন্তান ছিল। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। জীবিত সাত সন্তানের মধ্যে চার মেয়ে ও তিন ছেলে আছে। কমপক্ষে ২০ বছর আগে স্ত্রী মারা গেলেও হামফুল বেগম নামের আরেক নারীকে বিয়ে করেন তিনি। তবে এ সংসারে কোনো সন্তান হয়নি তার। হামফুল মাজেদের ছোট শিশুসন্তানদের আদর-যত্নেই বড় করেন।

মাজেদের দুই ছেলে লতিফুর রহমান ও আবদুল জাব্বার পুলিশে চাকরি করেন। গত ছয় মাস আগে, মাজেদ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হলে দুই ছেলে লতিফুর ও জাব্বার চিকিৎসার কথা বলে বাবাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যান। বাবার সম্পত্তি নিজেদের ও এক ভাতিজার নামে লিখিয়ে নেন। পরে ১৬ এপ্রিল মাজেদ বিশ্বাসের নামে একটি তালাকনামা উকিল নোটিশের মাধ্যমে পাঠানো হয় হামফুল বেগমের কাছে। তবে হামফুল সেটি গ্রহণ করেননি। এ নিয়ে হামফুল বেগম স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দেয়। পরে আগামী ৫ মে গ্রাম্য সালিসের দিন নির্ধারণ করা হয়।

স্থানীয় লোকজন বলেন, মাজেদ আবার অসুস্থ হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান লতিফুর ও জাব্বার। পরে রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মরদেহ দাফনের জন্যে দুই ছেলে গ্রামের বাড়ি নিয়ে এলে হামফুল বেগম স্বজন ও এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে দাফনে বাধা দেন। সোমবার সকাল ও বিকালে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দুই দফা গ্রাম্য সালিসে বসেন তিনজন ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। শেষে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে অংশীদারদের মধ্যে সম্পত্তির বণ্টন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর দাফন হয়। এই পুরো সময় মরদেহটি ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে ছিল।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান জানান, ঘটনা শুনে পুলিশ টিম পাঠিয়েছিলাম। সালিসেই মীমাংসা হয়ে মরদেহ দাফনের কথা জেনেছি। অভিযুক্ত দুই ছেলের পুলিশে চাকরির কথাও নিশ্চিত করেছেন তিনি।

ট্যাগ :

আরও পড়ুন


Logo
error: Content is protected !!