ভারতে তৃতীয় দফায় লকডাউনের মেয়াদ বাড়বে কি না, সেই জল্পনার পাশাপাশি বেড়ে চলেছে করোনা-আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই সংখ্যাটা শুধু ৩১ হাজার পেরিয়ে গেছে তা নয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর রেকর্ডও সৃষ্টি হলো। বুধবার মারা গেছে ৭৩ জন। মোট মৃত্যু ১ হাজারের সীমা পেরিয়ে গেছে। আপাতত প্রতিযোগিতা দুই রাজ্যে—মহারাষ্ট্র ও গুজরাট।
মহারাষ্ট্রে সংক্রমণের হার কিছুতেই কমছে না। এখনই আক্রান্ত প্রায় ১০ হাজার। মৃত্যুও সবার চেয়ে বেশি এই রাজ্যে। ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। গুজরাটে সংক্রমণের সংখ্যা ৪ হাজারের কাছাকাছি। মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ২০০। এই রাজ্যের বিজেপি সরকার সংক্রমণের দায় নতুন করে চাপিয়ে দিয়েছে তাবলিগ জামাতের ওপর। অন্যদিকে রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, গোটা ফেব্রুয়ারি মাস নিষ্ক্রিয় বিজেপির মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে মাতামাতিই করোনা প্রসারের প্রধান কারণ। কংগ্রেসের অভিযোগ, ঠিক সময়ে আমল না দিয়ে বিজেপি সরকার এখন পস্তাচ্ছে। তাই তারা দায় চাপাচ্ছে তাবলিগ জামাতের ওপর।
বিজেপি নেতৃত্ব নতুন করে তাবলিগের সমালোচনায় মুখর। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল করোনা-সুস্থ রোগীদের প্লাজমা দানের আহ্বান জানানোর পর তাবলিগ সদস্যরা দলে দলে এগিয়ে আসছেন। এতে বিজেপি নেতৃত্ব বিব্রত। কেন্দ্রীয় বিজেপি মন্ত্রী মুক্তার আব্বাস বলেছেন, ‘নিজেদের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করছে তাবলিগরা। সারা দেশে করোনা ছড়িয়ে এখন এমন একটা ভাব দেখাতে চাইছে যেন তারাই করোনাযোদ্ধা!’
করোনার জন্য মুসলমানদের দায়ী করার এই চেষ্টা নতুনভাবে শুরু হওয়াটা সরকারের ব্যর্থতা ঢাকার অপচেষ্টা বলে বিরোধীদের ধারণা। এই পরিস্থিতিতে উত্তর প্রদেশের এক বিজেপি বিধায়ককে বিজেপি শোকজ করেছে। ওই বিধায়ক সম্প্রতি এক জনসভায় বলেন, কেউ যেন মুসলমানদের কাছ থেকে সবজি না কেনেন। ওই মন্তব্য ভাইরাল হওয়ায় বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিপাকে।
করোনার প্রকোপ কমার তেমন কোনো ইঙ্গিত এখনো দেখা যাচ্ছে না। বরং নতুন নতুন কিছু সংক্রমণ সরকারের চিন্তা বাড়াচ্ছে। যেমন দিল্লিতে এক সিআরপিএফ ব্যাটালিয়নের এক হাজার জওয়ানকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। ওই ব্যাটালিয়নের এক জওয়ান করোনায় মারা গেছেন। ৪৭ জন আক্রান্ত।
ভারতে প্রথম লকডাউন হয় ২৫ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফায় তা ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তৃতীয় দফায় আরও বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়ে মোদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। অধিকাংশই উপদ্রুত এলাকায় লকডাউন রাখার পক্ষে। পাঞ্জাব সরকার আজ বুধবার জানিয়ে দেয়, রাজ্যে আরও দুই সপ্তাহ লকডাউন চলবে। শুধু সকাল-বিকেল চার ঘণ্টা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে। সব রাজ্যকেই প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, জেলাগুলোকে সবুজ, কমলা ও লাল এলাকায় ভাগ করতে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বুধবার সিদ্ধান্ত নেয়, সবুজ এলাকায় জেলার মধ্যে ২০ জন যাত্রী নিয়ে বাস চালানো যাবে। হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ তাদের দিল্লির সীমানা সিল করে দিয়েছে। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। নিত্যযাত্রীদের দুর্দশা বেড়েছে।